হতাশা: প্রকৃতির কাছে হার মানল মাঠকর্মীদের লড়াই। ভেস্তে গেল আরও একটি খেলা। এ বার শিকার ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচ। ট্রেন্ট ব্রিজে। এপি
ভারত বনাম নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচ ভেস্তে গেল বৃষ্টিতে। দু’দলকেই ভাগ করে নিতে হল একটি করে পয়েন্ট। চলতি বিশ্বকাপে এই নিয়ে চারটি ম্যাচ বৃষ্টির জন্য বাতিল হয়ে গেল। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে বিশ্বকাপে। এ দিন আবার আলোচনার কেন্দ্রে চলে এল ট্রেন্ট ব্রিজ পিচের আচ্ছাদন।
ট্রেন্ট ব্রিজের পিচ ও তার চার পাশই এ দিন শুধু ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ছিল। কিন্তু ক্রিকেট তো শুধু পিচ ও তার চারপাশের জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা মাঠ শুকনো না থাকলে ম্যাচ হওয়া সম্ভব নয়। মাঠ সামান্য ভেজা থাকলে বড় চোট লাগারও আশঙ্কা থাকে। তা জেনেও আইসিসি কেন সারা মাঠ ঢাকার ব্যবস্থা করছে না? এই প্রশ্ন শুধু ক্রিকেটপ্রেমীদেরই নয়, প্রাক্তন ক্রিকেটারদেরও।
ব্রায়ান লারা থেকে কেভিন পিটারসেন— সবাই সমালোচনা করেছেন ট্রেন্ট ব্রিজের আচ্ছাদন নিয়ে। কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা টিভিতে ইডেনের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘বৃষ্টি হলেও কী ভাবে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ম্যাচ শুরু করা যায়, তা কিন্তু ইডেনের থেকে শেখা উচিত। সারা মাঠ ঢাকার মতো আচ্ছাদন ওদের রয়েছে। এই নিয়ে চারটি ম্যাচ ভেস্তে গেল, তবুও বুঝতে পারছি না, কেন আইসিসি এ বিষয়ে সতর্ক হচ্ছে না।’’
দৃষ্টান্ত: বৃষ্টিতে এ ভাবে ইডেনে ঢাকা থাকে পিচ-সহ আউটফিল্ড। ফাইল চিত্র
পিটারসেনও তাঁর দেশের অব্যবস্থা নিয়ে লজ্জিত। বলছিলেন, ‘‘পিচের চার পাশ ঢেকে দিলে আদৌ কোনও লাভ হয়? বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরে মাঠ শুকোতে তো দু’ঘণ্টার বেশি লেগে যাবে। তা ছাড়া ভেজা মাঠে ক্রিকেটারেরা খেলার ঝুঁকি কেন নেবে?’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আইসিসি-র উচিত অবিলম্বে অতিরিক্ত আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে সারা মাঠ ঢেকে দেওয়া। তাতে মাঠকর্মী বেশি লাগতে পারে। কাউন্টির বিভিন্ন ছোট মাঠ থেকে মাঠকর্মী নিয়ে আসাই যায়।’’
শুধু ট্রেন্ট ব্রিজ কেন, এখনও পর্যন্ত যে ক’টি ম্যাচ বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গিয়েছে তার একটিতেও পুরো মাঠ ঢাকা দেওয়ার মতো আচ্ছাদন দেখা যায়নি। প্রাক্তন নিউজ়িল্যান্ড অলরাউন্ডার স্কট স্টাইরিশ বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ আয়োজকদের খানিকটা সতর্ক থাকা উচিত ছিল। সবাই জানে এই সময় ইংল্যান্ডে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হতেই পারে। কিন্তু শুধু পিচ ঢাকা দিয়ে কী করে আমরা আশা করতে পারি যে, বৃষ্টি থামলেই দশ মিনিটের মধ্যে ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে?’’ এ দিন তো মাঠের হাল দেখে ভারতের ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর বলে যান, ‘‘স্কেটিং রিঙ্কের মতো পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল মাঠ।’’
ভারতের ম্যাচ বাতিল নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট। টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘‘টস জিতে বিরাট কোহালি সাঁতার কাটার সিদ্ধান্ত নিলেন।’’ কারও কটাক্ষ, ‘‘ভারতে বিশ্বকাপ আয়োজন করার সময় যদি এ ধরনের অব্যবস্থা দেখা যেত, তা হলে আমাদের নিয়ে চরম সমালোচনা হত। কিন্তু যে-হেতু এটি ইংল্যান্ড, তাই কেউ কোনও সমালোচনা করবে না।’’
ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় ভারতের কিছুটা ক্ষতি হলেও নিউজ়িল্যান্ডের যে খুব একটা ক্ষতি হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে হারিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে কেন উইলিয়ামসনরা। পরের দু’ম্যাচ জিতলেই শেষ চারে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। এই তিন দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ বাকি রয়েছে ভারতের। তাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ ভেস্তে গেলে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে দু’টি দলকে হারাতেই হবে ভারতকে।