চাপের বাউন্সারটা আগে উড়িয়ে দিতে হবে, বিরাট

Advertisement

সুমিত ঘোষ

ম্যাঞ্চেস্টার শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

কুড়ি বছর আগে এ শহরেই যখন ভারত বিশ্বকাপের ম্যাচে হারাল পাকিস্তানকে, তিনি ছিলেন অধিনায়ক এবং দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। প্রথমে ব্যাট করে ভারত তোলে মাত্র ২২৭-৬। ওয়াসিম আক্রম, শোয়েব আখতারদের সামনে ঘোর দুর্যোগের মধ্যে পড়া ব্যাটিংকে টেনে তোলেন তিনি (৭৭ বলে ৫৯) এবং রাহুল দ্রাবিড় (৮৯ বলে ৬১)। ‘বিশ সাল বাদ’ কী হবে? আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় সে দিনের ভারত অধিনায়ক মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন বলছেন, বিরাটরাই এগিয়ে।

Advertisement

প্রশ্ন: ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে জেতার রেসিপি কী?

মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন: ম্যাচটায় এত বেশি চাপ থাকে যে, মানসিক ভাবে যারা এগিয়ে থাকবে, তাদের সম্ভাবনা বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্কিল থাকলেও সেই দল জেতে না। তার কারণ চাপ সামলাতে না পারা। মাঠে ক্রিকেটীয় দ্বৈরথের ব্যাপার তো থাকেই, ভাল না খেললে কী করে আর কেউ জিতবে? কিন্তু এই ম্যাচটায় স্নায়ুর লড়াই জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। না, ভুল বললাম। ওটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

প্র: চাপ সামলানোর টোটকা কী?

আজ়হার: ভারত-পাক লড়াই ব্যাপারটাই মাথায় ঢোকানো যাবে না। আর একটা ম্যাচ হিসেবে দেখতে হবে। এমনিতেই চারদিকে যা আবহ থাকে, মাথা ভোঁ ভোঁ করবে। আমার মনে আছে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের কথা। বেঙ্গালুরুতে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছিলাম। শারজা থেকে শুরু করে ম্যাঞ্চেস্টার, বিশ্বের সর্বত্র অনেক পাকিস্তান ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু সে দিন বেঙ্গালুরুতে যে রকম আবহ ছিল, কখনও দেখিনি। হোটেলের লবিতে পর্যন্ত নামা যাচ্ছিল না, এত লোক সারাক্ষণ সেখানে গিজগিজ করছিল। কফি-শপে যাওয়ার উপায় নেই। আমার মনে আছে, টিমের মধ্যে একটা কথা উঠেছিল যদি সবাই মিলে মেজাজটাকে হাল্কা করার জন্য কফি খেতে যাওয়া যায়। সম্ভবই হয়নি। ম্যাচটা জিতে এত হাল্কা লেগেছিল যে কী বলব! আমি তাই বিরাটদের বলব, আর একটা ম্যাচ ভেবে খেলতে নামো। যত পারো প্রত্যাশার চাপটাই এই ম্যাচে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর বাউন্সার। পাক ম্যাচ জিততে গেলে প্রথমে ওটাকে মাথা থেকে ওড়াতে হবে।

প্র: বিশ্বকাপের অন্য একটা ম্যাচ এখানে খুব প্রাসঙ্গিক হবে। ১৯৯৯-এর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এই ম্যাঞ্চেস্টারেই আপনার নেতৃত্বে ভারত জিতেছিল। আপনি আর দ্রাবিড় সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন।

আজ়হার: পরিস্থিতি সহজ ছিল না সে দিন। বল সুইং, সিম করছিল। ভাল বাউন্সও ছিল। আর পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে ছিল ওয়াসিম আক্রম, শোয়েব আখতার। আমরা খুব বেশি রান তুলতে পারিনি কিন্তু জানতাম, ওই রানটা তোলা পাকিস্তানের পক্ষেও সহজ হবে না। আমাদের শ্রীনাথ, বেঙ্কটেশ প্রসাদ ওদের শেষ করে দেয়। জানি না ম্যাঞ্চেস্টারে পিচ কতটা পাল্টেছে। তবে ওখানে অন্য রকম খেলা হয়। বোলারেরা সাহায্য পেয়ে থাকে। যে স্কোরটা ইংল্যান্ডের অন্য মাঠে ছোট স্কোর, সেটাই হয়তো ম্যাঞ্চেস্টারের জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে যদি মেঘলা থাকে।

প্র: রবিবারের ম্যাচে কে এগিয়ে?

আজ়হার: অবশ্যই ভারত। অলরাউন্ড টিম বিরাটদের। সব দিক দিয়ে শক্তিশালী। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— তিনটে বিভাগেই বিশ্বসেরা হতে পারে এই দল।

প্র: যদি জিজ্ঞেস করি, ভারতের দিক থেকে তুরুপের তাস কে হতে পারে, কার নাম বলবেন?

আজ়হার: কোনও এক জনের নাম বলব না। ভারতের এই দলটার শক্তি হচ্ছে দলগত শক্তি। সেই কারণেই পাকিস্তান ম্যাচ হলেও আগে থেকে বলে দিতে পারছি, ভারতই ফেভারিট। ব্যাটিংয়ে শিখর নেই কিন্তু রোহিত, বিরাট আছে। বিশ্বসেরা দুই ব্যাটসম্যান। রবিবারের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের নিউক্লিয়াস ওরা। বোলিংয়ে যশপ্রীত বুমরা আছে। সাম্প্রতিক ফর্ম বিচারে বিশ্বের সেরা বোলার বলাই যায়। অনেক বড় ব্যাটসম্যানও ওকে বুঝে উঠতে পারছে না। বুমরাকে আক্রমণ করা খুব কঠিন। করতে গেলেই ও আউট করে দিচ্ছে। এটাই ব্যাটসম্যানদের মাথায় আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

প্র: ম্যাঞ্চেস্টারে কোন কোন ব্যাপারগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?

