মহড়া: ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রস্তুতিতে মগ্ন গেল। এএফপি
চলতি বিশ্বকাপে মাত্র দু’জনই ক্রিকেটার আছেন, যাঁরা বিংশ শতাব্দীতেও খেলেছেন। এক জন পাকিস্তানের শোয়েব মালিক। এ বারে একেবারেই নিষ্প্রভ। অন্য জন ক্রিস গেল। যাঁর ব্যাট থেকে এখনও পর্যন্ত সে রকম ঝড় দেখা না গেলেও কখনওই প্রচারের কেন্দ্র থেকে সরছেন না।
১৯৯৯-তে অভিষেক ঘটে গেলের। সেটা এত আগে যে, তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ছিলেন ব্রায়ান লারা। যিনি এখন ধারাভাষ্যকার এবং অবসর নিয়েছেন বারো বছর হয়ে গিয়েছে। তখন লারার দলের ফাস্ট বোলারের নাম? কোর্টনি ওয়ালশ। কিন্তু গেল চালিয়ে যাচ্ছেন শুধু নয়, এখনও নিজেকে ‘ইউনিভার্স বস’ বলেই ভাবতে ভালবাসেন। ৩৯ বছরের গেল বিশ্বকাপের পরে অবসর নেবেন বলে খবর চাউর হয়েছিল। সেই খবরকেও চওড়া ব্যাটে বোলারদের ওড়ানোর মতো উড়িয়ে দিয়ে গেলেন। ঘোষণা করে দিলেন, ভারতের বিরুদ্ধে দেশের মাঠে খেলে অবসর নিতে চান। বিশ্বকাপের পরেই ভারতীয় দল যাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। তখন গেলের শহর জামাইকায় টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। ‘ইউনিভার্স বস’-কে রাজকীয় বিদায় জানানোর সুযোগ পেতে পারে তাঁর শহর। ‘‘আমি এখনই অবসর নিচ্ছি না। ভারতের বিরুদ্ধে একটা টেস্ট খেলব। ওয়ান ডে খেলব। টি-টোয়েন্টিতে খেলব না,’’ এ দিন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে হঠাৎই সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করলেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে গেল জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপের পরেই অবসর নেবেন। মনে করা হচ্ছে, অবসরের সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কথা জানাতেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে উদয় হলেন।
কিছুক্ষণ পরে গেলের দলের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার এসে বিস্ময় আর কৌতূহল মিশ্রিত প্রতিক্রিয়া দিয়ে গেলেন। দেখা গেল, তিনি জানেনই না গেল যে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কথা ভেবেছেন। হোল্ডার বললেন, ‘‘আমি এখনও ক্রিসের মুখ থেকে শুনিনি। ড্রেসিংরুমে ফিরে কথা বলে দেখতে হবে। এটা ঠিক যে, ও যদি খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা ভেবে থাকে তা হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য সেটা ভাল খবর।’’ গেল কি আপনাদের কিছু জানিয়েছেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের জবাব, ‘‘না, ড্রেসিংরুমে কিছু জানায়নি এখনও।’’ তার পরে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে আঁচ পেয়ে যোগ করলেন, ‘‘তবে ও যদি খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, আমাদের উপকারই হবে।’’
ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ ম্যাচের আগে গেলের অবসর নিয়ে নতুন জল্পনায় তাঁর দেশের ক্রিকেট মহলে বা এমনকি, তাঁর দলের মধ্যেও বিতর্ক তৈরি করতে পারে। কারণ, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজের পরে গেল ঘোষণাই করে দেন, তাঁর শেষ সিরিজ খেলে ফেললেন। এমনও বলেন যে, তিনি তরুণ এবং নতুনদের সুযোগ দিতে চান। বিশ্বকাপের পরে আর জায়গা আঁকড়ে পড়ে থাকতে চান না। সেখান থেকে ডিগবাজি খাওয়াটা তরুণ প্রজন্ম কী ভাবে দেখবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। ‘ইউনিভার্স বস’ যদিও ব্যাটিংয়ের ভঙ্গিতেই সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করে গেলেন, ‘‘আমি সেরার সেরাদের এক জন। প্রত্যেকটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। আমি সেরাদের তালিকার উপরের দিকেই থাকব। তবে আমার এখনও কয়েকটা ম্যাচ খেলার মতো এনার্জি রয়েছে। এখনই তাই চলে যাচ্ছি না। হয়তো আর একটা সিরিজ খেলব।’’ প্রশ্ন উঠেছে, স্টিভ ওয়ের বিদায়ী সিরিজের মতোই গেলও সম্পূর্ণ ভাবে ফেয়ারওয়েল সিরিজ চাইছেন কি না।
কোহালিদের কাছে যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে রয়েছে বৃহস্পতিবারের ম্যাচ। সেখানে গেলকে শান্ত রাখার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে কোহালি এবং তাঁর বোলারদের। কী ভাবে থামানো যাবে ছক্কার বাদশাকে? অতীতে দেখা গিয়েছে, শুরুর দিকে থিতু হতে সময় নেন গেল। সেই সময়ে বাইরের দিকে যাওয়া বলে অস্বস্তিতে থাকেন। ভুবনেশ্বর কুমার এই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সফল হয়েছেন। তবে ভুবি সুস্থ হয়ে উঠলেও বৃহস্পতিবারই গেলদের বিরুদ্ধে হয়তো নামানো হচ্ছে না। হালফিলে শরীরের ভিতরে আসা জোরে বোলিংয়ে দুর্বলতা ধরা দিয়েছে গেলের। যার অর্থ, শুরুতে বুমরার বিরুদ্ধে তিনি কী করেন, তা কৌতূহলজনক হতে যাচ্ছে। স্পিনারদের ক্ষেত্রে গুগলি ধরতে অসুবিধা হয় তাঁর। আবার বোলারদের মধ্যে সেরা রসিকতা হচ্ছে, ‘‘গেল দৌড়তে চায় না। তাই আমাদের ঘাড়ে না চাপিয়ে ওকে আউট করার সেরা অস্ত্র রান আউট।’’
এ দিন ভারতীয় দলের বোলিং কোচ বি অরুণকে দেখা গেল, বোলারদের নিয়ে প্রধান পিচের পাশে বিশেষ অনুশীলন করাচ্ছেন। বেশি করে জোর দেওয়া হল, চ্যালেঞ্জ জেতার উপরে। বোলারদের বলা হল, মনে করো এটা ম্যাচ। ব্যাটসম্যানকে হারাতে হবে। সেই ভেবে বল করো। বুমরা, শামি, ভুবনেশ্বর, কুলদীপ সকলে সেখানে বোলিং করলেন। নেট প্র্যাক্টিসে তেমন বোলিংই করলেন না।
দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচের আগের দিন থেকেই ‘ইউনিভার্স বস’-কে বল করা শুরুই করে দিয়েছেন শামিরা। তার আগে অবসর নিয়ে ডিগবাজি খেয়ে গেল নিজেই কি আলটপকা শট খেলে ফেললেন? ভারত ম্যাচের আগে যা নিয়ে তাঁর দলের মধ্যেই তৈরি হল বিস্ময় এবং অস্বস্তি? ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।