UEFA Euro Cup 2024

ফুটবলের ইতিহাসে সর্বসেরা গোল রক্ষা? তুরস্কের প্রহরীতে মুগ্ধ বিশ্ব

বৃষ্টি হওয়ায় লাইপজ়িগের মাঠ পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। তারফলে বমগার্টনারের হেড মাটিতে পড়ে পিছলে গিয়ে আরও দ্রুতগতিতে গোলের দিকে ছুটছিল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ০৬:৫২
Share:

অবিশাস্য: অস্ট্রিরার বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে গোল বাঁচাচ্ছেন তুরস্কের গুনক। ছবি রয়টার্স।

মঙ্গলবার রাতে ইউরোয় কি ফিরে এসেছিলেন গর্ডন ব্যাঙ্কস? ফুটবল দুনিয়া বিস্মিত হয়ে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে নেমেছে।

Advertisement

১৯৭০-এর বিশ্বকাপ পেলের অবধারিত গোল আটকে দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কস। সেটাকেই শতাব্দীর সেরা ‘সেভ’ বলা হয়। কেউ কখনও কল্পনাই করতে পারেনি, এত বছর পরে ব্যাঙ্কসের সেই অমর গোল বাঁচানোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দিতে পারেন কেউ। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে তুরস্কের গোলরক্ষক মার্ট গুনক ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে যে ভাবে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় একটি গোল বাঁচিয়েছেন, তা দেখে ব্যাঙ্কসের সঙ্গে তাঁর তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

পেলের জোরাল হেড নিশ্চিত ভাবে গোলে ঢুকছে, সেই অবস্থায় একেবারে উল্টো দিকে শরীর ছুড়ে দিয়ে বল বাইরে বার করে দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কস। মঙ্গলবার রাতের ম্যাচেও ঘটনা ঠিক সে রকমই ঘটে। অস্ট্রিয়ার ক্রিস্টফ বমগার্টনারের জোরাল হেড মাটিতে এক ড্রপ খেয়ে তীব্র গতিতে গোলের দিকে যাচ্ছিল। বৃষ্টি হওয়ায় লাইপজ়িগের মাঠ পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। তারফলে বমগার্টনারের হেড মাটিতে পড়ে পিছলে গিয়ে আরও দ্রুতগতিতে গোলের দিকে ছুটছিল। তুরস্কের গোলরক্ষকের হাতে সময় ছিল খুবই কম। তার মধ্যেই অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় এক পোস্ট থেকে অন্য পোস্টে, ডান দিকে শরীর ছুড়ে দিয়ে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন গুনক। দু’দলের ফুটবলারেরা যেন নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না! অস্ট্রিয়ার ফুটবলারেরা মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তুরস্কের খেলোয়াড়েরা ছুটে যান তাঁদের নায়কের দিকে। সকলে গুনককে নিয়ে উল্লাস করতে থাকেন। ধারাভাষ্যকারেরা বলতে থাকেন, ‘‘অবিশ্বাস্য! এটা কি ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সেভ?’’

Advertisement

খেলা শেষে ব্যাঙ্কসের সঙ্গে গুনকের তুলনা উস্কে দেন অস্ট্রিয়ার কোচ রাল্‌ফ র‌্যাগনিক। তিনি বলেন, ‘‘জিতব কী ভাবে যদি প্রতিপক্ষ দলে গর্ডন ব্যাঙ্কস গোলের নীচে এসে দাঁড়ায়!’’ যোগ করেন, ‘‘গোলটা পেয়ে গেলে ম্যাচঅতিরিক্ত সময়ে যেত। আমরাও হয়তো জিততে পারতাম।’’ এর পরে আরও অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যাঙ্কসের সঙ্গে তুলনা টেনে আনেন। ‘‘গর্ডন ব্যাঙ্কসের সেই গোল বাঁচানোর অ্যাকশন রিপ্লে যেন দেখলাম আমরা,’’ বলতে থাকেন তাঁরা। তুরস্ক সেই সময় ২-১ গোলে এগিয়ে থাকলেও প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল। গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনছিল অস্ট্রিয়া। খেলা তখন ইনজুরি টাইমে। ৯৪ মিনিটে শেষ ওই আক্রমণ অস্ট্রিয়ার, যা বাঁচিয়ে তুরস্কের নায়ক হয়ে যান গুনক। তাঁদের রক্ষণ হার মেনে নিলেও শেষ প্রহরীকে টলানো যায়নি। শেষ মুহূর্তের ওই ‘সেভ’শেষ আটে পৌঁছে দিল তুরস্ককে। যেটা আর চমকপ্রদ, তা হচ্ছে গুনক মোটেও তরুণ নন, বয়স ৩৫। বয়সকে হার মানিয়ে এই ‘অ্যাথলেটিসিজ়ম’ তাঁকে আরও বেশি করে মহানায়কেররূপ দিচ্ছে।

যিনি হেডটা করেছিলেন সেই বমগার্টনারও স্বীকার করেছেন, বিশ্বাসই করতে পারছেন না গোল হয়নি। তিনি ধরে নিয়েছিলেন বল নিশ্চিত ভাবেই জালে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং তাঁরাও সমতা ফেরাচ্ছেন। এর পরে ম্যাচঅতিরিক্ত সময়ে যাবে। তুরস্কের রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড় মেরিহ্ দেমিরাল পরে বলে যান, ‘‘নিজেদের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অলৌকিক একটা সেভ।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি পরে গুনককে জিজ্ঞেস করি, কী ভাবে নিশ্চিত গোলটা তুমি বাঁচালে? আমি ওর জন্য খুব খুশি।’’ তুরস্কের কোচ ভিনসেনজ়ো মন্তেলা একই রকম উচ্ছ্বসিত, ‘‘আমি গুনকের জন্য খুশি, দলের জন্য খুশি, তুরস্কের জন্য খুশি।’’

তুরস্ক থেকে আসা প্রচুর ফুটবলভক্তের হাতে সেরা উপহার তুলে দিলেন গুনক দলকে শেষ আটে তুলে। শনিবার বার্লিনে তুরস্ক খেলবে ডাচদের বিরুদ্ধে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement