কাটছে না অবনমন-আতঙ্ক
Football

যত অকল্যাণ কল্যাণীতেই, জয় সেই অধরাই

শেষ সাতটি ম্যাচে একটি জয়। মেহতাব সিংহরা যখন মাঠ থেকে বেরোচ্ছেন তখন ধিক্কার ও গালাগাল বর্ষিত হল তাঁদের উদ্দেশে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১০
Share:

হতাশ: ম্যাচ সেরা হলেও দলের জয় না আসায় বিষণ্ণ মনে মাঠ ছাড়লেন ক্রোমা (মাঝখানে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কল্যাণীর স্টেডিয়াম যেন এখন ইস্টবেঙ্গলের বধ্যভূমি!

Advertisement

কল্যাণীতে ঘরের মাঠে ছয় ম্যাচে মাত্র একটি জয়। তাও সেই দু’মাস আগে। ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে। তার পর শুধুই অন্ধকার আর হতাশা। বৃহস্পতিবারও লাল-হলুদ শিবিরে মশাল জ্বলল না। হারতে হারতে কোনওক্রমে ম্যাচ ড্র করে ইস্টবেঙ্গলের অবশ্য দু’টো লাভ হল। এক) হারের হ্যাটট্রিকের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হল না মার্কোস-কোলাদোদের। দুই) এগারো দলের লিগে দশ থেকে নয়ে উঠে এল মারিয়ো রিভেরার দল। ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট হল তাদের।

শেষ সাতটি ম্যাচে একটি জয়। মেহতাব সিংহরা যখন মাঠ থেকে বেরোচ্ছেন তখন ধিক্কার ও গালাগাল বর্ষিত হল তাঁদের উদ্দেশে। তবে একটা চমকপ্রদ দৃশ্যও দেখা গেল। তা হল, পঞ্জাব কোচ কলকাতার ছেলে ইয়ান ল যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন তখন তাঁকে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানালেন লাল-হলুদ সমর্থকেরাই। কেভিন লোবো, সঞ্জু প্রধানদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গেলেন অনেকেই।

Advertisement

ইস্টবেঙ্গল বাকি নয় ম্যাচে অবনমন এড়াতে পারবে কি না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে এ দিন আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের বদলি কোচ মারিয়োর কোচিংয়ে যে দলটার হাল আরও খারাপ হওয়ার পথে সেটা বোঝা গেল। খেলার শেষে দেখা গেল ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে কার্যত সাত জন ডিফেন্ডার খেলছেন। হারার ভয়ে দল বদলাতে বদলাতে চার ডিফেন্ডারের সামনে তিন ডিফেন্সিভ মিডিয়ো নামিয়ে দিয়েছেন লাল-হলুদের স্পেনীয় কোচ! মারিয়ো অবশ্য দাবি করলেন, ‘‘অবনমন নিয়ে ভাবছি না। ছেলেদের আত্মবিশ্বাস ফিরছে। জেতার জন্য খেলতে নেমেছিলাম। রেফারির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে।’’ প্রতিপক্ষ কোচের সেই দাবি উড়িয়ে পঞ্জাব কোচ ইয়ান রীতিমতো কটাক্ষ করে গেলেন ইস্টবেঙ্গলকে। বলে গেলেন, ‘‘ওরা কেন যে এত রক্ষণাত্মক খেলল বুঝতে পারলাম না। আমরা জিততে চেয়েছিলাম বলেই তিন স্ট্রাইকার নামিয়েছিলাম।’’

শেষ দুটি ম্যাচে হারের পর মনে হয়েছিল মেহতাব সিংহ, সামাদ আলি মল্লিকেরা তেতে উঠবেন। কিন্তু ম্যাচের প্রথম দশ মিনিট ছাড়া ইস্টবেঙ্গলকে এ দিন দেখে মনে হচ্ছিল, ছন্নছাড়া, দিশাহীন একটা দল। বল পজেশন, কর্নার, গোল লক্ষ্য করে শট— সবেতেই প্রতিপক্ষের তুলনায় পিছিয়ে ছিল তারা। কাঁপতে কাঁপতেই তো গোল খেলেন মেহতাবরা।

