বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে সরকারি চাকরি করবে, আর্থিক দুর্দশা থেকে পরিবারকে উদ্ধার করবে। খাবারের জন্য তাঁকে আর খনিতে ঢুকে কয়লা তুলে আনতে হবে না।
বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে সেই ছেলে একদিন বসেই পড়লেন কনস্টেবলের পরীক্ষায়। কিন্তু সে বারের মতো বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হননি তিনি।
এক যুগ পেরিয়ে গিয়েছে সেই ঘটনার। কনস্টেবলের পরীক্ষায় ফেল করা সেই ছেলে আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজার।
মাঝের সময়টা মাত্র ১২ বছর। আর এই ১২ বছরেই আপাদমস্তক বদলে গিয়েছে তাঁর জীবন। ভেবেছিলেন হবেন কনস্টেবল, কিন্তু হয়ে গেলেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজার।
কার কথা হচ্ছে? উমেশ যাদব। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজারটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় নয়, এর থেকেও তাঁর আরও বড় পরিচয় রয়েছে। তিনি ভারতের জাতীয় দলের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার।
এর মাঝের সময়টা যেন একটা রূপকথার গল্প। ১৯৮৭ সালে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে জন্ম উমেশের। বাবা তিলক যাদব ছিলেন কয়লা খনির সামান্য শ্রমিক। বিদর্ভের সেই গরিব গ্রাম, যেখানে খনি শ্রমিকের বসতি ছিল, সেখানেই বেড়ে উঠেছেন উমেশ।
উমেশের বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে সরকারি চাকরি করবে। কিন্তু টাকার অভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি উমেশ। পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়।
বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পুলিশ কনস্টেবলের পরীক্ষাতেও বসেন। কিন্তু ভাগ্য তাঁর জন্য আরও বড় কিছু লিখে রেখেছিল।
কনস্টেবলের চাকরি ফেল করার পরই যেন তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। সামান্য কিছু অর্থের উপার্জনে উমেশ ক্রিকেটে যোগ দেন। কয়েক বছরে হয়ে ওঠেন ভয়ঙ্কর পেসার। যাঁর বল খেলতা কেঁপে যেত ব্যাটসম্যানদের বুক।
সেটা ছিল ২০০৮ সাল। তাঁর ফাস্ট বোলিং সকলের নজরে এসেছিল। বিদর্ভের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলার সুযোগ পেলেন উমেশ। এর আগে উমেশ টেনিস বলেই প্রাকটিস করতেন গ্রামে। সেই প্রথম লেদার বলে খেলেন।
প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি তাঁর অধিনায়ক প্রীতম গান্ধে। সরাসরি তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ায়। সেখানে প্রথম চাকরি হলেও স্থায়ী করা হয়নি তাঁকে। মাঝে যে অন্য চাকরির সুযোগ আসেনি তেমন নয়।
কিন্তু উমেশের মাথায় ছিল বাবার সেই স্বপ্ন। তাই বড় কোনও সরকারি চাকরিই করতে চেয়েছিলেন।
২০১০ সালে প্রথম জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। তারপর ২০১১-তে অস্ট্রেলিয়া সফর। এর পর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি উমেশকে। ধীরে ধীরে ক্রমশ জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছেন ডানহাতি পেসার।
২০১৭ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সহকারী ম্যানেজারের পদে যোগ দিয়েছেন। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর বাবার স্বপ্ন পূরণে এই কাজেই যোগ দেবেন, জানিয়েছেন তিনি।