বিধ্বস্ত: হারের পরে মাটিতে বসে হতাশ কোলাদো। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচের ৭৭ মিনিটে মাতিয়াস ভেরন গোল করার পরেই নাটকীয় ভাবে বদলে গিয়েছিল কল্যাণী স্টেডিয়ামের আবহ।
আইজল এফসির ফুটবলারেরা বল ধরলেই উল্লাসে ফেটে পড়ছেন লাল-হলুদের সমর্থকেরা। এখানেই শেষ নয়। আলফ্রেড জারিয়ানরা মাঠ ছাড়লেন জয়ধ্বনির মধ্যে দিয়ে। খাইমে সান্তোস কোলাদোরা শুনলেন ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি। কে বলবে আইজল থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে খেলছেন ভেরনেরা?
শুক্রবার বিকেলে মেঘাচ্ছন্ন কল্যাণীতে দুই কোচের রণনীতি দেখে বোঝার উপায় নেই ঘরের মাঠে খেলছে কারা। সাধারণত অ্যাওয়ে ম্যাচে কোচেরা খুব একটা ঝুঁকি নিতে চান না। ব্যতিক্রম আইজলের স্ট্যানলি রোজারিয়ো।
সেনাবাহিনীর দলের প্রাক্তন কোচ বরাবরই আক্রমণাত্মক ফুটবলের ভক্ত। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজের দর্শন কখনও বদলান না। শুক্রবার তাঁর প্রাক্তন ক্লাব ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচেও দল সাজান ৪-৩-৩ ছকে।
আশ্চর্যজনক ভাবে লাল-হলুদ শিবিরের কোচ মারিয়ো রিভেরা ৪-৫-১ ছকে দল সাজিয়েছিলেন। ঘরের মাঠে ফরোয়ার্ডে একা আনসুমানা ক্রোমা! রক্ষণে মার্তি ক্রেসপির পরিবর্তে আশির আখতার। স্পেনীয় ডিফেন্ডারকে অবশ্য আঠারো জনেই রাখেননি তিনি। মারিয়ো বলে দিলেন, ‘‘সেরা আঠারো জনকেই বেছে নিয়েছিলাম। কারণ, এই সপ্তাহে আমার পরিকল্পনায় ক্রেসপি নেই।’’ স্পেনীয় ডিফেন্ডারের বিদায় কি তা হলে নিশ্চিত? মারিয়ো বললেন, ‘‘দল নিয়ে কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। তার পরেই সিদ্ধান্ত নেব।’’ ইতিমধ্যেই ক্রেসপির বদলে জনি আকোস্তা ও মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারার জায়গায় এনরিকে এসকুয়েদাকে আনার দাবি উঠে গিয়েছে। হতাশ মারিয়ো বলছেন, ‘‘এনরিকের চোট রয়েছে। জনি নিজের দেশের ক্লাব ফুটবলে ব্যস্ত। ইচ্ছে থাকলেও ওদের আনার উপায় নেই।’’
মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে কোচের রক্ষণাত্মক রণনীতি দেখে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে। কেউ কেউ বলেই দিলেন, ‘‘এই রণনীতি নিয়ে ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়। এ বার আইজলও হারিয়ে দেবে।’’ আশঙ্কাই সত্যি হল।
ইস্টবেঙ্গল প্রথম গোল করার সুযোগ পেল ম্যাচের ২৩ মিনিটে। কিন্তু ক্রোমার শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয় সুযোগ ৪২ মিনিটে। অবিশ্বাস্য ভাবে আইজল গোলরক্ষক জ়োথানমাওয়াইয়ার গায়ে বল মারেন ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র এক বারই গোল করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল! এ বারও ব্রেন্ডন সামনে একা গোলরক্ষককে পেয়ে গোল করতে পারেননি। অর্থাৎ ঘরের মাঠে পুরো ম্যাচে মাত্র চার বার গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছিল ইস্টবেঙ্গল!
গোল হবেই বা কী করে? পরিকল্পনা, পারস্পরিক বোঝাপড়া থেকে আত্মবিশ্বাস— সবই তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে লাল-হলুদ শিবিরে। সংক্রমণ এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে শুক্রবার প্রথম একাদশে পাঁচ ফুটবলার পরিবর্তন করেও রোগ সারাতে ব্যর্থ মারিয়ো। লাল-হলুদ রক্ষণের ব্যর্থতাতেই ৭৭ মিনিটে ঠান্ডা মাথায় গোল করে আইজলকে এগিয়ে দেন ভেরন।
২৬ বছর বয়সি আর্জেন্টিনীয় স্ট্রাইকার গোকুলম এফসিতে ট্রায়াল দিতে এসেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে সই করান আইজল কোচ। শুক্রবার লিয়োনেল মেসির দেশের ভেরনই ম্যাচের সেরা রোচারজ়েলার সঙ্গে জুটি বেঁধে মশাল নেভালেন। ম্যাচের পরে স্ট্যানলি বলছিলেন, ‘‘এই ইস্টবেঙ্গলকে দেখে আমি বিস্মিত।’’
শতবর্ষে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের পরে আইজল কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে লিগ টেবলের অষ্টম স্থানে নেমে গেলেন ক্রোমারা। ১০ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের। হার পাঁচ ম্যাচে। এখনও পর্যন্ত কোলাদোরা জিতেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ। ইস্টবেঙ্গল গোল করেছে ১২টি। খেয়েছেও ১২টি। এই পরিস্থিতিতে লাল-হলুদ শিবিরে ঢুকে পড়ল অবনমনের আতঙ্কও। যদিও ম্যাচের পরে ইস্টবেঙ্গল কোচ বলে দিলেন, ‘‘অবনমন হওয়ার কথা ভাবছিই না। আমি এখনও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা রাখি! কয়েকটা ম্যাচ জিতলেই আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে।’’ বিপর্যয়ের কারণ কী? মারিয়োর ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা ৭০ মিনিট পর্যন্ত ভাল খেলেছি। কিন্তু সুযোগ তৈরি করেও গোল হয়নি।’’