হার্দিকের আগমনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ভারত

হার্দিক আসায় ভারতীয় দলের চেহারাটাই অনেক পাল্টে গিয়েছে। যেমন বোলিংয়ে সফল হচ্ছে, তেমনই ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জেতাচ্ছে। তেমনই দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং।

Advertisement

ওয়াসিম আক্রম

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ০৪:১৩
Share:

অস্ত্র: পরিণত হার্দিক এখন ভারতের সম্পদ, মনে করেন আক্রম। ফাইল চিত্র

এই ভারতীয় দলটা আমার দেখা অন্যতম সেরা। যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং, তেমন ফিল্ডিং। সব বিভাগেই কোহালির টিম দশে আট পাওয়ার ক্ষমতা রাখে। আরও বেশি নম্বরও পেতে পারে নিজেদের দিনে।

Advertisement

বিরাট কোহালির ব্যাটিং নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব মুগ্ধ। কিন্তু রোহিত শর্মাই বা পিছিয়ে কোথায়? রোহিতকে দেখে মনে হয়, ব্যাটিং ব্যাপারই কত সহজ! শট খেলার জন্য কত সময় ওর হাতে। দুরন্ত সব স্ট্রোক রয়েছে হাতে। দুর্ধর্ষ সময়জ্ঞান। রোহিত দেখাচ্ছে, ধ্রুপদী ভঙ্গিতেও বিধ্বংসী হওয়া যায়। বিশ্বকাপে ওর দারুণ ছন্দ আফগানিস্তান ম্যাচে এসে সামান্য ঝটকা খেলেও এই টুর্নামেন্টে আরও অনেক বিনোদন উপহার দেবে রোহিতের ব্যাট।

আমি আর এক জনের কথা বলব। হার্দিক পাণ্ড্য। আমার মনে হয়, হার্দিক আসায় ভারতীয় দলের চেহারাটাই অনেক পাল্টে গিয়েছে। যেমন বোলিংয়ে সফল হচ্ছে, তেমনই ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জেতাচ্ছে। তেমনই দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং। তার উপর অসাধারণ মানসিকতা। মাঠের মধ্যে হার্দিকের নাছোড়, আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গি ভারতকে অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও এগিয়ে দেবে। ভরা গ্যালারির সামনে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতেও পিছপা হয় না হার্দিক। কানে দুল, উইকেট নিয়ে উড়ন্ত ভঙ্গিতে উৎসব করা, ক্যালিপসো ক্রিকেটারদের মতো নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে চুইংগাম চিবিয়ে যাওয়া— এই মুহূর্তে ক্রিকেটের সব চেয়ে বড় ‘শোম্যান’ হার্দিক। তবে ওকে দেখে মনে হচ্ছে, খুব ভাল করে মাথায় ঢুকে গিয়েছে যে, ক্রিকেটকে ঠিকঠাক রাখতে না পারলে কোনও হাবভাব আর স্টাইল কেউ দেখবে না। বরং, তা নিয়ে আরও সমালোচনাই ধেয়ে আসবে লোকের।

Advertisement

আরও পড়ুন: জিতলেও আফগানরা বিরাটদের যে ত্রুটিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল​

আমি আর ওয়াকার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এলাম, আমাদের ক্যাপ্টেন ইমরান খান এটাই বুঝিয়েছিল। পার্টি করো আমার অসুবিধা নেই, কিন্তু পরের দিন সময়ে হাজির হতে হবে প্র্যাক্টিসের জন্য। আর ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স করতে হবে। ক্রিকেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোনও আমোদপ্রমোদ নয়। হার্দিকেরা আইপিএল প্রজন্মের ক্রিকেটার। খুব অল্প বয়সেই সাফল্যের স্বাদ পেয়েছে। জনপ্রিয়তা পেয়েছে, হাতে অর্থ এসেছে। বাইরের হাতছানি থেকে নিজেদের রক্ষা করাটা তাই ওদের জন্য সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হার্দিকের ক্রিকেটই বলে দিচ্ছে, সেই কাজটা ও করতে পারছে।

তবে ভারতীয় দলকে নিয়ে আমার একটা জায়গাতেই শুধু সামান্য সংশয় রয়েছে। তা হচ্ছে ওদের মিডল অর্ডার ব্যাটিং। আমার মনে হয়, রোহিত আর বিরাটের উপর বড্ড বেশি নির্ভরশীল ভারতীয় ব্যাটিং। পরের দিকে ধোনি। এই দু’জন যদি কোনও ভাবে আটকে যায়, সে দিন বড় স্কোরে পৌঁছনোটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যেমন শনিবার হল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। হার্দিক আছে, তবে ওর ভূমিকাটা অনেকটা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানের মতো। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত ঝড় তুলে তছনছ করে দেবে। আমার মনে হয়, ঋষভ পন্থকে খুব শীঘ্রই ভারতের হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে।

