দ্রাবিড়দের ভূমিকা কি ভবিষ্যতে কমতে চলেছে? ফাইল ছবি
ফুটবলে দুর্দান্ত গোল বা ক্রিকেট ম্যাচে একটা দর্শনীয় কভার ড্রাইভ, এমনকী দাবায় একটা মনে রাখার মতো চাল দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন সমর্থকরা। অনেকেই হয়তো জানেন না, সেই গোল বা কভার ড্রাইভ বা দাবার চালের পিছনে কতটা পরিশ্রম করতে হয় খেলোয়াড়দের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন পরিশ্রম করার পর সেগুলি আয়ত্ত করতে হয়। মাঠে নেমে সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর পিছনেও থাকে মুন্সিয়ানা।
তবে অদূর ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসতে চলেছে, যেখানে ক্রীড়াবিদদের এতটা পরিশ্রম আর করতে হবে না। নেপথ্যে প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য উন্নতি। যত দিন যাচ্ছে, ততই উন্নত হয়ে উঠছে প্রযুক্তি। ফলে এখন মাঠে ফুটবলার কতটা জোরে শট মারলেন বা কতটা দৌড়লেন, ক্রিকেটে কভার ড্রাইভ মারার সময় ব্যাটের অবস্থান কোন জায়গায় ছিল, তা দেখে নেওয়া কার্যত জলভাত। ক্রমশ কমছে কোচেদের ভূমিকা। মুহুর্মুহু তথ্য জমা পড়ছে কম্পিউটারে। তা থেকে খেলোয়াড়রা সহজেই দেখে নিতে পারছেন ঠিক কোন জায়গায় তাঁদের উন্নতি করতে হবে। ফলে দলে কোচের থেকে ভিডিয়ো অ্যানালিস্টদের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বাড়ছে। তা হলে আগামী দিনে কি কোচেদের ভূমিকা কমতে চলেছে?
মাস দুয়েক পরেই শুরু হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। সেই প্রতিযোগিতায় প্রযুক্তির বিস্ফোরণ দেখা যেতে চলেছে। কী রকম? বিশ্বকাপের সরকারি বল ‘আল রিহলা’তে একটি সেন্সর লাগানো থাকবে, যার সাহায্যে সেকেন্ডে ৫০০ বার তথ্য পাঠানো যাবে। ফলে অফসাইডের ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও সহজ হবে। দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদে লাগানো থাকবে ১২টি করে ক্যামেরা, যাদের কাজ হবে বলকে সর্বক্ষণ নজরে রাখা। পাশাপাশি, প্রতিটি ফুটবলারের সম্পর্কে সেকেন্ডে ৫০ বার তথ্য পাঠাবে তারা। ফলে ফুটবলারের পায়ের এবং বলের নড়াচড়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে অফসাইডের সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হবে।
ময়দানের বিভিন্ন ক্লাবে দাপিয়ে কোচিং করেছেন রঞ্জন ভট্টাচার্য। কোচ ছিলেন গত বারের সন্তোষ ট্রফিতে রানার্স-আপ বাংলা দলেরও। ফুটবলে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বললেন, “প্রযুক্তি আসায় নিঃসন্দেহে অনেক সুবিধা হয়েছে। এখন হাতের নাগালে আমরা সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছি। ফুটবলাররাও তথ্য দেখে নিজেদের মতো করে উন্নতি করতে পারছে। কোচও তাঁকে সাহায্য করছে। তবে দিনের শেষে মস্তিষ্কই আসল। মাঠে এগারো বনাম এগারো যে খেলাটা হয়, সেখানে দল কী ভাবে খেলবে, সেই ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা থাকে কোচেরই। কোনও দল পাঁচ গোল করলে বা পিছিয়ে থেকে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন করলে সেখানে কোচের মস্তিষ্কেরই ভূমিকা থাকে। প্রযুক্তির সাহায্যে গোল বা অফসাইড হয়েছে কি না, সেটা আমরা জানতে পারি। কিন্তু কোচেদের ভূমিকা কমতে পারে, এমনটা মনে করার কারণ নেই।”
ক্রিকেট অবশ্য বহু দিন আগে থেকেই প্রযুক্তিকে আপন করে নিয়েছে। স্টাম্প মাইক, এলইডি স্টাম্প, হকআই, হটস্পট, স্নিকোমিটার এবং ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্টআপ সংস্থা আবার অভিনব এক ধরনের সেন্সর তৈরি করেছে। এটি লাগানো থাকবে ব্যাটে। সেন্সরের সাহায্যে ব্যাটের গতি, শট মারার গতি, ব্যাট তোলার ভঙ্গি এবং ব্যাট কোন পথে বলকে আঘাত করছে, প্রতিটি মুহূর্তের তথ্য জমা পড়ে। যে কোনও কোণ থেকে সেটি দেখা যায়। সংস্থার দাবি, ব্যাট ওঠানোর ভঙ্গিতে ছোট্ট বদল আনলে ছয় মারার ক্ষমতা ৩৩ শতাংশ বেড়ে যায়। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরও ছোটখাটো বদল করলে ব্যাটাররা অনেকাংশে উপকৃত হতে পারেন।
এই সেন্সরের দামও কম। মাত্র ২২৯৯ টাকা খরচ করে এই সেন্সর লাগানো যায় ব্যাটে। মাসে ৯৯ টাকা দিয়ে সাবস্ক্রিপশন করতে হয়। এই মুহূর্তে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া-সহ প্রায় ৫০০০ ক্রিকেটার এই সেন্সর ব্যবহার করছেন। সংস্থার এক কর্তার দাবি, প্রযুক্তি যে ভাবে উন্নত হচ্ছে, তাতে খুব শীঘ্রই তৃতীয় বা চতুর্থ আম্পায়ারের নিয়ম উঠে যাবে। মাঠে থাকা দুই আম্পায়ারই অল্প সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
প্রযুক্তির বিরোধিতা না করলেও কোচের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে, এমনটা মানছেন না বাংলার প্রাক্তন কোচ অরুণ লাল। বললেন, “কোচের দায়িত্ব শুধু মাত্র ক্রিকেটার তৈরি করার ক্ষেত্রে সীমিত নয়। কৌশল, পরিকল্পনা, মানসিক ভাবে এক জন ক্রিকেটারকে তৈরি করার পিছনেও কোচ থাকে। প্রযুক্তি ক্রিকেটারদের কিছুটা সাহায্য করে অবশ্যই। তবে কোচের বিকল্প হতে পারে না।”
বদল এসেছে দাবাতেও। চেন্নাইয়ে হয়ে যাওয়া অলিম্পিয়াডে নতুন এক প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। ম্যাগনাস কার্লসেন, প্রজ্ঞানন্দের মতো অনেক দাবা খেলোয়াড়ই প্রযুক্তিতে স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠেছেন। করোনার সময় বেশির ভাগ দাবা প্রতিযোগিতা হয়েছে অনলাইনে। সেখানে অনেক প্রযুক্তিই কাজে লাগানো হয়েছে।