জেতার পরে গোপীর অভিনন্দন। ছবি: পিটিআই।
ব্রাজিলের কুরুক্ষেত্রে আজ ব্যাডমিন্টন-মহাভারত জয়ের আগাম যে সম্ভাব্য কারণগুলোর কথা শোনা যাচ্ছে তার একটা বেশ ইন্টারেস্টিং। পুল্লেলা গোপীচন্দ যে বছর দ্রোণাচার্য হয়েছিলেন, সে বারই পিভি সিন্ধুর অর্জুন সম্মান লাভ। গুরুর টোটকায় তাই শিষ্য শুক্রবার অলিম্পিক্স ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর ক্যারোলিনা মারিনকে হারিয়ে দেশকে সোনা দেবে বলে বিশ্বাস ভারতীয় ক্রীড়ামহলের।
আবেগ, কাকতালীয় মিল— এ সব সরিয়ে রাখলেও অবশ্য গোপী বিনা সিন্ধু-সভ্যতার জন্ম সম্ভব ছিল না। পুরনো কাসুন্দি না ঘাটলেও চলবে। গত দু’মাসের টাটকা কাহিনির খোঁজ নিলেও পরিষ্কার হয়ে যাবে সিন্ধুকে আজকের সিন্ধু করে তোলার পিছনে হায়দরাবাদের আইটি সেক্টরের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা গাচিবোলির অত্যাধুনিক ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমির হেডস্যারের অবদান কী অপরিসীম। প্লেয়ারকে ফিটনেসের চূড়ান্তে আনতে তার কার্বোহাইড্রেট শূন্য ডায়েট চার্ট কোচের বানানোর কথা আগেও শোনা গিয়েছে। কিন্তু সিন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে গোপীও গত জুলাই থেকে কার্বোহাইড্রেট খাওয়া একদম বন্ধ করে দিয়েছেন। ছাত্রীর সঙ্গে সমান তালে ট্রেনিং করবেন বলে। যাতে রিওর জন্য সিন্ধু প্রতিটা প্র্যাকটিস শিডিউলে একদম ম্যাচ প্র্যাকটিস পান। গোপী নিজে প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন। তাঁর মাপের একজন খেলোয়াড় শেষ দু’মাস প্রতিদিন সিন্ধুকে ট্রেনিংয়ের সময় একদম ম্যাচ সিচুয়েশন তৈরি করে অনুশীলন করিয়েছেন।
চকোলেট আর হায়দরাবাদি বিরিয়ানি একুশ বছরের তরুণী সিন্ধুর প্রিয় ফাস্টফুড। রিওতে সে দু’টো যাতে সিন্ধু ভুলেও মুখে না তোলেন, সে জন্য গেমস ভিলেজে পৌঁছনো ইস্তক ছাত্রীর প্রতি গোপীর সাফ নির্দেশ ছিল— রোজ আমার সঙ্গে ডাইনিং টেবলে যাবে, পাশে বসে খাবে। বাইরে খেতে যেতে ইচ্ছে করলেও সঙ্গে আমি যাব।
রিওর কোর্টে সিন্ধুর আগ্রাসন দেখে কারও বিরাট কোহালি মনে পড়ছে। সিন্ধুর ফোকাস দেখে কারও সুনীল গাওস্কর মনে পড়ছে। যে দু’টো জিনিসই গোপী অদ্ভুত টোটকায় দেশের ব্যাডমিন্টন ইতিহাসের প্রথম অলিম্পিক্স ফাইনালিস্টের ভেতর এনেছেন। গাচিবোলির প্র্যাকটিসে সবার সামনে সিন্ধুকে খোঁচা মারা কথা বলে। জাতীয় ভলিবলার দম্পতির মেয়ে এমনিতে শান্ত স্বভাবের। কথাও বলেন ধীরে ধীরে। নিচু স্বরে। রিওর কোর্টে তাঁর বডি ল্যাঙ্গোয়েজে আগ্রাসন আনতে গোপীর টোটকা— বিগ পয়েন্টে জিতলে সেই সাফল্য এমন আগুনে ভঙ্গিতে সেলিব্রেট করো যাতে প্রতিপক্ষ পরের পয়েন্ট খেলার সময় মানসিক ভাবে একটু গুটিয়ে থাকে। টেনিসে লেন্ডল আর ম্যাকেনরো দু’জনেই বহু বড় ম্যাচ জিতেছেন। কিন্তু দু’জনের সেলিব্রেশনের শরীরী ভাষা ছিল দুই মেরুর। গোপী অলিম্পিক্সে সিন্ধুর বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ‘লেন্ডল’ থেকে ‘ম্যাকেনরো’ বানিয়েছেন। কোর্টে সিন্ধুর চিৎকার, হাত মুঠো করে জয়োল্লাস শারাপোভাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু শুধু ফিটনেস, আগ্রাসনে তো আর অলিম্পিক্সে সোনা-রুপো আসে না! সিন্ধুর পায়ের জোর, স্পিড, শটে পাওয়ার এ সবও রিওতে বেড়েছে দেখা যাচ্ছে। যার পিছনে গোপীর বিদেশি সাপোর্ট স্টাফ। যে টিমে আছেন ইন্দোনেশিয়ান, মালয়েশিয়ান ট্রেনার থেকে ফিজিও। যার পিছনেও গোপীর মগজাস্ত্র। অর্জুনের হাতে গাণ্ডীব দেখতে দ্রোণাচার্য সব সিলেবাস-ই উপুড় করে দিয়েছেন।