ফরাসি ওপেনে গুরুতর চোট পেয়েছেন জেরেভ ছবি: টুইটার
শুক্রবার আলেকজান্ডার জেরেভকে যতটুকু দেখা গিয়েছিল, তাতে চমকে গিয়েছিলেন সবাই। ভয়াবহতা এতটাই ছিল, টেলিভিশন ক্যামেরাও সেই দৃশ্য দেখানো সমীচীন মনে করেনি। ভয়াবহই। বিছানায় শুয়ে জেরেভ জানিয়ে দিলেন, তাঁর চোট গুরুতর। আনন্দবাজার অনলাইন খোঁজ নিয়ে বুঝল, জেরেভের কোর্টে ফিরতে চার মাসও লাগতে পারে।
ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে দ্বিতীয় সেট চলাকালীন গোড়ালিতে চোট পান জেরেভ। কোর্টেই যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হুইলচেয়ারে বসে কোর্ট ছাড়েন। সেখানে আরও কিছু ক্ষণ চিকিৎসার পরে ক্রাচ নিয়ে কোর্টে ফেরেন। বাঁ পায়ে জুতো। ডান পা খালি। ডান পা তুলে হাঁটছিলেন। কোর্টে ফিরলেও আর খেলতে পারেননি। চোখের জলে বিদায় নিতে হয়। পরে একটি ভিডিয়ো বার্তায় জেরেভ জানান, ‘বড় চোট লেগেছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে।’ এর বেশি কিছু জানাননি জেরেভ।
তিনি কতটা চোট পেয়ে থাকতে পারেন সেটা জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল অর্থোপেডিক সার্জেন ও স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তর সঙ্গে। যা বোঝা গেল, চার সপ্তাহের জন্য টেনিস থেকে ছিটকে যেতে পারেন জেরেভ।
রোলঁ গারোজে লাল সুরকির কোর্টে পা আটকে পড়ে যান জেরেভ। গোড়ালি ঘুরে যায়। এই বিষয়ে শান্তিরঞ্জন বললেন, ‘‘চিকিৎসার পরিভাষায় একে গোড়ালির স্প্রেন বলা হয়। গোড়ালিতে দু’টো লিগামেন্ট আছে। একটা ডেল্টয়েড। অন্যটা ল্যাটারাল। লিগামেন্ট দু’টো হাড়ের সঙ্গে যুক্ত। একটাকে বলা হয় টিবিয়াল। অন্যটা ফিবুলা। গোড়ালি ঘুরে গেলে লিগামেন্ট অনেক সময় ছিঁড়ে যায়।’’
গোড়ালি ঘুরে গেলে সাধারণত তিন রকমের চোট লাগে বলে জানালেন শান্তিরঞ্জন। বললেন, ‘‘জেরেভের কতটা চোট লেগেছে সেটা এমআরআই ও স্ক্যান করার পরেই বোঝা যাবে। তিন ধরনের চোট লাগতে পারে। এক, পা মুচড়ে গেলেও হাড়ে কোনও আঘাত লাগল না। এ রকম হলে শুধুমাত্র রিহ্যাব করলেই চোট সেরে যায়। দুই, হাড়ে কিছু হল না। কিন্তু লিগামেন্ট ছিড়ে গেল। তখন বিশ্রাম দিয়ে গোড়ালির ফুলে যাওয়া অংশ কমিয়ে তার পর লিগামেন্ট সেলাই করে দেওয়া হয়। তিন, লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার সঙ্গে গোড়ালির হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হল। সে ক্ষেত্রে চোট অনেক গুরুতর হয়। অস্ত্রোপচার করতে হয়।’’
চোট যত গুরুতর মাঠে ফিরতে তত বেশি সময় লাগে। কোনও ক্ষেত্রে শুধু রিহ্যাবে কাজ হয়। কোনও ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। শান্তিরঞ্জন বললেন, ‘‘শুধু পা মুচড়ে গেলে ভাল করে রিহ্যাব করলে তিন সপ্তাহের মধ্যে চোট সেরে যায়। যদি লিগামেন্ট ছিড়ে যায় সে ক্ষেত্রে ছয় থেকে সাত সপ্তাহ লাগতে পারে। আর অস্ত্রোপচার করতে হলে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে কোর্টে ফিরতে।’’
চোট পাওয়ার পরে হুইলচেয়ারে বসে কোর্টের বাইরে যান জেরেভ। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ চিকিৎসার পরে ক্রাচ নিয়ে কোর্টে ফেরেন তিনি। সেই অবস্থায় ক্রাচ নিয়ে হেঁটে জেরেভ সঠিক কাজ করেছেন বলে জানালেন শান্তিরঞ্জন। তাঁর মতে, ক্রাচ নিয়ে হেঁটেছে বলেই আঁতকে উঠতে হবে, বিষয়টা তেমন নয়। তিনি বললেন, ‘‘ওই সময় ক্রাচ নিয়ে হাঁটতেই হত। কারণ, ক্রাচ নিয়ে হাঁটলে যে পায়ে চোট লেগেছে তাতে শরীরের ওজন পড়ে না। চোট বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। খেলোয়াড়দের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাই ক্রাচ নিয়ে হাঁটলেই যে খুব বেশি চোট লেগেছে, সেটা বলা ঠিক নয়। জেরেভ কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।