আশাবাদী: নিজেকে ফিট রাখার লড়াইয়ে ছেলেও প্রেরণা সানিয়ার। ফাইল চিত্র
সানিয়া মির্জার দাবি, টেনিস জীবনে তাঁর কোনও লক্ষ্যপূরণই বাকি নেই। সার্কিটে তিনি নতুন করে খেলা শুরু করতে পারেন ২০২০-র জানুয়ারি থেকে। পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার পরে আসন্ন নতুন ইনিংস নিয়ে সানিয়ার কোনও প্রত্যাশাও নেই। তবে নতুন শুরুর পরে যে সাফল্য পাবেন, সানিয়ার কথায় সেটা হবে ‘বোনাস’।
বত্রিশ বছরের সানিয়া টেনিসের বাইরে আছেন প্রায় দু’বছর। এই মুহূর্তে দিনে প্রায় চার ঘণ্টা অনুশীলন করছেন। জানিয়েছেন, নিজের ওজন ২৬ কেজি কমিয়ে ফেলেছেন এর মধ্যেই। সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য টেনিস থেকে ছুটি নেওয়ার আগে তিনি ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস খেতাব জিতেছেন। সঙ্গে তিনটি মিক্সড ডাবলস ট্রফি।
সংবাদসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গর্বিত সানিয়া বলেছেন, ‘‘টেনিস খেলা শুরুর সময় অনেক স্বপ্নই দেখতাম। বলতে পারেন তার সবই সত্যি হয়েছে। তাই সামনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, এ বার ভাল যা হবে তা আমার কাছে বোনাস। আগে ভেবেছিলাম এই অগস্টে টেনিসে ফিরব। কিন্তু পরে মনে হল এত তাড়াহুড়ো না করাই ভাল। আপাতত ঠিক করেছি, পরের বছর জানুয়ারি থেকে টুর্নামেন্টে খেলা শুরু করব। তবে সেটাও আসলে একটা সম্ভাবনার কথাই বলছি।’’
এখানেই থামেননি ভারতের সর্বকালের সেরা মহিলা টেনিস খেলোয়াড়। আরও বলেছেন, ‘‘এখন মনে হচ্ছে ছেলে ইজ়হানই আমার জীবনের সব চেয়ে বড় আশীর্বাদ। যদি আবার টেনিস খেলি এবং সফল হই তা হলে বলতে হবে যে সেটা আসলে আমার কাছে বিস্ময়। নিজেকে ফিট রাখার লড়াইয়ে ছেলেও আমার প্রেরণা। যদি টেনিসে ফিরি তা হলে জানবেন নতুন করে আমার কিছু প্রমাণ করার নেই। ফিরতে চাই একটাই কারণে। টেনিস খেলতে আর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ভালবাসি।’’
টেনিসে তাঁর ফেরা নিয়ে কি কোনও সংশয় আছে?
সানিয়ার জবাব, ‘‘আসলে আমি তো বুঝতে পারছি না যে সার্কিটে আবার খেলার ধকল আমার শরীর নেবে কি না। তাই সম্ভাবনার কথাই এখন বলছি। মনে হয় আগামী দু’মাসের মধ্যে আমার কাছে ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। পুরোপুরি তৈরি না হয়ে আমি টুর্নামেন্টে নামতে চাই না। এখনই টুর্নামেন্টে খেলা শুরু করে চোট পাওয়ার কোনও মানে হয় না।’’
মা হওয়ার পরে খুব বেশি টেনিস খেলোয়াড় সফল হননি। ব্যতিক্রম মার্গারেট কোর্ট, কিম ক্লিস্টার্সের মতো কেউ কেউ। যাঁরা সন্তানের জন্ম দিয়ে সার্কিটে ফিরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন। এখন যেমন চেষ্টা করছেন সেরিনা উইলিয়ামস। সেরিনার র্যাঙ্কিং এখন নয়। মা হওয়ার পরে সার্কিটে ফিরে প্রথম পঞ্চাশে প্রবেশ করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া আজ়ারেঙ্কারাও। সানিয়া সে সবের খবর রাখেন। বলেছেন, ‘‘আমি এখনও নিজেই নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে পারি। তবে সেরিনা অবশ্যই আলাদা করে অনুপ্রাণিত করে। গ্র্যান্ড স্ল্যামে এখনও দারুণ কিছু করার জন্য ও যে ভাবে চেষ্টা করছে তা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ।’’
সানিয়া স্বীকার করছেন, তাঁর সার্কিটে ফেরার পথে এখনও প্রধান সমস্যা হাঁটুর পুরনো চোট। যা এখনও তাঁকে মাঝেমাঝে ভোগায়। জানিয়েছেন, সন্তানসম্ভবা হওয়ার আগে থেকেই এটা তাঁর টেনিস জীবনের স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে অস্ত্রোপচারও হয়েছে। ভারতীয় টেনিস তারকা তাই খুব সাবধানে এগোতে চান। সার্কিটে ফেরার প্রস্তুতি নিয়ে আরও বলেছেন, ‘‘আবার বলি যে, আসলে বুঝতে পারছি না টুর্নামেন্টে খেলার ধকল আমার শরীর আর নিতে পারবে কি না। তবে চেষ্টা তো করছিই। তা ছাড়া সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে কখন কী হয় কেউ বলতে পারে না। এমনিতে আমি নিজের ২৬ কেজি ওজন কমিয়েছি। সেটা কম কথা নয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য প্রায় ২৩ কেজি ওজন বেড়ে গিয়েছিল। খুব চেষ্টা করছি নিজেকে আরও শক্তিশালী করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফেরার।’’
সানিয়া বেশ কয়েক মাস দুবাইয়ে তাঁর অস্ট্রেলীয় ট্রেনার রবার্টের কাছে অনুশীলন করেছেন। জানিয়েছেন, টেনিস উপভোগ করা ছাড়া আগামী দিনে আর তাঁর কোনও লক্ষ্য নেই। সানিয়ার কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে বিরাট কিছু করার মতো কোনও লক্ষ্য নেই। টেনিসে যদি তার পরেও ভাল কিছু করতে পারি তা হলে বুঝব সেটা দারুণ কিছুই। তবে এই মুহূর্তে নিজেকে আরও সুস্থ হয়ে ও শক্তিশালী করে সার্কিটে ফেরা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। প্রত্যাশা থাকতেই পারে। কিন্তু মনে রাখবেন শেষ দু’বছর আমি খেলিইনি। সব ঠিকঠাক এগোলে টোকিয়ো অলিম্পিক্স নামতে চাই। আপাতত এর বেশি ভাবছি না আমি।’’