East Bengal FC

বিশৃঙ্খলা ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে, ১২ বছর পর ট্রফি জয়ের উৎসব শেষ করে দিতে হল চার মিনিটেই!

ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর মূল ফটকের বাইরে জনা কয়েক পুলিশ ছিলেন বটে। কিন্তু মাঠে কাউকে দেখা যায়নি। ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের ন্যূনতম সমন্বয় দেখা যায়নি সোমবার।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৪
Share:

কোচ প্লেয়ারদের ঘিরে ফেললেন সমর্থকেরা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ ছিল। উদ্‌যাপনের আয়োজনও ছিল। কিন্তু এত আনন্দ, আয়োজন সবই বৃথা গেল। বিশৃঙ্খলায় চার মিনিটের মধ্যেই শেষ করে দিতে হল লাল-হলুদের সুপার কাপ জয়ের উৎসব। ১২ বছর বাদে সর্বভারতীয় ট্রফি জেতার আনন্দে পিলপিল করে মাঠে ঠুকে পড়লেন সমর্থকেরা। মাঠেই তৈরি হয়ে গেল গ্যালারি। যার ফলে সোমবার সন্ধ্যায় ইস্টবেঙ্গল মাঠের উৎসব কার্যত মাঠে মারা গেল। যাকে কেউ বলছেন, অব্যবস্থা। কেউ আবার ধামাচাপা দেওয়ার সুরে বলছেন, এই রকম হতেই পারে।

Advertisement

সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল মাঠে পা রাখেন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। তার চার মিনিট আগে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার (নিতু) সুপার কাপ ট্রফিটি নিয়ে গিয়ে রাখেন সাজানো চারটি টেবিলের মাঝখানে। কোচের পিছু পিছুই মাঠে ঢোকেন ক্লেটন সিলভা, সৌভিক চক্রবর্তী, সাউল ক্রেসপোরা। ব্যস! অমনি দেখা যায় র‌্যাম্পার্টের দিকের কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে দিয়ে কিছু ইস্টেবঙ্গল সমর্থক মাঠে ঢুকছেন। কয়েক সেকেন্ডের ম‌ধ্যে তা যেন গ্যালারিতে সংক্রামিত হয়ে যায়। কেউ ফেন্সিং টপকান, তো কেউ উচ্ছ্বাসের ঠেলায় গ্রিলে লাগানো পলকা তালা ভেঙে দেন। বাঁধ ভেঙে যায়। কুয়াদ্রাতদের ঘিরে ফেলেন কয়েক হাজার ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সেই ঘেরাওয়ে কোনও আক্রোশ ছিল না। ভালবাসা ছিল। আদর ছিল। কিন্তু সেই ভালবাসার অত্যাচারের ঠেলায় কোনও রকমে কুয়াদ্রাত ট্রফি তুললেন। সঙ্গত করলেন দেবব্রত। তার পর ক্লেটন আর কোচ মিলে কেক কাটা শেষ করতেই তাঁদের ঘেরাও-মুক্ত করতে উদ্যোগী হতে হল কর্তাদের। কোনও রকমে ইস্টেবেঙ্গল টিমকে তাঁবুবন্দি করলেন কর্তারা।

টিম মাঠে পৌঁছনোর খানিক ক্ষণ আগে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। —নিজস্ব চিত্র।

ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর মূল ফটকের বাইরে জনা কয়েক পুলিশকর্মী ছিলেন বটে। কিন্তু মাঠে কাউকে দেখা যায়নি। ন্যূনতম সমন্বয় দেখা যায়নি ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের। আগাম পরিকল্পনা থাকলে এই জিনিস হত না। আরও অনেক সুষ্ঠু ভাবে হতে পারত দীর্ঘ অপেক্ষার পর ট্রফি জেতার উদ‌্‌যাপন। তবে চার মিনিটের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল টিম মাঠ থেকে তাঁবুতে চলে গেলেও তার পরেও চলল উৎসব। পুড়ল আতসবাজিও।

Advertisement

বিকেল চারটে নাগাদ ইস্টবেঙ্গল টিমের বিমান দমদমের মাটি ছোঁয়। তার পর ভিআইপি রোড, নিউটাউন, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ, চিংড়িঘাটা, বাইপাস, মা উড়ালপুল হয়ে টিম বাস তাঁবুর সামনে এসে দাঁড়ায় সন্ধ্যা ৭টা ৪১ মিনিটে। সঙ্গে কয়েক হাজার বাইকের মিছিল। যে মিছিল কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছিল বাইপাস, ভিআইপি রোড। কখন টিম মাঠে আসবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন গ্যালারি ভর্তি করা সমর্থকেরা। সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের সদস্য গ্যালারি থেকে দেখা যায়, হাজার জোনাকির মতো সব আলো সরে সরে যাচ্ছে রেড রোডে। আসলে বাইক মিছিলকে গ্যালারি থেকে ওই রকমই দেখতে লাগছিল। অপেক্ষার অবসান হল ট্রফি আর কোচ মাঠে ঢুকতেই। কিন্তু তা ঘেঁটে গেল মুহূর্তে। অনেকটা ৯০ মিনিটে ফাইনাল ম্যাচ শেষ করার সময় শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ার মতো।

ইস্টবেঙ্গল যে একটি ট্রফি জিতে বদলে গিয়েছে, তা বোঝা গিয়েছিল দল তাঁবুতে পৌঁছনোর আরও সওয়া এক ঘণ্টা আগে। যখন গাড়ি থেকে নেমে তাঁবুতে ঢুকছিলেন দেবব্রত। যাঁকে দেখলে গত কয়েক বছরে গ্যালারি থেকে ভেসে আসত বাছা বাছা বিশেষণ, সেই তাঁর পায়েই ঝাঁপিয়ে পড়লেন কয়েক জন। লন লাগোয়া সরু যে জায়গা, সেখানকার জটলা থেকে স্লোগান উঠল, ‘‘নিতুদা জিন্দাবাদ।’’ এটা কি বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গল নয়? আর একটা জয়ের উৎসবের মাঝে কার্লেসের উদ্দেশে উড়ে গেল আরও একটি দাবি, আগামী শনিবার মোহনবাগানকে হারাতেই হবে।

হবে কি? বলবে ৩ ফেব্রুয়ারির যুবভারতী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement