পাঁচ বছর পরে কার্লসেনকে হারালেন আনন্দ ফাইল চিত্র
দশ দিন আগেই অনলাইন র্যাপিড দাবা প্রতিযোগিতা ‘চেজেবল মাস্টার্স’-এ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়েছিল ভারতের ১৬ বছরের দাবাড়ু রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। ১০ দিন পর আবার হারলেন কার্লসেন। এ বার কার্লসেন যাঁর কাছে হারলেন, তিনিও ভারতীয়। বয়সে কিশোর নন। কিন্তু এখনও ভেল্কি দেখান।
৫২ বছর বয়সি প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের খেলা দেখে তেমনই মনে করছেন আনন্দের পরে ভারতের দ্বিতীয় তথা বাংলার প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া। নরওয়েতে ‘সুপার ব্লিৎজ’ দাবা প্রতিযোগিতায় আনন্দের খেলা দেখে উচ্ছ্বসিত দিব্যেন্দু। তাঁর মতে, চেন্নাইয়ে দাবা অলিম্পিয়াডে নামার আগে এই জয় আনন্দের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে।
২৮ জুলাই থেকে চেন্নাইয়ে শুরু হতে চলেছে দাবা অলিম্পিয়াড। প্রথম বার ভারতে এই প্রতিযোগিতা হবে। সেখানে ভারতীয় দাবাড়ুদের ‘মেন্টর’-এর ভূমিকায় দেখা যাবে আনন্দকে। তার আগে আনন্দ কেমন ফর্মে রয়েছেন, সেটা দেখার জন্য নরওয়ে থেকে ৭,২৮৫ কিলোমিটার দূরে কলকাতায় বসে তাঁর খেলা দেখেছেন দিব্যেন্দু। আনন্দ জেতার পরে মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে দিব্যেন্দু বললেন, ‘‘এখন খুব কম প্রতিযোগিতায় নামে আনন্দ। এর আগে নরওয়েতে র্যাপিড দাবাতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ও। তার পরে সুপার ব্লিৎজ খেলতে নামল। সেখানে ওর পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। প্রথম চার ম্যাচে জিতেছিল আনন্দ। পরের দু’টো ম্যাচ হেরে যায়। কিন্তু কার্লসেনের বিরুদ্ধে যে খেলাটা ও খেলল, তা এক কথায় অসাধারণ। পাঁচ বছর পর কার্লসেনকে হারাল আনন্দ। অলিম্পিয়াডের আগে আনন্দের এই জয় ভারতীয় দাবাড়ুদের আরও উজ্জীবিত করবে। কারণ, আনন্দ ওখানে আরও ভাল ভাবে বাকিদের পরামর্শ দিতে পারবে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করতে পারবে।’’
কোথায় কার্লসেনকে মাত দিলেন ভারতের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার? দিব্যেন্দুর মতে, অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়েই হেরেছেন বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘কার্লসেন এই প্রতিযোগিতায় খুব একটা ভাল ছন্দে ছিল না। এর আগেও হেরেছে। আনন্দের বিরুদ্ধে কালো ঘুঁটি নিয়ে খেলছিল কার্লসেন। শুরুতে ভাল দেখাচ্ছিল ওকে। কিন্তু একটা সময়ের পরে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ও হারল। একটা চাল দিতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। তাই সময়ের নিরিখে হেরে যায় কার্লসেন।’’
আনন্দের কাছে হারলে বা ড্র করলে এই প্রতিযোগিতায় কার্লসেনকে দ্বিতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হত। এক মাত্র জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল। ফলে কিছুটা হলেও চাপ ছিল নরওয়ের গ্র্যান্ড মাস্টারের উপর। সেই চাপেই একটা চাল দিতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন তিনি। দিব্যেন্দু বললেন, ‘‘কার্লসেন পন (বোড়ে) ইচ্ছা করে খাইয়েছে। একটা চালে আনন্দের রুকের (নৌকা) বিপরীতে কার্লসেনের বিশপ (গজ), নাইট (ঘোড়া) আর দুটো পন (বোড়ে) ছিল। ও ইচ্ছা করে বোড়ে খাইয়ে আনন্দের চক্রব্যূহের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আনন্দ ভাল ডিফেন্স করেছে।’’
‘সুপার ব্লিৎজ’ দাবায় এক একটা ম্যাচ মোট তিন মিনিট করে হয়। প্রতি চালের সঙ্গে দু’সেকেন্ড করে সময় বাড়ে। তাই এই ধরনের প্রতিযোগিতায় খুব দ্রুত চাল দিতে হয়। ফলে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখা খুব কঠিন। সেই স্নায়ুর চাপ কার্লসেন ধরে রাখতে পারেননি বলেই তিনি হেরেছেন বলে মনে করেন দিব্যেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘হেরে যাওয়ার পরে খুব হতাশ দেখাচ্ছিল কার্লসেনকে। ও বিশ্বাসই করতে পারছিল না ম্যাচটা হেরে গিয়েছে!’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।