প্রত্যয়ী: শেষ ৪০ মিটারে গতি বাড়াতে একাগ্র হিমাশ্রী। ফাইল চিত্র
পাঁচ বছর আগের সেই রাত এখনও ভোলেননি জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ির পশ্চিম মল্লিকপাড়ার মেয়েটি। রিয়ো অলিম্পিক্সে ৪x১০০ মিটার রিলেতে ভারতীয় মহিলা দল সে বার শেষ মুহূর্তে বাদ গিয়েছিল। ফের দরজায় কড়া নাড়ছে অলিম্পিক্স। এ বার টোকিয়োতে যেন ভারতীয় মহিলা রিলে দল (৪x১০০ মিটার) যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তার জন্য নতুন সংকল্প নিয়েছেন সেই দলের সদস্য বঙ্গকন্যা হিমাশ্রী রায়।
গত মঙ্গলবার বিশ্ব রিলের (ওয়ার্ল্ড রিলে চ্যাম্পিয়নশিপ) জন্য ঘোষিত হয়েছে ছয় জনের ভারতীয় দল। তাতে ধনলক্ষ্মী শেখর, দ্যুতি চন্দ, হিমা দাস, অর্চনা সুসিন্দ্রন, ধনেশ্বরীদের সঙ্গে দলে রয়েছেন বাংলার হিমাশ্রী। মে মাসের প্রথম দু’দিন পোলান্ডে অনুষ্ঠিত হবে এই বিশ্ব রিলে। সেখানে ফাইনালে ওঠা প্রথম আট দল সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করবে অলিম্পিক্সে।
পাটিয়ালা থেকে ফোনে হিমাশ্রী বলছিলেন, ‘‘২ মে পশ্চিমবঙ্গে যেমন ভোটের ফল বেরোবে, তেমনই আমাদেরও সে দিন অগ্নিপরীক্ষা। বিশ্ব রিলের ফাইনালে উঠতে পারলে অলিম্পিক্সে যাবে দল। এখন জোরদার প্রস্তুতি চলছে।’’ যোগ করেন, ‘‘ তার পরে ওই মিটের সময় বা অন্য প্রতিযোগিতার সময় দেখে বাকি আরও আট দেশ জায়গা পাবে। কিন্তু তাতে ঝুঁকি রয়েছে। পোলান্ডে যদি আমরা ৪২ বা ৪৩ সেকেন্ডের মধ্যে দৌড় শেষ করি, তা হলেই অলিম্পিক্সের দরজা খুলবে।’’
সদ্য সমাপ্ত ফেডারেশন কাপে প্রথম হয়েছেন তামিলনাড়ুর ধনলক্ষ্মী শেখর (১১.০৪ সেকেন্ড)। তার পরে রয়েছেন দ্যুতি চন্দ, হিমা, অর্চনা। পঞ্চম হিমাশ্রী (১১.৮৫সেকেন্ড)। চতুর্থ অর্চনার সময় ১১.৭৫ সেকেন্ড। পোলান্ডে আপনি দলে ঢুকতে পারবেন? এ বার ঠিকরে বেরোয় বলিউড অভিনেতা আমির খান ও জামাইকার অ্যাথলিট শেলি-অ্যান ফ্রেসার-প্রাইসের ভক্তের। হিমাশ্রী বলেন, ‘‘পোলান্ডে কোন চার জন দৌড়বে তা এখনও ঘোষণা হয়নি। রিলেতে গতির সঙ্গে ব্যাটন হস্তান্তরও গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলনে তা দেখেই দল হবে। ফেডারেশন কাপে শেষ ৪০ মিটারে গতি কমেছে। তা বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি চলছে। ১০০ মিটারে আমার সেরা সময় ১১.৫৭ সেকেন্ড। আশা করছি, আমি পোলান্ড এবং টোকিয়োয় দ্যুতি, হিমাদের সঙ্গেই দৌড়ব।’’ হিমাশ্রীর কোচ তরুণ সাহাও আশাবাদী। তিনি বলছেন, ‘‘মেয়েটা খুব দ্রুত শিখতে পারে। অর্চনা এই জায়গাতে ধাক্কা খেতে পারে। শেষে গতি ধরে রাখতে ওকে প্রথম পাঁচ পদক্ষেপ দ্রুত ও বড় করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, ওজন একটা প্লেটে রেখে তা দড়ি দিয়ে কোমরে বেঁধে দৌড়তে বলেছি (স্লেড রান)। আশা করছি জাতীয় কোচ ওকেই দলে রাখবে।’’
হিমাশ্রীর শিক্ষক মা-বাবা রেবা দেবী ও সুভাষচন্দ্র রায় বলছেন, ‘‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই মেয়ে অ্যাথলেটিক্সে। দেশের সব প্রতিযোগিতায় পদক পেয়েছে। এ বার অলিম্পিক্সে গেলে বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে হবে।’’ হিমাশ্রীর কথায়, ‘‘অলিম্পিক্সের পরে ২০২২ এশিয়ান গেমস থেকে ১০০ মিটারে পদক নিয়ে ফিরতে। তা হলেই স্বপ্ন সার্থক হবে।’’