উৎসব: প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-র সঙ্গে বিশ্বকাপ নিয়ে ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মর্গ্যান ও তাঁর সতীর্থেরা। সোমবার ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে। এএফপি
ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে উদ্বেল ইংল্যান্ড। এই বিজয়োৎসবের মাঝেই ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মর্গ্যান বলে দিলেন, বেন স্টোকসের মতো নায়ক হওয়া সহজ কাজ নয়। যাঁরা রবিবার বিশ্বকাপ ঘরে নিয়ে আসার জন্য স্টোকসের লড়াই দেখলেন, তাঁদের উচিত বেন স্টোকসকে দেখে প্রেরণা সংগ্রহ করা।
ইংল্যান্ড অধিনায়কের কথায়, ‘‘ফাইনালে আবহ, আবেগের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে পরিস্থিতিকে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে মোকাবিলা করেছে বেন। ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছে প্রথম বিশ্বকাপ। যাঁরা রবিবার ঘরে বসে ম্যাচ দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এ বার বেন স্টোকস হতে চাইবেন।’’
তিন বছর আগে কলকাতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে বেন স্টোকসকে শেষ ওভারে বিশাল কয়েকটি ছক্কা মেরে ইংল্যান্ডের হাত থেকে খেতাব ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্রাথওয়েট। যার পরে ক্রিকেট জীবনটাই শেষ হয়ে যেতে পারত বেন স্টোকসের। সেই স্টোকসের হাত ধরেই প্রথম বিশ্বকাপ ধরে তোলার দিনে সে কথা স্মরণ করে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলছেন, ‘‘কলকাতায় তিন বছর আগে যা হয়েছিল, তার পরে বহু ক্রিকেটারের খেলোয়াড় জীবন শেষ হয়ে যেতে পারত। বেনকে বহু বার এ কথাটা আমি বলেছি।’’
তার পরেই ইংল্যান্ডের পাবে মারপিট করে নিজের ক্রিকেট জীবন অনেকটাই অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্টোকস। যার ফলে আদালত অবধি ছুটতে হয়েছিল তাঁকে। উপক্রম হয়েছিল খেলা বন্ধ হওয়ার।
বিশ্বকাপ জয়ের দিনে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে কথাও টেনে এনেছেন মর্গ্যান। তাঁর কথায়, ‘‘যে পরিস্থিতি অতিক্রম করে গত কয়েক বছরে বেন এগিয়ে এসেছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ। ও একজন অতিমানব। ও প্রায় একার কাঁধে দল আমাদের ব্যাটিং বিভাগকে এই বিশ্বকাপকে ফাইনালের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে।’’ বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘জস বাটলারের সঙ্গে স্টোকসের জুটি অসাধারণ। কিন্তু শেষের দিকে যে মেজাজে বেন ব্যাট করে গেল, তা অবিশ্বাস্য। ব্যাট করে ক্লান্ত, অবসন্ন ও ঘর্মাক্ত অবস্থায় ম্যাচ টাই হওয়ার পরেও সুপার ওভারে গিয়ে ব্যাট করেও দলের রান তুলল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এর আগেও অনেক বার বেন দলের দুঃসময়ে একাই একশো হয়ে আমাদের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, দলের মিটিং বা অনুশীলনের সময় স্টোকস নানা পরামর্শ দেয়। আর ফাইনালে দিনটা ছিল বেনের। একাই লড়ে কাপটা আমাদের দিল। তার জন্য ওকে বড়সড় একটা ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে।’’
পাশাপাশি, নিউজ়িল্যান্ডের চেয়ে বেশি বাউন্ডারি মারায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নিয়ম নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মর্গ্যান। তিনি বলেছেন, ‘‘খেলার নিয়মের প্রতি আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ, এই নিয়ম অনেকদিন আগেই তৈরি হয়েছিল।’’ যদিও পরোক্ষে এই নিয়মের প্রতি ক্ষোভ ব্যক্ত করে নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক বলে দিয়েছেন, ‘‘এ ভাবে হারার অভিজ্ঞতা গিলে ফেলা খুব শক্ত।’’ তবে এই নিয়মের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক তৈরি করেননি তিনি।
এ দিকে, বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। রবিবার ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই রানির অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড দলের প্রতিটি সদস্যের কাছে। যে অভিনন্দন বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘‘এ রকম একটি রোমহর্ষক ফাইনাল ম্যাচ জেতার জন্য প্রিন্স ফিলিপ ও আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা ইংল্যান্ডের পুরুষ ক্রিকেট দলের প্রতিটি সদস্যকে। তবে রানার্স নিউজ়িল্যান্ডের দলের জন্যও সমবেদনা জানাচ্ছি। গোটা প্রতিযোগিতা জুড়ে তাঁদের লড়াইও শ্রদ্ধা জাগানোর মতো।’’
প্রথম বিশ্বকাপ জয় নিয়ে ইতিমধ্যেই আনন্দে মাতোয়ারা গোটা ইংল্যান্ড। ব্রিটেনের রয়্যাল মেল পোস্টাল সার্ভিস ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে ২০১৭ সালে মহিলাদের বিশ্বকাপ জয় ও তার পরে পুরুষদের এই বিশ্বকাপ জয় উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশেষ ডাক টিকিট প্রকাশ করা হবে।