হকি বিশ্বকাপের শুটআউটে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিল ভারত।
ক্রিকেটে এক দিনের সিরিজ়ে ভারতের কাছে ০-২ হেরে বসে রয়েছে নিউ জ়িল্যান্ড। সেই বদলা হকিতে নিয়ে নিল কিউয়িরা। হকি বিশ্বকাপের ক্রসওভারে ভারতকে শুটআউটে হারিয়ে দিল তারা। নির্ধারিত সময়ে খেলা ৩-৩ অমীমাংসিত থাকার পর শুটআউটে নিউ জ়িল্যান্ড জিতল ৫-৪ ব্যবধানে। শুটআউটে গোলকিপার পিআর সৃজেশ তিনটি ভাল সেভ করলেও দলকে জেতাতে পারলেন না। তৃতীয় সেভের সময় চোট পান তিনি। পরিবর্ত গোলকিপার কৃষাণ পাঠক একটি শট বাঁচালেও বাকিগুলিতে পারলেন না। ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় বার হকি বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন অধরা থাকল ভারতের।
গোটা ম্যাচে অসংখ্য পেনাল্টি কর্নার নষ্টের খেসারত দিতে হয়েছে ভারতকে। কোচ গ্রাহাম রিড আগেই এই ব্যাপারে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছিলেন। মরণ বাঁচন ম্যাচেও ভারতের সেই রোগ কাটল না। দশটি পেনাল্টি কর্নার পেয়ে তারা গোল করেছে মাত্র একটিতে। কিন্তু নিউ জ়িল্যান্ড শেষ দু’টি গোলই করেছে পেনাল্টি কর্নারে। শেষ দিকে ভারতের উপর চাপ বাড়িয়ে সাফল্য পেল তারা।
শুটআউটে স্যাম লেন, স্যাম হিহা এবং নিক উডসের প্রচেষ্টা দুর্দান্ত দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন সৃজেশ। কিন্তু উডসের প্রচেষ্টা বাঁচানোর সময় হাঁটুতে চোট পান। সাডেন ডেথে প্রথম শটে জঘন্য মিস করেন হরমনপ্রীত। তবু ভারতের আশা বেঁচে ছিল পাঠকের হাতে। কিন্তু সেই আশা অচিরেই শেষ হয়ে যায়।
খেলার প্রথম কোয়ার্টারে দু’পক্ষই একে অপরকে মেপে নিতে থাকে। কেউই আগ্রাসন দেখাচ্ছিল না। বাড়তি সতর্ক ছিল দুই দলই। প্রথম দিকে সুযোগ পেয়েছিলেন ভারতের নীলকান্ত শর্মা এবং মনদীপ সিংহ। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ১৩ মিনিটের মাথায় একটি পেনাল্টি কর্নার পায়। হরমনপ্রীত সিংহের ড্র্যাগ ফ্লিক বাঁচিয়ে দেন নিউ জ়িল্যান্ডের গোলকিপার।
দ্বিতীয় কোয়ার্টার শুরুর তিন মিনিটের মধ্যে গোল করে ভারত। ললিত কুমার এগিয়ে দেন। তাঁকে ভাল বল বাড়িয়েছিলেন আকাশদীপ সিংহ। সেই বল পেয়ে জোরালো শট জালে জড়ান ললিত। চার মিনিট পরে ললিত পেনাল্টি কর্নার আদায় করেছিলেন। কিন্তু সাফল্য মেলেনি। পরের মিনিটেই গোল করে ভারত। তবে তা বাতিল হয়ে যায়। গোল করেন নীলকান্ত। নিউ জ়িল্যান্ড রিভিউ নেয়। দেখা যায় নীলকান্ত গোল করার আগেই বল বেসলাইন পেরিয়ে গিয়েছে। তাই আম্পায়ার গোল বাতিল করে দেন।
পরের মিনিটে পেনাল্টি কর্নার পায় ভারত। শটে বৈচিত্র আনতে গিয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন অমিত রোহিদাস। তবে সাফল্য আসে ২৫ মিনিটে। হরমনপ্রীত ড্র্যাগ ফ্লিক প্রতিহত হয়। সেখান থেকে এরিয়াল শটে গোল করেন সুখজিৎ সিংহ। দেশের হয়ে এটাই তাঁর প্রথম গোল। দু’টি গোল করে দাপট দেখাচ্ছিল ভারত। আচমকাই একটি গোল খেয়ে যায় তারা। সাইমন চাইল্ড পাস দিয়েছিলেন স্যাম লেনকে। তিনি গোল করেন। প্রথমার্ধে আর কোনও গোল হয়নি।
বিরতির পর আবার পেনাল্টি কর্নার পায় ভারত। ম্যাচে ষষ্ঠ বার। কিন্তু এ বারও গোল করতে পারেননি হরমনপ্রীত। দু’মিনিট পরে দুর্দান্ত বোঝাপড়ায় গোল মুখ প্রায় খুলে ফেলেছিলেন আকাশদীপ এবং মনদীপ। রিভিউ নিয়ে পেনাল্টি কর্নার আদায় করে ভারত। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। যদিও পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। অষ্টম পেনাল্টি কর্নার থেকে ড্র্যাগ ফ্লিকে গোল করেন বরুণ কুমার। দু’গোলে এগিয়ে যায় ভারত।
এর পরেই কিছুটা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন ভারতের খেলোয়াড়রা। তৃতীয় কোয়ার্টার শেষ হওয়ার আগেই পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে নিউ জ়িল্যান্ড। কেন রাসেল ব্যবধান কমান। চতুর্থ কোয়ার্টারের পঞ্চম মিনিটে আবার গোল করে সমাতে ফেরায় নিউ জ়িল্যান্ড। এ বার গোলদাতা শন ফিন্ডলে। পরের মিনিটে ভারতের গোলকিপার কৃষাণ পাঠক দারুণ সেভ করেন। কোনও মতে সেই কোয়ার্টারে বেঁচে গিয়ে ম্যাচ শুটআউটে নিয়ে যায় ভারত। তাতে অবশ্য বাঁচল না ভারতের আশা।