ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা এখন আর জয়ের আশা করেন না। এগারো দলের আইএসএলে এই মুহূর্তে সবার শেষে মশালবাহিনী। ১৭ ম্যাচে অর্জিত পয়েন্ট মাত্র দশ। এই মরসুমে আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচরা এখনও পর্যন্ত জিতেছেন মাত্র একটিতে।
ফাইল চিত্র।
এসসি ইস্টবেঙ্গলের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। কিন্তু মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে আজ, মঙ্গলবারের এই দ্বৈরথ আইএসএলের শেষ চারে যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে টিকে থাকার অগ্নিপরীক্ষা। আর তাই ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ইগর আঙ্গুলোদের কোচ ডেস বাকিংহাম আগ্রাসী ফুটবল খেলার বার্তা দিয়ে রাখলেন।
ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা এখন আর জয়ের আশা করেন না। এগারো দলের আইএসএলে এই মুহূর্তে সবার শেষে মশালবাহিনী। ১৭ ম্যাচে অর্জিত পয়েন্ট মাত্র দশ। এই মরসুমে আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচরা এখনও পর্যন্ত জিতেছেন মাত্র একটিতে। ব্যর্থতার তালিকা এখানেই শেষ হচ্ছে না। শেষ পাঁচটি ম্যাচের চারটিতেই হার। ড্র একটি ম্যাচে। তার উপরে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে রক্ষণের অন্যতম প্রধান ভরসা হীরা মণ্ডল খেলতে পারবেন না কার্ড সমস্যায়। নেই সদ্য যোগ দেওয়া নওচা সিংহ। মুম্বই থেকেই তিনি সই করেছেন লাল-হলুদে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পুরনো দলের বিরুদ্ধে তাঁকে খেলাতে পারবেন না কোচ মারিয়ো রিভেরা। ধোঁয়াশা রয়েছে মার্সেলো রিবেইরার খেলা নিয়েও। ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার চোট সারিয়ে সবে সুস্থ হয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন। মঙ্গলবারের ম্যাচে মার্সেলোকে কী ভাবে ব্যবহার করবেন, তা নিয়েও ধন্দে রয়েছেন স্পেনীয় কোচ। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও মূল্যে জিততে মরিয়া মুম্বইকে আটকানোর রণকৌশল কী? সোমবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে মারিয়ো বললেন, ‘‘ড্র করার ভাবনা নিয়ে মাঠে নামলে মুম্বইয়ের মতো দলকে আটকানো সম্ভব নয়। আমাদের জেতার লক্ষ্যেই খেলত হবে।’’
রেনেডি সিংহের কোচিংয়ে অষ্টম আইএসএলের প্রথম পর্বে মুম্বইয়ের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল ইস্টবেঙ্গল। অনবদ্য খেলেছিলেন হীরা ও আদিল খান। এ বার কী হবে? লাল-হলুদের স্পেনীয় কোচ বলছেন, ‘‘মুম্বই শক্তিশালী দল। শেষ চারে যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে ওরা প্রবল ভাবেই রয়েছে। আমাদের অবশ্য নতুন করে হারানোর কিছু নেই। এই কারণেই আমরা ঝুঁকি নিয়ে খেলতে পারব।’’ সোমবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে মুম্বই কোচ বলে দিলেন, ‘‘ছেলেদের বলেছি, এই ম্যাচে আরও অনেক বেশি আগ্রাসী ফুটবল খেলতে হবে। গোল করার পাশাপাশি আমাদের রক্ষণও মজবুত করে খেলতে হবে। যে কোনও মূল্যে এই ম্যাচটা জিততে চাই।’’ লিগ টেবলে একাদশতম স্থানে থাকলেও ইস্টবেঙ্গলকে যে হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাকিংহাম। বললেন, ‘‘লিগ টেবলে কোন দল কোথায় রয়েছে তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা। বেঙ্গালুরু এফসিকে হারিয়ে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি তা প্রমাণ করে দিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে প্রথম পর্বে কিন্তু আমরা ড্র করেছিলাম।’’
প্রশ্ন হচ্ছে হীরা, নওচা-হীন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের পক্ষে কি সম্ভব দুরন্ত ছন্দে থাকা ইগরকে আটকানো? ১৫ ম্যাচে ১০ গোল ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন মুম্বইয়ের স্ট্রাইকার। এ ছাড়াও রয়েছেন গ্যাব্রিয়েল ক্যাসিয়ো, দিয়েগো মৌরিসিয়ো, বিপিন সিংহের মতো একঝাঁক ভয়ঙ্কর ফুটবলার। মারিয়ো বলছেন, ‘‘কে রয়েছে আর কে নেই, তা নিয়ে ভাবছি না। শেষ কয়েকটা ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল একটা দল হিসেবে খেলেছে। ভাগ্য সঙ্গে থাকলে জিততেও পারতাম। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে আমরা একটা দল হিসেবেই লড়াই করব।’’ এর পরেই যোগ করেছেন, ‘‘হীরা অসাধারণ ফুটবলার। ওর সঙ্গে আমার প্রচুর কথা হয়। হীরা যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে ও শিখতে থাকে, তা হলে দ্রুত জাতীয় দলে জায়গা করে নেবে। তবে ওকে এখনও অনেক কিছু শিখতে হবে। আমার মনে হয়, হীরা ঠিক দিশাতেই এগোচ্ছে।’’ আগের ম্যাচে আদিলকে খেলাননি মারিয়ো। পরিস্থিতি সামলাতে তাঁকে দলে ফেরাতে পারেন তিনি। সঙ্গে অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়ও।
মুম্বইয়ের জয়ের পথে কাঁটা ছড়িয়ে দেওয়াই পাখির চোখ মারিয়োর।