শাসন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ভেঙে পড়ল দুই ইংল্যান্ড পেসার মার্ক উড ও জোফ্রা আর্চারের সামনে। দু’জনের সংগ্রহ মোট ছ’উইকেট। এএফপি, এপি
দু’বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। ১৯৭৫ আর ১৯৭৯ সালের প্রথম দু’টো বিশ্বকাপই ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই। এ বারও বিশ্বকাপে রীতিমতো সমীহ জাগিয়ে শুরু করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররা। সেই ওশেন থমাস, আন্দ্রে রাসেলদের বলে গতি ও বাউন্স দেখে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ দেখে ফেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
কিন্তু শুক্রবার সাউদাম্পটনে হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পর্যুদস্ত হল সেই গতির ধাক্কাতেই। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে যিনি ক্যারিবিয়ানদের এই ধাক্কা দিলেন, তিনি বছর পাঁচেক আগেও বাস করতেন বার্বেডোজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই খেলার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বারের বিশ্বকাপে অন্তিম মুহূর্তে ইংল্যান্ড দলে নির্বাচিত হন সেই জোফ্রা আর্চার। সেই আর্চারের আগুনে বোলিং সামলাতে না পেরে গতির যুদ্ধেই হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অইন মর্গ্যানের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জেসন হোল্ডারের দল হারল আট উইকেটে। তাও আবার ১০১ বল বাকি থাকতে।
বৃষ্টির জন্য গত ২৪ ঘণ্টা ঢাকা ছিল সাউদাম্পটনের পিচ। তাই পিচ কিছুটা আর্দ্র রয়েছে বুঝতে পেরেই টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। আর তাঁর পেসারদের দাপটেই ৪৪.৪ ওভারে ২১২ রানে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। জবাবে ইংল্যান্ড জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় ৩৩.১ ওভারে। তাঁদের ইনিংস শেষ হয় ২১৩-২। ওপেন করতে নেমে শতরান করেন জো রুট। এ বারের বিশ্বকাপে এটি জো রুটের দ্বিতীয় শতরান। ৯৪ বল খেলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। বল হাতেও ২৭ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। ম্যাচের সেরাও জো রুট।
খেলা শেষে রুট উৎফুল্ল ভাবে বলে গেলেন টস জেতাটাই শুরুতে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। তাঁর কথায়, ‘‘গত তিন দিন ইন্ডোরে শর্ট বল সামলানোর অনুশীলন করে তৈরি হয়েছিলাম আমরা। ফল পেলাম আজ।’’ ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মর্গ্যানও বলে গেলেন, ‘‘ব্যাট হাতে রুট আমাদের দলের একটা বড় ভরসা। আর বোলার জোফ্রা আর্চার যে কোনও অধিনায়কের সম্পদ।’’
এ দিন, নয় ওভার বল করে ৩০ রানে তিন উইকেট নেন জোফ্রা। যার মধ্যে একটি মেডেন। তাঁর শিকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ রানকারী নিকোলাস পুরান (৭৮ বলে ৬৩), ক্রেগ ব্রাথওয়েট (২২ বলে ১৪) ও শেল্ডন কটরেল (০)। ৬.৪ ওভার বল করে মার্ক উড ১৮ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট। ইংল্যান্ডের হয়ে বাকি উইকেটগুলি নেন লায়াম প্লাঙ্কেট (১-৩০), ক্রিস ওকস (১-১৬) ও জো রুট (২-২৭)। যে পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার ইংল্যান্ডের পেসাররা এ দিন দাঁড়াতেই দেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের। ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে তিন ম্যাচে তিন উইকেট নিলেন আর্চার। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল ক্রিস গেলকে থিতু হতে না দেওয়া। কারণ, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ও ক্রিজে থিতু হয়ে গেলে ম্যাচ নিয়ে বেরিয়ে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১২ রানে আটকে রাখা একটা বড় কৃতিত্ব আমাদের দলের। ক্রস সিমে বল করাটা আজ কাজে এসেছে।’’
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এভিন লিউইস ২ রানে আউট হওয়ার পরে ক্রিস গেল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ৩০ ওভারে শিমরন হেটমায়ার (৩৯) আউট হওয়ার সময় দলের রান ছিল ১৪৪-৪। সেখান থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঝের ও শেষের দিকে ব্যাটসম্যানরা ইংল্যান্ডে বোলারদের সামলাতে না পারায় ২১২ রানে শেষ হয়ে যায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস।
স্কোরকার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২১২ (৪৪.৪)
ইংল্যান্ড ২১৩-২ (৩৩.১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
গেল ক বেয়ারস্টো বো প্লাঙ্কেট ৩৬•৪১
লুইস বো ওকস ২•৮
হোপ এলবিডব্লিউ বো উড ১১•৩০
পুরান ক বাটলার বো আর্চার ৬৩•৭৮
হেটমায়ার ক ও বো রুট ৩৯•৪৮
হোল্ডার ক ও বো রুট ৯•১০
রাসেল ক ওকস বো উড ২১•১৮
ব্রাথওয়েট ক বাটলার বো আর্চার ১৪•২২
কটরেল এলবিডব্লিউ বো আর্চার ০•১
থমাস ন. আ. ০•১১
গ্যাব্রিয়েল বো উড ০•৩
অতিরিক্ত ১৭
মোট ২১২ (৪৪.৪)
পতন: ১-৪ (লুইস, ২.৬), ২-৫৪ (গেল, ১২.৬), ৩-৫৫ (হোপ, ১৩.২), ৪-১৪৪ (হেটমায়ার, ২৯.৫), ৫-১৫৬ (হোল্ডার, ৩১.৬), ৬-১৮৮ (রাসেল, ৩৬.২), ৭-২০২ (পুরান, ৩৯.৪), ৮-২০২ (কটরেল, ৩৯.৫), ৯-২১১ (ব্রাথওয়েট, ৪৩.৪), ১০-২১২ (গ্যাব্রিয়েল, ৪৪.৪)।
বোলিং: ক্রিস ওকস ৫-২-১৬-১, জোফ্রা আর্চার ৯-১-৩০-৩, লায়াম প্লাঙ্কেট ৫-০-৩০-১, মার্ক উড ৬.৪-০-১৮-৩, বেন স্টোকস ৪-০-২৫-০, আদিল রশিদ ১০-০-৬১-০, জো রুট ৫-০-২৭-২।
ইংল্যান্ড
বেয়ারস্টো ক ব্রাথওয়েট বো গ্যাব্রিয়েল ৪৫•৪৬
রুট ন. আ. ১০০•৯৪
ওকস ক (অ্যালেন) বো গ্যাব্রিয়েল ৪০•৫৪
স্টোকস ন. আ. ১০•৬
অতিরিক্ত ১৮ মোট ২১৩-২ (৩৩.১)
পতন: ১-৯৫ (বেয়ারস্টো, ১৪.৪), ২-১৯৯ (ওকস, ৩১.৫)।
বোলিং: শেল্ডন কটরেল ৩-০-১৭-০, ওশেন থমাস ৬-০-৪৩-০, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ৭-০-৩৯-২, আন্দ্রে রাসেল ২-০-১৪-০, জেসন হোল্ডার ৫.১-০-৩১-০, কার্লোস ব্রাথওয়েট ৫-০-৩৫-০, ক্রিস গেল ৫-০-২২-০।