ফের হাসিন জাহানের তোপ মহম্মদ শামির উদ্দেশে।
তিনিও জীবনের কঠিন সময়ে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে এ ভাবেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জাতীয় দলের পেসার মহম্মদ শামি। আর তাতেই শুরু বিতর্ক। বিচ্ছিন্না স্ত্রী হাসিন জাহান সরাসরি বলেছেন যে, শামির মতো ‘আবেগহীন’ ব্যক্তি আত্মহত্যার কথা ভাবতেই পারে না!
বলিউডের ‘এম এস ধোনি’ সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে ঠিক কী বলেছিলেন শামি? তাঁর কথায়, “হতাশা এমন একটা সমস্যা, যেখানে দরকার পড়ে অন্যের মনোযোগের। এটা খুব দুঃখের যে, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মতো অসাধারণ এক অভিনেতার জীবন চলে গেল। ও ছিল আমার বন্ধু। ইশ, যদি কথা বলতে পারতাম ওর সঙ্গে। তা হলে ওর অবসাদের ব্যাপারে জানতে পারতাম। আমার ক্ষেত্রে আমার পরিবার খারাপ সময়ে পাশে থেকেছে, যত্ন নিয়েছে। আমার যে লড়াই করা দরকার, সেই উপলব্ধি করিয়েছে।” সুশান্তের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময়ই নিজের জীবনের প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন শামি। বলেছিলেন, স্ত্রী হাসিন জাহানের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতির সময় আত্মহত্যার ভাবনা মাথায় আসার কথা। শামির কথায়, “আত্মহত্যার কথা মাথায় এসেছিল আমার। কিন্তু কখনই একা থাকতে দেয়নি পরিবারের সদস্যরা। কেউ না কেউ ঠিক পাশে থাকত, কথা বলত আমার সঙ্গে। আধ্যাত্মিক ভাবনাও শক্তি জুগিয়েছিল। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলা বা কাউন্সেলিং হল সেরা উপায়।”
আরও পড়ুন: রোহিত নয়, কোহালিকেই সেরা বাছলেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক
আর এখানেই আপত্তি তুলেছেন হাসিন জাহান। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি সাফ বলেছেন, “কিসের আত্মহত্যার চেষ্টা? শামির মতো লোক আত্মহত্যা করার কথা ভাববে? যাঁর আত্মসম্মান নেই, তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবতে পারেন? ওর তো কোনও অনুশোচনাই নেই। শামি এ সব করার লোক নয়। ও আসলে পাবলিসিটির জন্য এগুলো বলছে। ক্রিমিনাল মানসিকতার লোক কোনওদিন আত্মহত্যার কথা ভাবে না। এগুলো সবই সহানুভূতি কুড়নোর চেষ্টা।”
সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে ‘বন্ধু’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন শামি। এখানেও প্রশ্ন তুলেছেন হাসিন। তাঁর কথায়, “শামির কোনও বন্ধু নেই। আমি তো এত দিন ওর সঙ্গে থেকেছি। বলিউডে ওর কোনও বন্ধু নেই। সোনু সুদের সঙ্গেও ওর ফটো দেখলাম। এগুলো শামি এক জনের পরামর্শে করছে। চেষ্টা করছে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের। সুশান্তের সঙ্গেও ওর বন্ধুত্ব ছিল না কোনও দিন। সলমন খানের সঙ্গে যে ছবি তুলেছে শামি, তা সবই টাকা দিয়ে। আসল লক্ষ্য প্রচার। পাবলিসিটি, সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা। যে সুইসাইড করার কথা ভাববে, সে পরিবারকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে না? যে আত্মহত্যা করার কথা ভাববে, তার তো আবেগ থাকবে। মানসম্মান হানি হচ্ছে, কেরিয়ার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কোর্টে চক্কর কাটতে হতে পারে, এই রকম অবস্থায় আবেগপ্রবণ লোক তো পরিবারের ভাঙন আটকাবে। কিন্তু শামি কি তা করেছে? বরং সেই সময় মিথ্যা দুর্ঘটনা সাজিয়েছিল নজর ঘোরানোর জন্য। ওর কিন্তু কোনও দুর্ঘটনাই হয়নি।”
শামি বলেছেন, জীবনের কঠিন সময়ে পরিবার পাশে ছিল তাঁর। যদিও সেই ‘পরিবার’ বলতে স্ত্রী-কন্যা নয়, তার বাইরের পরিবারের কথাই বুঝিয়েছিলেন জাতীয় দলের পেসার। হাসিন পাল্টা বলেছেন, “স্ত্রী-কন্যা কেন পরিবারের মধ্যে থাকবে? ওর মতো মানুষের কখনও পরিবার হয় না। আমিও ওই রকম কাউকে নিজের পরিবার ভাবি না।”
আরও পড়ুন: আইপিএলে চিনা সংস্থা স্পনসর থাকলে লাভ ভারতেরই, দাবি বোর্ডের কোষাধ্যক্ষের
লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন শামি। এটাকেও প্রচার হিসেবে দেখছেন হাসিন জাহান। তাঁর মতে, “২০১৩ থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলছে শামি। তার আগে দীর্ঘদিন রঞ্জি খেলেছে। লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেছে। কই, এত দিন তো কখনও সাধারণ মানুষের পাশে ও দাঁড়ায়নি। গরিবদের সাহায্য করেনি। উত্তরপ্রদেশে কিন্তু অনেক গরিব রয়েছে। যাঁদের শীতে মাথার উপর ছাদ নেই, সোয়েটার-জ্যাকেট-লেপ নেই। যে তিন বছর আমি ওদের বাড়িতে ছিলাম, তখন শামির আপত্তি উপেক্ষা করে গরিবদের সাহায্য করেছি। আমরোহা জেলায় সাহসপুরে আমি নিজের টাকায় গরিবদের জন্য ঘর বানিয়েছিলাম। ওখানে টাকার অভাবে অস্ত্রোপচার করতে পারে না অনেকে। বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারে না। শামি চাইলে গরিবদের জন্য হাসপাতাল গড়ে দিক, লেখাপড়ার দায়িত্ব নিক বাচ্চাদের। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার জল-বিস্কুট বিলিয়ে চলেছে, এটা মোটেই কাজের কথা নয়। এটা স্রেফ প্রচার।”
শামির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা এখন ঝুলে রয়েছে। লকডাউনের জেরে বন্ধ আদালত। তবে হাসিন লড়াই ছাড়ছেন না। বললেন, “আমি সুইসাইড করে সুশান্তের মতো অন্যদের স্বস্তি দেব না। যতই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করে যাক। এ সব করার জন্য শামি লোক রেখেছে, খরচ করতে হচ্ছে। আমায় তা করতে হয় না। দু’বছর কেটে গিয়েছে। এত দিনে হেরে যাইনি যখন তখন হেরে যাবও না। আমি লড়ব।”
শামিকে যেন পাল্টা বাউন্সারই দিলেন হাসিন!