আজ়হার: বৃষ্টি হলে কিন্তু বেশ ঠান্ডা হয়ে যায় ম্যাঞ্চেস্টার। গরম কালেও শীতের মতো মনে হয় তখন। সেটা মাথায় রাখতে হবে। হাওয়াও দিতে পারে। ব্যাটসম্যানদের সতর্ক থাকতে হবে। যদি মেঘলা আকাশ থাকে আর হাওয়া দেয়, শামিকে খেলানো উচিত। দু’জন স্পিনারের এক জনকে বসানো যেতে পারে।

প্র: বিশ্বকাপে কোন কোন দলকে শক্তিশালী লাগছে?

আজ়হার: আমাদের দল দারুণ শুরু করেছে। আমার নিউজ়িল্যান্ডকেও বেশ ভাল লেগেছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে কিন্তু ওদের বোলিংটা নিয়ে আমার সংশয় আছে। ভারতের বিরুদ্ধে ওদের বোলিংয়ের চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছিল। আমার মতে, অস্ট্রেলিয়ার হাতে দু’জনই মাত্র বোলার আছে, যারা উইকেট নিতে পারে। প্যাট কামিন্স আর মিচেল স্টার্ক। স্পিনারেরা খুব বাজে বল করছে। বল টার্নই তো করাতে পারে না ওদের স্পিনাররা। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংটা ভাল। ম্যাচ জেতার জন্য ব্যাটসম্যানদের দিকেই ওদের তাকিয়ে থাকতে হবে।

প্র: বিশ্বকাপ জেতার ক্ষেত্রে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী হতে পারে?

আজ়হার: ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলতে হবে। আজ ভাল খেললাম, পরের দিনই আবার খুব খারাপ, এ রকম করলে বিশ্বকাপ জেতা যায় না। তা হলে টিমের আত্মবিশ্বাসই তৈরি হবে না।

প্র: এ বারের ফর্ম্যাটও অন্য। সেরা দশ দলের টুর্নামেন্ট। সবাই সবার সঙ্গে খেলছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপে আপনারা এই ফর্ম্যাটে খেলেছিলেন। এই ফর্ম্যাট নিয়ে কী বলবেন?

আজ়হার: ক্রিকেটীয় যোগ্যতার সঠিক বিচার হয় এই ফর্ম্যাটে। সেই কারণে এই ফর্ম্যাট আমার পছন্দের। এখানে দু’তিনটে ম্যাচ হারলেই বিশ্বকাপের রাস্তা থেকে ছিটকে যাচ্ছ না। ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। এক-আধ দিন সেরা দলও হারতে পারে। এই ফর্ম্যাটে সেই একটা বা দু’টো দিন কাপ-ভাগ্য গড়ে দেয় না।

প্র: ভারতের শক্তি কী?

আজ়হার: কোহালিরা দল হিসেবেই দারুণ। সব কিছু ভাল। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং। গত দু’তিন বছর ধরে বোলিং দারুণ জায়গায় চলে গিয়েছে। যে কোনও পরিবেশে ভাল বোলিং করার ক্ষমতা রয়েছে এই দলের বোলারদের। দু’জন রিস্টস্পিনার আসার পর থেকে বোলিং আরওই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভারতের হাতে কুলদীপ যাদবের মতো রহস্য স্পিনার আছে। খুব কম প্রতিপক্ষই আছে, যারা ওকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছে।

প্র: শিখর ধওয়ানের চোট ভারতকে কতটা ভোগাতে পারে?

আজ়হার: বড় ধাক্কা। খুবই দুর্ভাগ্যজনক এই চোট। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এত ভাল খেলে ছেলেটা জেতাল। হাতে চোট নিয়েই সেঞ্চুরি করল। ওর দায়বদ্ধতা আর সাহসের তারিফ করতেই হবে। তবে শিখরের চোট প্রভাব ফেললেও ভারতের হাতে বিকল্প আছে। ঋষভ পন্থকে ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডে নিয়ে আসা হয়েছে। হয়তো কে এল রাহুলই ওপেন করবে রোহিতের সঙ্গে। একটা কথা রাহুলকে মনে রাখতে হবে যে, ও একের পর এক সুযোগ পাচ্ছে। সেগুলোকে এ বার কাজে লাগাতে হবে। ধওয়নের চোট যাতে ওর জন্য নীরব আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়, সেটা রাহুলকেই নিশ্চিত করতে হবে।

প্র: আপনার কী মনে হচ্ছে, ঋষভ পন্থকেই বিকল্প ভাবা ঠিক? রাহুল ওপেন করলে চার নম্বরেই বা কার আসা উচিত?

আজ়হার: দলের হাবভাব দেখে তো মনে হচ্ছিল, বিজয় শঙ্করকে ওরা চার নম্বর জায়গাটার জন্য ভাবছে। আমি ক্যাপ্টেন থাকলে, পরিস্থিতি বুঝে ঠিক করতাম, চারে কাকে পাঠাব। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে হার্দিক পাণ্ড্যকে উপরে তুলে আনা যেতেই পারে। হার্দিক দেখিয়ে দিয়েছে, ও ব্যাট হাতে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। দ্রুত রান তোলার লক্ষ্য থাকলে ওকে পাঠানো যেতে পারে। না হলে ধোনিকেও চারে নামানো যায়। তবে আমার মনে হচ্ছে, শিখরের চোট হওয়ায় বিজয় শঙ্করকে খেলানো হবে। ও খেললে এটাও দেখার, কত নম্বরে ওকে ব্যাট

করানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement