রসিকতা: ডিফেন্ডার সাইরাসের সঙ্গে মজা করছেন চুলোভা (ডান দিকে)। দর্শক ফ্রান। সোমবার মোহনবাগান অনুশীলনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অনুশীলন সেরে সতীর্থ জোসেবা বেইতিয়াকে নিয়ে মোহনবাগান তাঁবু ছাড়ার সময়ে এক বর্ষীয়ান মোহনবাগান সমর্থক এগিয়ে এলেন সামনে। সবুজ-মেরুন শিবিরের স্পেনীয় মিডফিল্ডার ফ্রান গঞ্জালেসের দু’হাত চেপে ধরে ইংরেজিতে বললেন, ‘‘আমার আই লিগ চাই।’’
শুনে হাসি মুখে আই লিগে এখনও পর্যন্ত মোহনবাগানের হয়ে ছ’গোল করা গঞ্জালেস বলেন, ‘‘আপনার মতোই আমিও তো সেটাই চাই। মাঠে এসে রোজ আপনারা সমর্থন করুন। আমরা সফল হব।’’
৯ ফেব্রুয়ারি কল্যাণীতে মোহনবাগানের পরবর্তী প্রতিপক্ষ পঞ্জাব এফসি। যে ম্যাচে মোহনবাগান রক্ষণকে সামলাতে হবে লিগে এই মুহূর্তে আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা দিপান্দা ডিকাকে। যিনি প্রথম পর্বের ম্যাচে গোলও করেছিলেন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। সমর্থকদের জটলা থেকে সেই প্রসঙ্গ এ বার উড়ে এলে হুঙ্কার ছাড়েন মোহনবাগানের ৫০ নম্বর জার্সিধারী গঞ্জালেস। বলেন, ‘‘ওকে আটকাতে আরও মনোনিবেশ চাই। ভাল ফুটবলার বলেই তো মোহনবাগানে অতীতে খেলেছে। তবে ওকে থামানোর মতো ভাল ফুটবলারও আমাদের রয়েছে। চিন্তার কিছু নেই।’’
১১ দলের আই লিগে ১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে মোহনবাগান। অর্থাৎ আই লিগের মাঝপথে এসে দাঁড়িয়েছে কিবু ভিকুনার দল। এক নম্বরে থাকায় দলের মধ্যে একটা ফুরফুরে মেজাজ। যা এ দিন অনুশীলনেও দেখা গিয়েছে। নংদম্বা নওরেমকে কাঁধে তুলে কখনও দৌড় লাগালেন গঞ্জালেস, কখনও চোটপ্রাপ্ত ক্যারিবিয়ান ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল সাইরাস রি-হ্যাব করার সময়ে তাঁর সঙ্গে রসিকতা করছেন লালরাম চুলোভা।
চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে যাঁরা খেলেছিলেন সেই বেইতিয়া, নওরেমরা এ দিন রি-হ্যাব করে তাঁবুতে ঢুকে যান। বাকিদের নিয়ে হল শুটিং, ট্যাকলিং ও বল তাড়া করার মহড়া। কিন্তু এই স্বস্তিদায়ক অবস্থাতেও মোহনবাগানে কাঁটার মতো খচখচ করছে একটি বিষয়। শেষ কয়েকটি ম্যাচেই দেখা গিয়েছে ৬৫ মিনিটের পরে ছন্দ নষ্ট হচ্ছে মোহনবাগানের। ঠিক সেই সময়ে বিপক্ষ চেপে ধরছে। ইস্টবেঙ্গল বা চেন্নাই সিটি এফসি ম্যাচে যা দেখা গিয়েছে। নেরোকা বা রিয়াল কাশ্মীর ম্যাচেও একই ব্যাপার হয়েছিল।
এর কারণ আত্মতুষ্টি নাকি ক্লান্তি? প্রশ্ন শুনে এ বার বিরক্ত হন মোহনবাগান কোচ। কিবু বলেন, ‘‘পাঁচটি অ্যাওয়ে ম্যাচে তিনটি জয়-সহ ১১ পয়েন্ট। হার নেই। ঘরের মাঠে পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয়। এর পরেও নেতিবাচক ভাবনা কেন? বিপক্ষ হয়তো ওই সময়ে গোল করেছে। কিন্তু আমরাও গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি শেষ ২০ মিনিটে।’’ গঞ্জালেস বরং শান্ত মাথায় বলে দেন, ‘‘আত্মতুষ্টি নয়। ওই সময়ে ২০ দিনে ছ’টি ম্যাচ টানা খেলতে হয়েছে। তাই ক্লান্তির জন্য একটু ছন্দ নষ্ট হতে পারে। আপাতত ১০ দিন অন্তর ম্যাচ। আর সমস্যা হবে না।’’
সবুজ-মেরুন শিবিরে চিন্তা বাড়িয়েছে স্টপার সাইরাসের ঊরুর পেশির চোট। এ দিন ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে রি-হ্যাব করলেও ডিকাদের পঞ্জাব এফসি ম্যাচে তাঁর খেলার সম্ভাবনা প্রায় নেই। কিন্তু সেখানেও ভক্তদের আশ্বস্ত করছেন গঞ্জালেস। তাঁর কথায়, ‘‘সাইরাস না থাকায় চেন্নাই ম্যাচে কোচ স্টপারে খেলতে বলেছিলেন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পেরে তৃপ্ত। পরের ম্যাচে কোচ সেটাই চাইলে চিন্তা নেই। মোহনবাগানকে জেতানোর জন্য গোলকিপারের গ্লাভস পরে নামতে বললেও দ্বিধা করব না।’’