Euro Cup 2024

শুক্রবার রাতেই ছিটকে যাবে দুই ইউরোজয়ী! কোয়ার্টারেই ভেঙে যাবে দুই বড় দলের কাপ জয়ের স্বপ্ন

শুক্রবার ইউরো কাপের সেরা দু’টি লড়াই। যারা হারবে, তাদের ইউরো জয়ের স্বপ্ন শেষ। এক দিকে জার্মানি বনাম স্পেন। অন্য দিকে, পর্তুগাল খেলবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। এই চার দেশ আগে ইউরো কাপ জিতেছে। তাদের মধ্যে দু’টি দেশ বিদায় নেবে শুক্রবার।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩৩
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গত বারের ইউরো কাপ জয়ী ইটালি বিদায় নিয়েছিল আগেই। শুক্রবার রাতে দু’টি ইউরোজয়ী দেশ বিদায় নেবে। প্রথমে মুখোমুখি স্পেন এবং জার্মানি। এ বারের ইউরো কাপের সেরা দু’টি দেশ। যারা হারবে, তাদের ইউরো জয়ের স্বপ্ন শেষ। অন্য ম্যাচে, পর্তুগাল খেলবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। এই দুই দেশও আগে ইউরো কাপ জিতেছে। তাদের মধ্যে একটি দল বিদায় নেবে শুক্রবার।

Advertisement

রাত ৯.৩০ মিনিটে খেলতে নামবে জার্মানি এবং স্পেন। রদ্রি চালনা করেন স্পেন দলকে। দলের গঠন ধরে রাখা থেকে ঠান্ডা মাথায় আক্রমণ তৈরি করা, সব কিছুতেই অবদান রাখেন ২৮ বছরের এই স্পেনীয়। দরকারে আক্রমণে যান, প্রয়োজনে নেমে আসেন রক্ষণে। যে কোনও জায়গা ফাঁক তৈরি হলেই পৌঁছে যান রদ্রি। শুক্রবার জার্মানদের বিরুদ্ধেও নজর থাকবে তাঁর দিকে।

স্পেনের যদি রদ্রি থাকে, জার্মানির তবে রয়েছে টনি ক্রুজ়। রদ্রিকে আটকানোর মূল দায়িত্ব থাকবে সদ্য রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া অভিজ্ঞ জার্মান ফুটবলারের উপর। জার্মানির মাঝমাঠ চালনা করেন ক্রুজ়। দরকারে অনেকেটা নীচে নেমে খেলতে পারেন। এই ক্রুজ় আর পেদ্রিকে ঘিরে রয়েছেন বেশ কিছু তরুণ ফুটবলার। যাঁরা উইং থেকে ঝড়ের গতিতে ঢুকতে পারেন, আবার বিপক্ষের রক্ষণকে ফালাফালা করে দিতে পারেন যে কোনও সময়।

Advertisement

রদ্রি আক্রমণে উঠলে সেটা বোঝা যায়। সব সময় আটকানো যায় না। কিন্তু স্পেন আক্রমণ তৈরি করছে সেটার আন্দাজ পাওয়া যায়। ক্রুজ়ের ক্ষেত্রে সেই আন্দাজটা পাওয়া মুশকিল হয়। কারণ তিনি ডিফেন্স চেরা পাস বাড়িয়ে দেন। যে নির্ভুল পাস খুঁজে নেয় সঠিক ফুটবলারকে। সেই পাস থেকে গোল করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

দুই দলের দুই সৈনিক একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ক্রুজ় বলেন, “স্পেনের সবচেয়ে ক্ষুরধার ফুটবলার রদ্রি। সব সময় শান্ত থাকতে পারে। গত দু’বছরে ও খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু গোল করেছে। দুর্দান্ত ফুটবলার।” উত্তরে রদ্রি বলেন, “আমাদের দু’জনের খেলার ধরন আলাদা। তবে ও দলের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। খেলাটা চালনা করে ক্রুজ়। ওর পা থেকেই সব আক্রমণ শুরু হয়।” শুক্রবার এই দু’জনের মধ্যে এক জন বিদায় নেবেন। শুধু সেই দলের সমর্থকেরা নন, ফুটবলপ্রেমীরাও আক্ষেপ করবেন অন্য জনের খেলা এ বারের ইউরো কাপে আর দেখতে না পাওয়ার জন্য।

