ভরসা: ভারতের অনুশীলনে আগ্রাসী মেজাজে অধিনায়ক বিরাট কোহালি। শনিবার ম্যাঞ্চেস্টারে। রয়টার্স
রবিবার ম্যাঞ্চেস্টারে যে বিশ্বকাপের সব চেয়ে বড় ম্যাচ হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। ইংল্যান্ডের এই শহরেই ভারত আর পাকিস্তানের ক্রিকেট ভক্তরা সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি। তাই এখানে ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে আবেগ আর আগ্রহ তুঙ্গে থাকবে। দুর্দান্ত আবহ থাকবে গ্যালারিতে। প্রার্থনা করব, দু’দলের খেলোয়াড়রাই দারুণ একটা ম্যাচ উপহার দিক দর্শকদের।
আমার মতে, রবিবারের ম্যাচে ভারতই এগিয়ে। দু’টো ম্যাচে ওরা নিজেদের দক্ষতা আর উৎকর্যের প্রমাণ দিয়েছে। শিখর ধওয়নের চোট নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা কিন্তু কোহালিদের হাতে বিকল্প আছে। শুনলাম ওর জায়গায় সম্ভাব্য বদলি হিসেবে ঋষভ পন্থকে দলের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। আমি কয়েক দিন আগেই পন্থের ব্যাটিং দেখছিলাম। এই বয়সে বেশ বিস্ফোরক। দুর্দান্ত শট খেলতে পারে। আমার তো দেখে মনে হল, পন্থ অসাধারণ এক প্রতিভা। বিশ্ব ক্রিকেট আরও এক জন বড় তারকা পেতে চলেছে।
আমি জানি, এই ম্যাচটা নিয়ে কেউ পূর্বাভাস করার সাহস দেখায় না। আমার তবু মনে হচ্ছে, ভারতের হাতে অনেক বেশি তাস মজুত। শিখর নেই, কিন্তু কে এল রাহুল ওপেন করবে। যথেষ্ট ভাল ব্যাটসম্যান। বিরাট কোহালি আছে, রোহিত শর্মা আছে, মগেন্দ্র সিংহ ধোনি আছে। হার্দিক পাণ্ড্যকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে উপরে পাঠানো হল। হার্দিক দারুণ খেলে দিল। এখন ওকে নিয়েও সব প্রতিপক্ষকে ভাবতে হবে। এরা যে কেউ নিজের দিনে ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখে। এর সঙ্গে দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণ। বুমরাকে যত দেখছি, তত মুগ্ধ হচ্ছি। কী দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ! সব সময় নিজেকে হাল্কা মেজাজে রাখতে জানে। আর একটা জিনিসও মাথায় রাখতে হবে। বুমরা বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে দারুণ সফল। আর পাকিস্তানের দুই ওপেনারই বাঁ-হাতি। এটাও বুমরাকে সুবিধেজনক অবস্থায় রাখবে।
ম্যাঞ্চেস্টারে আমি যখন খেলতাম, পিচে বাউন্স থাকত ভাল। পিচে ভিজে ভাবও থাকে। মেঘলা আকাশ থাকলে বল সুইং-সিম করতে পারে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত পেসার খেলাতে পারে ভারত। জানি না, পাকিস্তানের অতিরিক্ত পেসার খেলানোর আর জায়গা আছে কি না। হয়তো এক জন স্পিনার কমিয়ে মহম্মদ শামিকে খেলানোর কথা ভাবতে পারে ভারত। আমি নিজে খুব খুশি হব শামিকে খেলানো হলে। বহু দিন হয়ে গিয়েছে মাঠে বসে শামির বোলিং দেখিনি।
তবে জানি না, দুই স্পিনারের কাউকে বসানোর কথা কোহালিরা ভাববে কি না। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত কারণ দু’জনই ভাল স্পিনার। উইকেট তোলার মতো বোলার। চহাল দারুণ বল করেছে। বসাতে হলে কুলদীপকে বসাতে হবে। কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় থেকে আমি কুলদীপকে দেখছি। আজ পর্যন্ত এমন কোনও ব্যাটসম্যানকে দেখিনি, যে কুলদীপের রহস্য পুরোপুরি উদ্ধার করতে পেরেছে। তাই এ রকম বিস্ময় স্পিনারকে বসানোর ঝুঁকি নেওয়া উচিত কি না, সেটাও ভাবা দরকার।
তুলনায় পাকিস্তানের মাথায় স্বস্তির চেয়ে সমস্যাই বেশি থাকবে। অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদকে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে না। দল পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে না, মাঠে দাঁড়িয়ে বা মাঠে নামার আগে খুব ভাল পরিকল্পনা করতে পারছে সরফরাজ়রা। ম্যাচ জেতানোর ক্রিকেটারও ভারতের তুলনায় পাকিস্তানের হাতে কম। আমার আরও একটা জিনিস মনে হয় যে, ভারত খুব ভাল দল নির্বাচনও করেছে। ওদের সেরা ক্রিকেটারদেরই বিশ্বকাপের উড়ানে তুলেছে। পাকিস্তানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতে এখনও অনেক কিছু হচ্ছে। সেগুলো দল নির্বাচনের মাঝে আসা উচিত হয়নি। আমার মনে হয় না, এটাই বিশ্বকাপের জন্য পাকিস্তানের সেরা দল। ইংল্যান্ডকে হারানোর পরে যে রকম টগবগে অবস্থায় দলটাকে দেখব বলে আশা করেছিলাম, সেটাও দেখছি না।
আর একটা চিন্তার বিষয়, পাকিস্তানের ফিল্ডিং। ভারত এই জায়গায় কত এগিয়ে গিয়েছে! আমাদের সময় থেকে ভারতের এখনকার প্রজন্মের দল তিনটে জায়গায় অভাবনীয় উন্নতি করেছে। ফাস্ট বোলিং, ফিটনেস এবং ফিল্ডিং। ব্যাটিং আর স্পিন বোলিং তো ভারতের ছিলই। কিন্তু এই তিনটে জায়গায় উন্নতির প্রভাব কোহালিদের ক্রিকেটে দেখা যাচ্ছে। ভারত এই উন্নতিটা করার জন্য চিন্তাভাবনাও করেছে। ক্রিকেটের জন্য সময় দিয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নানা বদল এনেছে খেলার মান বাড়ানোর জন্য। আইপিএলের মতো সফল টুর্নামেন্ট এনেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের মঞ্চ থেকে একের পর এক বিস্ময় প্রতিভা আসছে।
ম্যাঞ্চেস্টারে শুধুই তো বাইশ জনের লড়াই নয়, পর্দার আড়ালে ঘটে চলা এ সব কিছুর উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে চূড়ান্ত স্কোরবোর্ড।