নায়ক: প্রথম গোলের পরে উল্লাস সুজলের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
শনিবার বিকেলে তিনি বসেছিলেন মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গ্যালারিতে। আর সবাইয়ের মতো ভেবেছিলেন প্রিয় দল কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনে জয়ের হ্যাটট্রিক করবে। কিন্তু মাঠ ছাড়তে হল ১-৩ হার দেখে। কোথাও কি মনে পড়ে যাচ্ছিল বত্রিশ বছর আগের কলকাতা লিগের ম্যাচের কথা? সেই ম্যাচে তাঁর জোড়া গোলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জিতেছিল মহমেডান। কোথায় দলের সেই খেলার ঝাঁঝ? হতাশ সাদা-কালো সমর্থকদের সঙ্গে এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন জুনিয়রদের প্রশিক্ষক প্রাক্তন ফুটবলার আবিদ হোসেন।
ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে পরিবর্ত হিসেবে নেমে জোড়া গোল করেন সুজল মুন্ডা। তাঁর বাবা গাড়িচালক। থাকেন ভুটান সংলগ্ন জয়গাঁও গ্রামে। শিলিগুড়ির স্থানীয় লিগ থেকে ট্রায়াল দিয়ে ইউনাইটেড স্পোর্টসে আগমন। গত বছর দলে থাকলেও খুব বেশি সুযোগ পাননি। চলতি বছর লিগে এখনও পর্যন্ত পাঁচ গোল করলেন। এ দিনের দু’টি গোল উৎসর্গ করেন ছোটবেলার দুই কোচ এবং তাঁর পরিবারকে। স্বপ্ন এক দিন ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরে খেলা। ম্যাচের পরে আবিদের কাছে গিয়ে পরামর্শও নেন। কী পরামর্শ দিলেন? আনন্দবাজারকে আবিদ বলেন, “ওকে অভিনন্দন জানালাম। বক্সের মধ্যে আরও নিখুঁত হওয়ার জন্য বললাম।” কী গুণ নজরে পড়ল? আবিদের উত্তর, “বিপক্ষ বক্সে ডিফেন্ডারদের ধাওয়া করছে। বল ধরে রেখে নিখুঁত নিশানায় মারছে। আত্মবিশ্বাসে খামতি নেই।”
এই আত্মবিশ্বাস এবং পরিকল্পনার অভাবেই তিন পয়েন্ট মাঠে ফেলে আসতে হল মহমেডানকে। কয়েকটি শট ছাড়া বাকিটা দিশাহারা ফুটবল। প্রথমার্ধে তেমন সুযোগ তৈরি না হলেও দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই ইউনাইটেডের।৪৭ মিনিটে তারকের ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করেন রোহমিংথাঙ্গা। গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে যোগ হল একমাত্র স্ট্রাইকার ইসরাফিল দেওয়ানকে তুলে নেওয়া। যা নিয়ে কোচ হাকিম সেনজেন্ডো বলেন, “ওর কিছুটা জ্বর আছে। পরের ম্যাচগুলিতে পুরো সুস্থ ইসরাফিলকে চাই। তাই ওকে তুলে নিলাম।”
ইসরাফিল উঠে যেতেই যেন আক্রমণের রাস্তাও হারিয়ে ফেলল মহমেডান। ৬৫ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামেন সুজল। ৮১ মিনিটে প্রতিআক্রমণে উঠে ডি-বক্সের সামনে তারকের সঙ্গে পাস খেলে বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে সুজলের গোল দেখে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানান সাদা-কালো সমর্থকেরা। ৯০ মিনিটে সাদা-কালো শিবিরের একমাত্র গোলটি করেন মহীতোষ রায়। ম্যাচের একেবারে শেষে বামিয়া সামাদের থেকে বল কেড়ে নেন দীপঙ্কর টুডু, মাইনাস করেন সুজলকে। তাঁর নেওয়া শট গোলরক্ষক ঠিকভাবে ধরতে না পারায় ৩-১ হয়। গোল হওয়ার পরেই সমর্থকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কোচের পদত্যাগের দাবিও ওঠে। সূত্র মারফৎ জানা গেল, তিন চার দিনের মধ্যেই হয়তো মহমেডানের সহযোগী লগ্নিকারী সংস্থা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
লিগের অন্য ম্যাচে শনিবার খিদিরপুর স্পোর্টিং ক্লাব ৪-৩ হারিয়েছে সাদার্ন সমিতিকে। উয়াড়ি এসি ১-০ জিতেছে পাঠচক্রের বিরুদ্ধে।
এ দিকে শনিবারই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সেন্টার অব এক্সেলেন্সে ইস্টবেঙ্গলের সিনিয়র দল ইন্টার কাশীর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পেয়েছে। দু’টি গোল করেন যথাক্রমে মহেশ সিংহ এবং ডেভিড লালহানসাঙ্গা। জিকসন সিংহ ও ক্লেটন সিলভা মাঠে নামেননি।