সাংবাদিক সম্মেলনের আগেই সভাকক্ষের বাতানুকুল ব্যবস্থা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা জেনেই হা হা করে উঠলেন ফরাসি কোচ নিওনেল রোশেল। ডান চোখ টিপে মজা করে বলে দিলেন, ‘‘আরে, এসি কম করুন। একে ঠান্ডা লাগবে। তার উপর মাঠে নেমে গুয়াহাটির গরমের মোকাবিলা করতে না পেরে ডুববে আমার টিম। এখন যত পারবেন, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দিন আমার টিমকে।’’
রবিবারই উত্তর-পূর্ব ভারতের এই শহরে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে জিদান, দেম্বেলেদের দেশ ফ্রান্স। প্রতিপক্ষ আবার নিউ ক্যালিডোনিয়া। যে দেশটাই আবার ফরাসি শাসিত অঞ্চল। গোটা দেশে ফুটবল মাঠ মোটে ২০টি। সল্টলেকে যত মানুষ থাকেন, তার চেয়েও কম মানুষের বাস ওসেনিয়া অঞ্চলের এই দেশটিতে। তাদের দেশের বেশির ভাগ ফুটবলারই আবার খেলেন ফ্রান্সের বিভিন্ন লিগে।
শুরুতেই এ রকম সহজ প্রতিপক্ষ সামনে পড়ায় মুখের হাসি চওড়া হতে পারত নেমারের ক্লাব প্যারিস সঁ জারমঁ-এ খেলা ফরাসি অধিনায়ক ক্লদিও গোমেজের। কিন্তু ফরাসি অধিনায়কের সাফ কথা, ‘‘ম্যাচটা মোটেও সহজ হবে না।’’
আরও পড়ুন: ‘নামী বাবার ছেলে হওয়ার চাপ নিতে হয় না আমাকে’
কেন?
জানতে চাইলে ফ্রান্সের কোচ রোশল বলে দিলেন আসল সত্যটা। তাঁর কথায়, ‘‘দেশে যে আবহাওয়ায় অনুশীলন করে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে এলাম, তা এখানে পাচ্ছি কোথায়? কুড়ি ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা এখন ভারতে। অনুশীলন করতে গিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের গোটা দলের। জানি না মাঠে নেমে কী ভাবে তা সামাল দিতে পারবে ছেলেরা। সঙ্গে আর্দ্রতাও ভোগাচ্ছে।’’
তবে একই সঙ্গে রশেল বলে দেন, ‘‘জানি ম্যাচটা খুব আবেগপূর্ণ হবে। কারণ ওদের ফুটবলাররা বেশির ভাগই ফরাসি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আমরা জেতার জন্যই নামব। ২০০১-এ শেষ বার এই টুর্নামেন্ট জিতেছিলাম। এ বারও কাপ জিততেই ভারতে এসেছি আমরা। কেবল, গরমটাকে সামাল দিতে হবে, এই যা।’’
শুক্রবার নয়াদিল্লি বা মুম্বইয়ের ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে যে রকম ফাঁকা স্টেডিয়াম দেখা গিয়েছে টিভিতে। সেই দৃশ্য হয়তো রবিবার দেখা যাবে না। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে এই মুহূর্তে গুয়াহাটির ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে। জওহরলাল স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা প্রায় চব্বিশ হাজার। যার পুরো টিকিটই বিক্রি হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় আয়োজকরা।
দর্শকদের আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে, গুয়াহাটিতে পা রাখার পর থেকেই ফরাসিদের প্রচারমাধ্যমের চোখের বাইরে চলে যাওয়া। অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরো কাপে ফ্রান্সের জার্সি গায়ে আট গোল করেছেন অ্যামিন গোইরি। তার সঙ্গে রয়েছেন ইয়াসিন অ্যাডলি। এই যুগলবন্দিকে দেখতেই মুখিয়ে গুয়াহাটির দর্শক। এ দিনও এই দু’জনকে সর্বক্ষণ আড়াল করে রাখলেন ফরাসি কোচ। মিক্সড জোনেও তাঁদের কথা বলতে না দিয়ে সোজা টিম বাসে তুলে দেওয়া হল। কেন? তা জানতে চাওয়া হলে ফরাসি কোচের মুচকি হাসির সঙ্গে চটজলদি উত্তর, ‘‘টুর্নামেন্টের অনেক বাকি আছে। যদি গ্রুপের বাঁধা টপকানো যায়, তখন ভাবব ওদের সাংবাদিক সম্মেলনে আনার ব্যাপারে।’’
এরই মাঝে ফরাসিদের উদ্দেশে হুঙ্কারও ছেড়ে রেখেছেন বিপক্ষ নিউ ক্যালিডোনিয়ার কোচ দমেনেখ ওখালি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কিন্তু বাছাই পর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপে এসেছি। কাজেই সহজে আমাদের উড়িয়ে দিতে পারবে না ফ্রান্স।’’ যা শুনে ফরাসি কোচের কোনও হেলদোল দেখা গেল না। বরং তিনি তৎপর গুয়াহাটির গরমকে এড়িয়ে কত তাড়াতাড়ি গ্রুপের বাঁধা তিনি টপকাতে পারেন। বলছেন, ‘‘এই গরমে একটাই স্বস্তি। কলকাতায় গিয়ে গ্রুপের ম্যাচ খেলতে হবে না। তিনটে ম্যাচই আমরা গুয়াহাটিতে খেলব। পরিবেশগত এত সমস্যার মাঝেই এটাই স্বস্তি ফরাসি ড্রেসিংরুমে।’’