সরফরাজ় আহমেদের ক্যাপ্টেন্সি দেখে আমি অবাক। ভারতের সঙ্গে অতিরিক্ত বোলার খেলানোর সিদ্ধান্ত নিল। তার পরেও টসে জিতে প্রথমে বোলিং করল। কে জানে বাবা, আমার সাধারণ ক্রিকেট জ্ঞান তো বলে, অতিরিক্ত বোলার খেলাচ্ছি মানে প্রথমে রান তুলে তার পরে সেই স্কোরের মধ্যে প্রতিপক্ষকে আটকে রাখার চেষ্টা করব।

সরফরাজ় কারও সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছে বলেও শুনিনি। আমি যখন পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলাম, ম্যাচের আগে ইমরান খানকে ফোন করতাম। জাভেদ মিয়াঁদাদকে ফোন করতাম। জানার জন্য যে, কী করা উচিত। হ্যাঁ, অধিনায়ক হিসেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নিশ্চয়ই আমি নিজে। কিন্তু আমারই দেশের কিংবদন্তি প্রাক্তনদের পরামর্শ নিতে অসুবিধা কোথায়? আমি নিজে কখনও প্রাক্তনদের ফোন করার মধ্যে কোনও সঙ্কোচ অনুভব করিনি।

কমেন্ট্রি বক্সে আমি ছিলাম, ওয়াকার ছিল। সরফরাজ়কে দেখিনি এসে কাউকে জিজ্ঞেস করছে। আমি নিজে ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টিতে খেলতাম। ম্যাঞ্চেস্টারে দশ বছর খেলেছি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডকে আমি ঘরের মাঠের মতোই চিনি। এ মাঠের জল নিষ্কাশনী ব্যবস্থা দারুণ। বৃষ্টি হলেও জল দাঁড়ায় না। পিচের ভিজে ভাব দ্রুত কেটে যায়। প্রথম দিকে কয়েক ওভারই ভিজে ভাবটা থাকে, তার পরে আদর্শ ব্যাটিং উইকেট। সে তো ইংল্যান্ডের যে কোনও মাঠেই প্রথম পাঁচ ওভার দেখে দেখে খেলে দিতে হয়। আর আমাদের কথা কী বলব, ইমরান খান পর্যন্ত টুইট করে বলেছিল, একেবারে ঘাসের উইকেট না হলে টস জিতে ব্যাটিংই করো। ক্রিকেট নিয়ে ইমরানের পরামর্শও যদি না শোনে, তা হলে কার কথা শুনবে সরফরাজ়েরা?

আমার মনে হয়, ইমরান খানের হাতে ক্রিকেটের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। তাই ক্রিকেট নিয়ে খুব জড়িয়ে পড়তে দেখার সম্ভাবনা কম। বিশ্বকাপ চলার মাঝে আমার সঙ্গে দু’এক বারই মাত্র কথা হয়েছে। তা-ও খুব সংক্ষিপ্ত। ইংল্যান্ড ম্যাচটা পাকিস্তান জেতার পরে মোবাইল বার্তায় কথা হয়েছিল। তখন আমাকে বলেছিল, ওই ম্যাচের প্রথম একাদশটা ঠিক ছিল। কিন্তু সরফরাজ় দেখলাম, সেই দলটাও পাল্টে ফেলল। আমার মনে হয়, বড্ড বেশি রদবদল করা হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে, ক্রিকেটারদের উপরে খুব বেশি আস্থা নেই অধিনায়ক সরফরাজ়ের।

ভারতের আরও এক জনের সাফল্যে আমি খুব খুশি। কুলদীপ যাদব। কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় আমি ওকে একটাই কথা বলতাম। সাফল্য আসবে কিন্তু সেই সাফল্যের মধ্যেও পরিশ্রমের পৃথিবী থেকে সরে আসিস না। কুলদীপ বিরল প্রতিভাসম্পন্ন এক চায়নাম্যান স্পিনার। এত অল্প বয়সে এত আত্মবিশ্বাস আমি কোনও বোলারের মধ্যে দেখিনি। আর ও একদম যোগ্য হাতে রয়েছে। আমার মতে, রবি শাস্ত্রী আর বিরাট কোহালি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা কোচ-অধিনায়ক জুটি।

রবিকে আমি তিরিশ বছর ধরে দেখছি। এত ইতিবাচক চরিত্র খুব কমই দেখেছি। কঠিনতম সময়েও ওর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোয় যে, ঠিক পারব। ক্রিকেটজীবনে ব্যাটিং অর্ডারে এগারো নম্বর থেকে এক নম্বরে উঠেছিল ও। কোচ হয়ে এসেও চোয়াল শক্ত করে লড়াই করার এই মানসিকতা ও ছড়িয়ে দিতে পেরেছে দলের মধ্যে। কমেন্ট্রি বক্সে দারুণ সব সময় কাটিয়েছি ওর সঙ্গে। অনেকের নিশ্চয়ই মনে থাকবে আমাদের দু’জনের সেই ‘শ্যাজ় অ্যান্ড ওয়্যাজ়’ টিভি প্রোগ্রামের কথা।

ম্যাঞ্চেস্টারে দেখা হয়েছিল ‘শ্যাজ়’-এর সঙ্গে। আলিঙ্গনাবদ্ধ হলাম দু’জনে। মুহূর্তে যেন ফিরে গেলাম পুরনো দিনে। প্রার্থনা করব, বন্ধুর একটা ভাল বিশ্বকাপ যাক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement