হুঙ্কার: সাংবাদিক সম্মেলনে মেজাজে পিভি সিন্ধু। ছবি: পিটিআই।
দেশে হোক বা বিদেশে, তাঁরা মুখোমুখি হলেই উত্তেজনার পারদটা চড়চড় করে বেড়ে যায়। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের দুই তারকার লড়াই মানেই ধুন্ধুমার কাণ্ড। তাঁরা— পি ভি সিন্ধু এবং সাইনা নেহওয়াল।
প্রিমিয়ার ব্যাডমিন্টন লিগের উদ্বোধনেও তার ব্যতিক্রম হল না। তা যতোই সাইনা তিন বছর পরে চলতি মরসুমে বিমল কুমারের কোচিং ছেড়ে পুরনো গুরু এবং সিন্ধুর কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে ফিরে আসুন না কেন। সিনিয়রের বিরুদ্ধে রেষারেষি যে একই রকম উত্তপ্ত রয়েছে বুঝিয়ে দিলেন সিন্ধু। ঠিক যার চব্বিশ ঘণ্টা পরে শনিবার নবীন চন্দ্র বরদলই ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রথম টাইয়ে পি ভি সিন্ধুর চেন্নাই স্ম্যাশার্স মুখোমুখি সাইনা নেহওয়ালের আওয়াধি ওয়ারিয়র্সের।
গত এক বছরে তাঁরা তিন বার মুখোমুখি হয়েছেন। দু’বার সিন্ধু জিতেছেন। শেষ বার সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সাইনা দেখিয়ে দিয়েছেন রিও অলিম্পিক্সের পরে হাঁটুর চোট থেকে সেরে ওঠার লড়াই সামলানোর পাশাপাশি তিনিও কম যান না। তিন গেমের লড়াইয়ে অলিম্পিক্স রুপোজয়ীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন সাইনা।
তাঁর বদলা নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ শনিবার প্রথম ম্যাচে। তিনি কি এই ম্যাচকে বদলা হিসেবে দেখছেন? আনন্দবাজার-কে পি ভি সিন্ধু বললেন, ‘‘বদলা ঠিক বলব না। দেখুন যে দিনটা যার হয়, সেই জেতে। সাইনা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছে। এ বার কোর্টে আমি যদি সাইনাকে মুখোমুখি পাই আমিও ছাড়ব না। চেষ্টা করব হারানোর।’’ বোঝাই যাচ্ছিল মুখে যাই বলুন, রেষারেষি তিনি দারুণ উপভোগ করছেন এখানে।
তবে আসন্ন মরসুমে ঠাসা সূচি নিয়ে সিনিয়রের মতো অতটা আক্রমণাত্মক নন সিন্ধু। সাইনা যেমন তোপ দেগেছিলেন বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার বিশ্বের প্রথম ১৫ জন সিঙ্গলস খেলোয়াড় এবং প্রথম ১০ জন ডাবলস জুটির ২০১৮ মরসুমে অন্তত ১২টি টুর্নামেন্টে নামা বাধ্যতামূলক করা নিয়ে। সিন্ধু সেই বিষয়ে বললেন, ‘‘সূচি নিয়ে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমার মনে হয়, বেছে বেছে টুর্নামেন্ট খেলতে হবে আমাদের মতো খেলোয়াড়দের। তা ছাড়া চোট থাকলে যদি আমরা কোনও টুর্নামেন্টে না নামতে পারি, জুনিয়র খেলোয়াড়রা সুযোগ পাবে। সেটাই বা খারাপ কী?’’
কিন্তু একে আসন্ন মরসুমে এ রকম ঠাসা সূচি, তার উপরে এপ্রিলে কমনওয়েলথ গেমস এবং অগস্টে এশিয়ান গেমস। এই পরিস্থিতিতে মরসুমের শেষে পিবিএলে নামাটা কি আলাদা চাপে ফেলে দেবে না?
সিন্ধু তাও উড়িয়ে দিলেন। ভারতীয় ব্যাডিমিন্টনের ‘পোস্টার গার্ল’ বললেন, ‘‘পিবিএলের মতো ব্যাডমিন্টন লিগ আরও বেশি করে হওয়া উচিত দেশে। আন্তর্জাতিক তারকাদের দেখে যাতে অনেক উঠতি খেলোয়াড় অনুপ্রেরণা পায়।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘তা ছাড়া বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই দলে থাকার অভিজ্ঞতা, অন্য রকম একটা পরিবেশও তো পাওয়া যায় পিবিএলে। সেটা কোনও অংশে কম নয়।’’
অবশ্য শুধু আওয়াধি ওয়ারির্স নয়, গত বারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই স্ম্যাশার্সের ক্যাপ্টেন সিন্ধু সব দলকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা দলেই ভারসাম্য রয়েছে। তা ছাড়া ১৫ পয়েন্টের ফর্ম্যাটে খেলা হবে (সাধারণত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলা হয় ২১ পয়েন্টের ফর্ম্যাটে)। তাই যে কেউ জিততে পারে। খুব সতর্ক থাকতে হবে। কয়েকটা পরপর পয়েন্ট কেউ তুলে ফেললেই তাঁর জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।’’
দেশের, কোটি কোটি সমর্থকের প্রত্যাশা সামলানো দৃঢ় কণ্ঠস্বরটা মুহূর্তে সতর্ক হয়ে গেল। বোঝা গেল সিন্ধু এখন নতুন ভূমিকায়।
এই না হলে ক্যাপ্টেন!