শুধু ক্রুজ় বা রদ্রি নন, শুক্রবার বিদায় নেবেন কিলিয়ান এমবাপে এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মধ্যে এক জন। প্রথম জনের বয়স ২৫ বছর, দ্বিতীয় জনের ৩৯ বছর। রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন ফুটবলার রোনাল্ডো। তাঁর ভক্ত এমবাপে এই বছর যোগ দিয়েছেন স্পেনের ক্লাবে। ১২ বছর আগে শিশু এমবাপে গিয়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে। দেখা করেছিলেন তৎকালীন কোচ জিনেদিন জিদানের দলের সঙ্গে। ফ্রান্সের প্রাক্তন অধিনায়ক তখন জানতেন না ১৩ বছরের যে শিশুকে তিনি মাদ্রিদের জ্যাকেট উপহার দিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনিই ফ্রান্সকে নেতৃত্ব দেবেন। আর এমবাপে শুক্রবার দেশকে নেতৃত্ব দেবেন তাঁর ‘ঈশ্বর’ রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে। পর্তুগালের ফুটবলারের তিনি এতটাই ভক্ত যে তাঁর খেলে যাওয়া রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি পরার জন্য ব্যাকুল ছিলেন।

সেই স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি পরে ইনস্টাগ্রামে ছবি দেওয়ার পর রোনাল্ডো বলেছিলেন, “তুমি বার্নাবিউকে উজ্জ্বল করো। এখন আমার দেখার সময়।” চার বছর আগেই এমবাপের প্রশংসা করেছিলেন রোনাল্ডো। তিনি বলেছিলেন, “এমবাপে ফুটবলের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।” আর এমবাপে? তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমি রোনাল্ডোর সব ভঙ্গি নকল করার চেষ্টা করি।” এমবাপে বার বার বলেছেন তিনি রোনাল্ডোর কত বড় ভক্ত।

রোনাল্ডো এবং এমবাপের জীবন আলাদা। তবুও কোথাও একটা মিল রয়েছে দুই ফুটবলারের মধ্যে। এক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন রোনাল্ডো। ন’বছর বয়সে মেদেইরা দ্বীপের সেই ছোট ছেলেটা ভাবত বড় হয়ে জেলে হবে। মাছ ধরবে। রাস্তায় ফুটবল খেলা শুরু রোনাল্ডোর। ভাল লাগত ফুটবল খেলতে। পেশাদার ফুটবলার হওয়া তাঁর কাছে ছিল স্বপ্ন। যেটা এক সময় সত্যি করে ফেলেন তিনি।

এমবাপের জন্ম সেখানে ফুটবলার হওয়ার জন্যই। ফ্রান্সের এক শহরতলিতে ফুটবল খেলতেন। সেখান থেকে বড় কোনও জায়গায় যাওয়ার আগেই বিশ্বে নাম ছড়িয়ে গিয়েছিল এমবাপের। তখনই বোঝা যাচ্ছিল বড় হয়ে বিশ্ব ফুটবলে তারকা হবেন তিনি। মাত্র ১০ বছর বয়সেই পেয়েছিলেন এক ক্রীড়া সরঞ্জাম সংস্থার চুক্তি। তাঁকে বিনামূল্যে জুতো দিত ওই সংস্থা। সেভিয়ার মতো ক্লাব এমবাপেকে যখন নিতে গিয়েছিল, তখন তাঁর বয়স ১২ বছর। কিন্তু সেটাও নাকি দেরি হয়ে গিয়েছিল। সেভিয়ার স্কাউট মঞ্চি বলেন, “ইউরোপের সব ক্লাব তত দিনে এমবাপের নাম জেনে গিয়েছে। আমাদের মতো ক্লাবের জন্য তত দিনে খুব দেরি হয়ে গিয়েছে। ওকে নেওয়া কঠিন ছিল।”

তারকা হয়েই বিশ্ব ফুটবলে পা রেখেছিলেন এমবাপে। কিন্তু রোনাল্ডোকে সেই খেতাব অর্জন করতে হয়েছে। ১৮ বছর বয়সে রোনাল্ডো যোগ দিয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে। লিয়োনেল মেসি বার্সেলোনার হয়ে প্রথম খেলেছিলেন ১৭ বছর বয়সে। আগামী দিনে তাঁরাই বদলে দিয়েছিলেন ইউরোপের ফুটবলকে। স্কাউটদের আরও অনেক বেশি নিচু স্তরে গিয়ে ফুটবলার খোঁজার প্রচলন হয়েছিল। সেটারই ফল পেয়েছিলেন এমবাপেরা। তবে শুক্রবারের পর ইউরো কাপে যে কোনও এক জন থাকবেন। হয় থাকবেন ঈশ্বর, নয়তো তাঁর ভক্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement