শুভাশিস বসু। —ফাইল চিত্র।
একটা জয় যে দলের সাজঘরের চেহারা পাল্টে দিতে পারে তার প্রমাণ মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। গত মাসের শেষ সপ্তাহে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিল। সেই সময় মহমেডান এসসির বিরুদ্ধে জিততে পারবে কি না তা নিয়েই আশঙ্কায় ছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। সেই দলই শনিবার অসাধারণ ও দাপুটে ফুটবল খেলে তিন গোল দিয়ে জয়ে ফিরে আসে সবুজ-মেরুন বাহিনী। যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে শুভাশিস বসুদের।
শনিাবারের জয়ের পর থেকেই বাগান-শিবিরের ফুটবলারদের শরীরে ভাষাই বদলে গিয়েছে। তাঁদের কথাবার্তাতেও সেই আত্মবিশ্বাস ও খুশির ছাপ স্পষ্ট। বড় ম্যাচে মহমেডানকে হারানোর পর অধিনায়ক শুভাশিস বলেন, “বেঙ্গালুরুতে হারের পর মনে হয়েছিল, সব ম্যাচ এই ভাবে হারতে পারি না আমরা। নিজেদের বলেছিলাম, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। সেটাই আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল। আমাদের লিগ টেবলের শীর্ষে ওঠার জন্য এই ম্যাচটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ঠিক করি, এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। দলের সকলে খুব ভাল খেলেছে। রক্ষণ থেকে আক্রমণে সকলে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। সেই কারণেই তিন পয়েন্ট আনতে পেরেছি।”
মহমেডানের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই খেলতে নেমেছিলেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেন। তাঁদের বোঝাপড়ায় মোহনবাগানের আক্রমণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আট মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান শুভাশিস এবং ৩৬ মিনিটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন স্টুয়ার্ট। কিন্তু সারা ম্যাচে যে পরিমান গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান, সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে বড় ব্যবধানে জিততে পারত তারা। দলের দুই বিদেশী সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার আলবের্তো রদ্রিগেজ ও টম অ্যালড্রেজ একসঙ্গে খেললেন। এ বারের আইএসএলে এই প্রথম কোনও গোল খেল না মোহনবাগান।
এর আগে চলতি মরসুমে ডুরান্ড কাপ ও আইএসএল মিলিয়ে টানা ছ’টি ম্যাচে ১৪ গোল খেয়েছে মোহনবাগান। এত দিন পরে গোল অক্ষত রাখতে পেরে খুশি ও স্বস্তি দুটোই দেখা গেল বাগান শিবিরের বাঙালি ডিফেন্ডারের অভিব্যক্তিতে। সেই প্রসঙ্গে শুভাশিস বলেন, “ক্লিন শিট রাখতে পারলে ডিফেন্ডার হিসেবে অবশ্যই ভাল লাগে। প্রতি ম্যাচেই সেই চেষ্টা করি। তবে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ম্যাচ জেতা। যত আমরা কম গোল খাব, তত দলের ম্যাচ জিততে সুবিধা হবে। দল হিসেবে নিখুঁত খেলেছি আমরা। খেলায় ভারসাম্য ছিল। সারা মরসুমে এ রকম খেলে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
কয়েক দিন আগে স্কটিশ মিডফিল্ডার স্টুয়ার্ট দলের ধারাবাহিক ভাবে গোল হজম করা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। এত দিন পরে দল গোল না খাওয়ায় খুশি তিনিও। ম্যাচের পর তিনি বলেন, “গত ম্যাচে হারের পর আমাদের আজ প্রমাণ করার ছিল, কতটা ভাল খেলতে পারি। সেটা করতে পেরে ভাল লাগছে। আলবের্তো ফিরে আসায় আমাদের রক্ষণ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দলের ছেলেরা সবাই নিজেদের নিরাপদ মনে করে খেলতে পারছে। পরের ম্যাচগুলোতেও আশা করি আমরা এ রকমই মানসিক শক্তি নিয়ে খেলতে পারব।” স্টুয়ার্ট জানান, তাঁর সঙ্গে জেমি ম্যাকলারেনের ভাল বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। বলেন, “আমরা এর আগেও একসঙ্গে খেলেছি। আমাদের স্কটিশ যোগও রয়েছে। তাই আমরা মাঠে ও মাঠের বাইরে পরষ্পরের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পারছি। গত ম্যাচে আমরা ভাল খেলতে পারিনি। তাই সমর্থকদের জন্য এই ম্যাচে ভাল খেলাটা খুবই দরকার ছিল। সমর্থকদের কাছে ডার্বির গুরুত্ব কতটা, তা আমরা জানি। তাই এই ম্যাচে তাদের জয় উপহার দিতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।”
শনিবার যুবভারতীর ম্যাচে প্রথম গোল করেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন। সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম গোল করার অনুভূতি নিয়ে তিনি বলেন, “মোহনবাগানের জার্সিতে প্রথম গোল করার অনুভূতিটা অবশ্যই দুর্দান্ত। অসাধারণ একটা ম্যাচ খেললাম আমরা। খুবই উপভোগ করেছি এই ম্যাচ এবং স্টেডিয়ামের পরিবেশ। এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত এটাই আমাদের খেলা সেরা ম্যাচ। গত ম্যাচে হারার পর জয়ে ফেরাটা খুবই জরুরি ছিল। দলের প্রত্যেকেই ভাল খেলেছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। আমাদের রক্ষণ ভাল হলে, আক্রমণও জোরদার হয়। এ ভাবেই গোটা মরসুম খেলে যেতে হবে।”