কল্যাণী স্টেডিয়ামে কত সমর্থক হাজির ছিলেন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা দলকে সমর্থন জানাতে? বড় জোর হাজারখানেক। আর লাল-হলুদ পতাকা ও ব্যানার ছিল গোটা পাঁচেক। এ রকম দুর্দশার দিনেও শুরুর দশ মিনিট অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার একটা তাগিদ দেখা যাচ্ছিল মার্কোস-কাশিমদের খেলায়। আনসুমানা ক্রোমা যেন তাতেই সঙ্গত করলেন অসাধারণ একটি গোল করে। মার্কোসের রক্ষণ চেরা পাস ধরে প্রায় বাইশ গজ দূর থেকে গোলার মতো শটটি করলেন ক্রোমা। শেষ তিন ম্যাচে গোল পাননি লাইবেরিয়ার এই স্ট্রাইকার। সে জন্যই সম্ভবত তাঁর মধ্যে একটা তাগিদ এবং মরিয়া মনোভাব চোখে পড়ল গোলের সময়। তবে ম্যাচের ৯ মিনিটে করা তাঁর গোলও জেতাতে পারল না। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রোমা। ফাঁকা গোলের সামনে বল পেয়েও গোল করতে পারেননি। তাঁর শট পঞ্জাবের গোললাইন থেকে ফেরান কিংসলে। ১-০ এগিয়ে যাওয়ার পরে দেখা গেল ইস্টবেঙ্গল অতি-রক্ষণাত্মক হয়ে গিয়েছে। গুটিয়ে যাওয়া প্রতিপক্ষকে দেখে পাল্টা আক্রমণে যেতে শুরু করল লুধিয়ানার ক্লাব। দুই উইং দিয়ে মাকান ছোটে আর মহেশ খোসলা দৌড় শুরু করতেই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে কম্পন শুরু হল। মাঝমাঠে পঞ্জাবের ইঞ্জিন সঞ্জু প্রধানের দাপট তখন আটকায় কে? লাল-হলুদের প্রাক্তনীর পরপর দুটো দুর্দান্ত শট রুখে দিলেন ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার মিরশাদ। তীব্র চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত অবশ্য কেরলের ছেলেকে হারতেই হল। বিরতির পাঁচ মিনিট আগে সামাদ-মেহতাবদের ভুলের মাশুল দিল ইস্টবেঙ্গল। বারবোজার পাস থেকে গোল করে গেলেন পঞ্জাবের গিরিক খোসলা। পোস্টে লেগে বল ঢুকে গেল গোলে। মিরশাদ তখন হামাগুড়ি দিচ্ছেন।

এই ম্যাচ ড্র হওয়ায় সুবিধা হল মোহনবাগানের। আজ কল্যাণীতে নেরোকাকে হারাতে পারলেই কিবু ভিকুনার দলের সঙ্গে পঞ্জাবের ব্যবধান হয়ে যাবে ১১ পয়েন্টের। মারিয়োকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন সবুজ-মেরুন শিবিরের কোচ কিবু।

ইস্টবেঙ্গল: মিরশাদ মিচু, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, আশির আখতার, অবিনাশ থাপা, কমলপ্রীত সিংহ, কাশিম আইদারা, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা (টনদোম্বা নওরেম), খাইমে সান্তোস কোলাদো, আনসুমানা ক্রোমা (রোহলু পুইয়া), মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিন (খুয়ান মেরা গঞ্জালেস)।

পঞ্জাব এফসি: কিরণ লিম্বু, নির্মল ছেত্রী, কিংসলে ওবুমনেমে, আনোয়ার আলি, মুনমুন টিমোটি, সঞ্জু প্রধান (বালি গগনদীপ), দানিলো অগুস্তো, মাকেন উইঙ্কল (কেভিন লোবো), গিরিক মহেশ খোসলা, ভালচি তেইশেইরা (দিপান্দা ডিকা), সের্জো বারবোসা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement