ভরসা: বিশ্বকাপেও দুরন্ত ছন্দে আছেন বুমরা। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি
রোহিত শর্মার খেলা দেখে মনে হবে, ব্যাটিং ব্যাপারটা কত সহজ। আমি নিজে বোলার ছিলাম। তাই বুঝতে পারি, এক জন ব্যাটসম্যান যখন এ রকম অনায়াস ভঙ্গিতে যে কোনও ভাল বলও বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেয়, তখন বোলারদের কী অবস্থা হতে পারে। এই বিশ্বকাপে রোহিতের সামনে পড়ে সব বোলারকেই তাই আতঙ্কিত দেখাচ্ছে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্পিনারকে মেরে দিচ্ছে। পেসারদের কভারের উপর দিয়ে তুলে দিচ্ছে। এত সব দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক রয়েছে ওর হাতে কিন্তু কখনওই খুব শক্তিশালী দেখায় না ওকে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে পাঁচটা সেঞ্চুরি যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে স্বপ্নের ব্যাপার। রোহিত যেন সেই স্বপ্নের ফর্মেই এগোচ্ছে। রোহিত যখন সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এল, তখন আমি ওকে দেখেছিলাম। অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে একটা সত্তরের ঘরে ইনিংস খেলেছিল। আমি ওই ম্যাচে কমেন্ট্রি করছিলাম। সেই ইনিংস দেখেই আমি বলেছিলাম, ভারতীয় ক্রিকেট আর এক নতুন হিরের সন্ধান পেয়েছে। এই ছেলে অনেক দূর যাবে।
এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার জন ব্যাটসম্যানকে সেরা বলা হচ্ছে। বিরাট কোহালি, স্টিভ স্মিথ, কেন উইলিয়ামসন, জো রুট। কিন্তু রোহিত যে রকম ব্যাট করছে, ওকেও বর্তমান প্রজন্মের সেরাদের মধ্যে রাখতেই হবে। আমি যখন কমেন্ট্রি করি না, খুব একটা খেলা দেখতে পছন্দ করি না। সারা জীবনই তো কেটে গেল খেলার মাঠে। তাই কাজ না থাকলে একটু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। কিন্তু রোহিত আমাকে টেনে আনছে ড্রয়িংরুমে। বিশ্বকাপে যে দিনই ভারত খেলছে, আমি কমেন্ট্রি করি না করি, টিভির সামনে বসছি। রোহিতের ব্যাটিং দেখব বলে।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্তত রোহিতকে সেরাদের মধ্যে রাখতেই হবে। ওয়ান ডে-তে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি যার রয়েছে, বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে যার ছ’টা সেঞ্চুরি, সে অবশ্যই বিশেষ প্রতিভা। আইপিএল আর টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাট না হয় বাদই দিলাম। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, ব্যাটিংটাকেই সহজ দেখায় রোহিত ব্যাট করার সময়। ক্রিজে দাঁড়িয়ে কোনও ব্যস্ততা নেই ওর মধ্যে। স্টিভ স্মিথও খুব বড় ব্যাটসম্যান। অসাধারণ রেকর্ড ওর। কিন্তু যখন ও ব্যাট করে, অনেক কসরত করতে দেখা যায়। রোহিতকে দেখে মনেই হয় না ব্যাটিং কষ্টকর কিছু ব্যাপার। ওকে দেখে আমার কিছুটা মার্ক ওয়ের কথা মনে পড়ে যায়। এ রকমই সহজ, অনায়াস স্টাইল ছিল মার্ক ওয়ের। আমি নিশ্চিত, সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধেও দল তাকিয়ে থাকবে রোহিতের আরও একটা সফল ইনিংসের দিকে।
ভারতীয় দলের গভীরতা দেখে আমি সব চেয়ে প্রভাবিত। শিখর ধওয়নের মতো সফল ওপেনার চোট পেয়ে ছিটকে গেল। তার পরেও কোনও হেরফের নেই টিমের পারফরম্যান্সে। কে এল রাহুল চলে এল শিখরের স্থান পূরণ করার জন্য। ঋষভ পন্থকে দেখলাম। আমি খুবই উচ্ছ্বসিত ওর প্রতিভা দেখে। ভারতীয় ক্রিকেট আর এক জন লম্বা রেসের ঘোড়া পেতে চলেছে। ঋষভ বেশি খেলেছে টি-টোয়েন্টি। টেস্টে ইতিমধ্যেই দু’টো সেঞ্চুরি করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডে। যত ওয়ান ডে খেলবে তত আরও খুলবে ঋষভের খেলা।
আমি এখনও বলব, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে এত সমালোচনা হওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। ধোনি খারাপটা কী করছে? ভারত যদি কখনও মন্থর ব্যাটিং করে, তার দায় একা ধোনির উপরে চাপানো ঠিক হবে না। ক্রিকেটের দারুণ এক দূত ধোনি। মাঠের মধ্যে কী সুন্দর ভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিরাট এখন অধিনায়ক। কিন্তু সারাক্ষণ ওকে সাহায্য করে যাচ্ছে।
জানি না, শামি কেন খেলছে না। ভুবনেশ্বর লাইন-লেংথের ব্যাপারে বেশি নিখুঁত হয়তো। ভারতের জন্য কোন প্রথম একাদশটা ঠিক হবে, সেটা দূরে বসে আমার বলাটা ঠিক হবে না। রবি শাস্ত্রী খুবই বিচক্ষণ কোচ। বিরাট রয়েছে। ধোনি আছে। ওরা নিশ্চয়ই ঠিকই বুঝবে কোন একাদশটা খেলানো উচিত।
তবে বুমরাকে নিয়ে আমি বলতে চাই। যত দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ। বুমরার আত্মবিশ্বাস দেখার মতো। এটা একটা বোলারের সব চেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারে। আমি একটা ইন্টারভিউ শুনছিলাম বুমরার। সেখানে ও বলছিল, টেনিস বলে খেলতে খেলতে ইয়র্কার করা শিখেছে। তার মানে ক্রিকেটে শুরুর দিন থেকে ওর ধারণা ছিল ইয়র্কার নিয়ে। ছোট একটা রান আপে কী ভাবে এত জোর আনতে পারে, সেটাও একটা বিস্ময়। তবে এই অ্যাকশন যতই অন্য রকম হোক, বুমরার জন্য দারুণ কাজ করছে।
মোটামুটি বোঝাই যাচ্ছিল, ফর্মে না থাকা নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটিং এই ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে পড়ে আটকে যাবে। ওদের কেন উইলিয়ামসন ছাড়া কেউ সে ভাবে বিশ্বকাপে ব্যাটিংই করতে পারেনি। (৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)