Mahuli Ghosh

মেলায় বেলুন তাক করা সেই মেয়ে অলিম্পিক্সের দৌড়ে, মেহুলির রাইফেলের ট্রিগারে স্বপ্ন দেখছে বৈদ্যবাটি

শনিবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ব্রোঞ্জ জিতেছেন হুগলির বৈদ্যবাটির মেয়ে মেহুলি ঘোষ। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের জন্য অলিম্পিক্সের একটি টিকিট পাকা করে ফেলেছেন তিনি।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ১৩:৩২
Share:

মেহুলি ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

শনিবার রাত থেকে বৈদ্যবাটির পাড়ার মোড়, চায়ের দোকানে আলোচনা একটাই— ‘নিমাইয়ের মেয়ে অলিম্পিক্সে যাচ্ছে।’ নিমাই মানে নিমাই ঘোষ। মেহুলি ঘোষের বাবা। শনিবার রাতে আজারবাইজানের বাকুতে মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল বিভাগে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন মেহুলি। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্যারিস অলিম্পিক্সে দেশের জন্য একটি টিকিট পাকা করে ফেলেছেন বাংলার শুটার। আগামী বছর আইফেল টাওয়ারের শহরে মেহুলিই দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন কি না, তা পরে চূড়ান্ত হবে। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠার শহর তাঁর বন্দুকের নলেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। স্বপ্ন দেখছেন তাঁর বাবা-মাও।

Advertisement

রবিবার সকাল পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে ফোনে বা ভিডিয়ো কলে কথা হয়নি বাবা-মায়ের। আনন্দবাজার অনলাইনকে মেহুলির মা মিতালি ঘোষ বলেন, ‘‘ইউটিউবে লাইভ দেখছিলাম। যখন ও ব্রোঞ্জ মিট করল, অলিম্পিক্স নিশ্চিত হল, তখন আমি আর ওর বাবা কেঁদে ফেলেছিলাম। অনেক লড়াই করে মেয়েটা আজকে এই জায়গায় পৌঁছেছে। আশা করি সকলের আশীর্বাদ নিয়ে ও পারবে।’’

বাবা-মায়ের সঙ্গে মেহুলি। ছবি: মেহুলির বাবার ফেসবুক থেকে।

ছোটবেলা থেকেই মেয়ের বন্দুক তাক করার নেশা আর তার গল্প শোনাচ্ছিলেন আপ্লুত মিতালি। বললেন, ‘‘মেলায় যাওয়া মানে ওর একটাই নেশা ছিল। বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানো। লক্ষ্যভেদ করে কখনও প্লাস্টিকের গামলা কিংবা অন্য কিছু পুরস্কার না-নিয়ে কখনও ফেরেনি।’’ সেই মেয়েই এ বার বাকু থেকে ব্রোঞ্জ নিয়ে ফিরছে। অলিম্পিক্স যাওয়া নিয়ে যদি-কিন্তু এখনও রয়েছে। সেই সময় ভারতীয় শুটারদের মধ্যে ক্রমতালিকায় শীর্ষে থাকারাই সুযোগ পাবেন অলিম্পিক্সে। মেহুলির সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট বলেই মনে করছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইফেল শুটিং অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল দেবকুমার সামন্ত। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেবকুমার বলেন, ‘‘মেহুলি মাঝে একটা সময় খারাপ ফল করতে করতে যে ভাবে আবার কাম ব্যাক করেছে, যে ভাবে ও নিজের দুর্বলতা শুধরে এগিয়েছে, তা উদাহরণযোগ্য। আমরা আশাবাদী ধারাবাহিকতা রেখে ও অলিম্পিক্স পর্যন্ত যাবেই।’’

Advertisement

মেহুলি ছোটবেলায় পড়তেন বৈদ্যবাটির স্যাক্রেড হার্ট স্কুলে। তার পর চুঁচুড়ার একটি নামী ইংরাজি মাধ্যম স্কুল। কিন্তু দ্বাদশের পরীক্ষার আগেই কমনওয়েলথ আর শুটিং বিশ্বকাপের জন্য ক্যাম্পে চলে যান তিনি। মিতালি বলছেন, ‘‘আমি তখন মেয়ের পরীক্ষার কথা ভাবিনি। ওকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।’’ প্রশিক্ষণের সূত্রে মেহুলির এখন ঠিকানা হায়দরাবাদ। একা থাকেন। বৈদ্যবাটির বাড়িতে ভাল কিছু রান্না করলে মেয়ের জন্য মনকেমন করে মায়ের। আর মা-বাবা হায়দরাবাদ গেলে মাটন রেঁধে খাওয়ান মেয়ে। হালকা কৌতুকের সঙ্গে মায়ের কপট অনুযোগ, ‘‘সে সব রেসিপি আবার আমায় বলে না।’’ নিমাই আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘খারাপ সময়কে অতিক্রম করাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। সবার আশীর্বাদে ও সেটা পেরেছে।’’ মেহুলির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হল, অভিনব বিন্দ্রার অলিম্পিক্স পদক জয় দেখেই ওঁর শুটিংয়ে আগ্রহ তৈরি হয়।

মেহুলির সাফল্য নিয়ে বৈদ্যবাটি শুধু উচ্ছ্বসিতই নয়, গর্বিতও। চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁই বলেন, ‘‘গোটা শহর ওঁর জন্য গর্বিত। আশা করব অলিম্পিক্সে পদক জিতে বৈদ্যবাটিকে বিশ্ব ক্রীড়ায় স্থান দেবেন মেহুলি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সুযোগ পাওয়া গেলে মেহুলিকে আমরা রাজকীয় নাগরিক সংবর্ধনা দেব প্যারিস যাওয়ার আগে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement