ওড়িশার রয় কৃষ্ণ। — ফাইল চিত্র।
তিনি ফিজির নাগরিক। তবু আইএসএলের প্রত্যেক ম্যাচের আগে তাঁকে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে দেখা যায়। এ ভাবে আর কোনও বিদেশি খেলোয়াড় এ দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাননি। তিনি রয় কৃষ্ণ। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ ফিজি থেকে এসে ভারতীয় ফুটবল মাতিয়েছেন। কৃষ্ণ জানালেন, ভারতের জাতীয় সঙ্গীতই শুধু গান না, নিখাদ হিন্দিতে কথাও বলতে পারেন তিনি।
এই নিয়ে পাঁচ মরসুম আইএসএল খেলছেন কৃষ্ণ। ১০২টি ম্যাচে ৫৪টি গোল করেছেন ও ২৪টি গোল করিয়েছেন। বর্তমানে ওড়িশা এফসি-র অন্যতম সেরা ফুটবলার রয় কৃষ্ণ এর আগে এটিকে, এটিকে মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে খেলেছেন। ২০১৮-১৯ মরসুমে অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগে সোনার বুট জিতে নিয়েছিলেন তিনি। তার পরের মরসুমেই ভারতে খেলতে আসেন।
ভারতে এসে এই অসাধারণ সাফল্য পাওয়ার জন্যই কি তাঁর এই ভারত-প্রেম? তাই কি মাঠে নেমে জাতীয় সঙ্গীত গান? রহস্য উন্মোচন করেছেন কৃষ্ণ নিজেই। বলেছেন, “আমি ছোট থেকেই হিন্দি বলতে ও লিখতে পারি। স্কুলে আমি হিন্দি পড়েছি। ভাষাটা যখন জানা এবং গান গাওয়ার অভ্যাস যখন আছে, গাইব না কেন? আমার সন্তানের জন্ম ভারতেই। এ দেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হৃদয় থেকেই গাই।” আইএসএলের ইউটিউব চ্যানেলের অনুষ্ঠান ‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’-এ সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন কৃষ্ণ।
সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণ যেমন ভারতের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা বলেছেন, তেমনই তাঁর পূর্বপুরুষেরা যে ভারতে থাকতেন এবং ভারত ছেড়ে ফিজি চলে গিয়েছিলেন তা-ও জানিয়েছেন। প্রথম ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলেন কলকাতায় এসেই। সেই দিনের স্মৃতি প্রসঙ্গে কৃষ্ণ বলেন, “রাত দুটো-তিনটের সময় বিমানবন্দরের বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করে ছিল প্রচুর মানুষ। আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা ছিল ওটা। এখানে এসে স্ত্রী-কে বলি, মনে হচ্ছে এখানে আমি আগেও এসেছি। বিমানবন্দরে যে ভাবে আমার নামে চিৎকার হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল যেন বাড়িতেই এসেছি।”
পূর্বপুরুষদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, “১৪০ বছর আগে আমার পূর্বপুরুষরা ভারতে থাকতেন। তাঁরা ভারত ছেড়ে ফিজি চলে যাওয়ার সময় এ দেশে ব্রিটিশদের রাজত্ব ছিল।” যোগ করেছেন, “বরাবরই ভাবতাম এক সময় ছুটি কাটাতে ভারতে যাব। ফিজিতে আমরা বলিউডের ছবি দেখতাম। তাই এখানে এসে এখানকার মানুষ ও তাঁদের সংস্কৃতিকে কাছ থেকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আমি সৌভাগ্যবান যে এখানে ফুটবল খেলতে আসার সুযোগ পেয়ে যাই। তখন জানতামই না ভারতে, বিশেষ করে কলকাতায় ফুটবল কতটা জনপ্রিয়।”
পাঁচ বছর ভারতে কাটানোর পর এ বার কি তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছেন? বা অন্য কোনও দেশ থেকে প্রস্তাব এসেছে তাঁর কাছে? কৃষ্ণ বলেছেন, “প্রস্তাব অনেক দেশ থেকেই এসেছে। আমি ভারতেই খেলতে চাই। অনেক গুজবই শুনেছি। আমি নাকি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাচ্ছি। আমি এখনও ভারতেই খেলতে চাই।”