রবিবার দুবাইয়ে পাকিস্তানের উইকেট পড়ার পরে উল্লাস ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ছবি: সমাজমাধ্যম।
মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ে ফিরল ভারত। পাকিস্তানকে হারিয়ে নক আউটের লড়াইয়ে টিকে থাকলেন হরমনপ্রীত কউরেরা। প্রথম ম্যাচে নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে হারায় এই ম্যাচে জয় ভারতের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমে ব্যাট করে ১০৫ রান করে পাকিস্তান। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে চাপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত জেতে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের দাপট বজায় থাকল। এই ম্যাচ মিলিয়ে দু’দল মোট ১৬ বার মুখোমুখি হয়েছে। ভারত জিতেছে ১৩ বার। পাকিস্তান ৩ বার।
দুবাইয়ের মাঠে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক ফাতিমা সানা। কিন্তু শুরুটা ভাল হয়নি পাকিস্তানের। প্রথম ওভারেই গুল ফিরোজাকে শূন্য রানে আউট করেন রেণুকা সিংহ ঠাকুর। ভারতের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে হাত খুলতে পারছিলেন না পাক ব্যাটারেরা। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে আউট হন সিদরা আমিনও। তাঁকে আউট করেন দীপ্তি শর্মা।
মুনিবা আলি বাদে পাকিস্তানের টপ অর্ডারে কেউ রান পাননি। ওমাইমা সোহেল ৩ রান করে অরুন্ধতী রেড্ডির বলে আউট হন। মুনিবা ভাল খেলছিলেন। কিন্তু শ্রেয়াঙ্কা পাতিলের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে আউট হন তিনি। ১৭ রান করেন মুনিবা। পাকিস্তানকে অনেক কম রানে আটকে দিতে পারত ভারত। কিন্তু ফিল্ডিং ভাল হয়নি। তিনটি ক্যাচ ফস্কান ভারতীয় ফিল্ডারেরা। যদিও শেষ পর্যন্ত তার খেসারত দিতে হয়নি দলকে।
পাকিস্তানের ইনিংস সামলান দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নিদা দার। বাকিরা তাঁকে তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি। ভারতের পাঁচ বোলারই ভাল বল করেন। ২৮ রানের মাথায় নিদা আউট হওয়ার পরে মনে হচ্ছিল ১০০ রানও পার হবে না পাকিস্তানের। কিন্তু শেষ দিকে ফাতিমার ১৩ ও সায়েদা আয়ুব শাহের ১৪ রান দলের রানকে ১০৫ পর্যন্ত নিয়ে যায়।
ভারতের পাঁচ বোলারই উইকেট নিয়েছেন। সবচেয়ে সফল অরুন্ধতী। ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন শ্রেয়াঙ্কা। রেণুকা, দীপ্তি ও আশা ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
১০৬ রানের লক্ষ্য বেশি না হলেও শুরু থেকে চাপে পড়ে ভারত। দুবাইয়ের উইকেট মন্থর হওয়ায় দলে বেশি স্পিনার নিয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। যত খেলা গড়াচ্ছিল, তত উইকেট মন্থর হচ্ছিল। ভারতের দুই স্পিনার স্মৃতি মন্ধানা ও শেফালি বর্মা দু’জনেই বলের গতি পছন্দ করেন। কিন্তু উইকেট মন্থর হওয়ায় বল ধীরে আসছিল। ফলে শট মারতে সমস্যা হচ্ছিল। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে প্রথম উইকেট হারায় ভারত। ৭ রান করে সাদিয়া ইকবালের বলে আউট হন মন্ধানা।
দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন শেফালি ও জেমাইমা রদ্রিগেজ়। রান তোলার গতি কম ছিল ভারতের। প্রথম সাত ওভারে একটি চার মারতে পারেনি ভারত। কিন্তু উইকেট দিয়ে আসেননি দুই ব্যাটার। ধীরে ধীরে দলের রান টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ১০ ওভারে ৫০ রান পার হয় ভারতের। লড়াই করছিল পাকিস্তান। ভারতের ফিল্ডিং খারাপ হলেও পাকিস্তানের ফিল্ডারের প্রতিটি রান বাঁচানোর জন্য ঝাঁপাচ্ছিলেন।
লক্ষ্য যত কমছিল তত আত্মবিশ্বাস বাড়ছিল ভারতের ব্যাটারদের। পাকিস্তান ভাল বল করলেও উইকেট তুলতে পারছিল না। জুটি ভাঙতে না পারায় পিছিয়ে পড়ছিল তারা। ঠিক তখনই ছক্কা মারতে গিয়ে উইকেট উপহার দেন শেফালি। ৩২ রান করে ওমাইমা সোহেলের বলে আউট হন তিনি। ৬১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত। তখনও ৪৫ রান দরকার ছিল।
ব্যাট করতে নামেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত। জেমাইমা ঠান্ডা মাথায় খেলছিলেন। দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন। অহেতুক ঝুঁকি নিচ্ছিলেন না। সেই একই কাজ করতে দেখা যায় হরমনপ্রীতকে। তাঁদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাচ জিততে চাইছেন। রান রেটের কথা এখন ভাবছেন না। নইলে পরের দিকে রিচা ঘোষ, সঞ্জীবন সজানার মতো মারকুটে ব্যাটার থাকলেও কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি দুই ব্যাটার।
দেখে মনে হচ্ছিল হরমনপ্রীত-জেমাইমা জুটিই ভারতকে জিতিয়ে দেব। ঠিক তখনই ছন্দপতন। পাকিস্তানকে খেলায় ফেরান অধিনায়ক ফাতিমা। তাঁর বল উইকেট থেকে সরে মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জেমাইমা। ২৩ রান করেন তিনি। পরের বলে একই ভাবে শূন্য রানে আউট হন রিচা। দু’বলে দু’উইকেট পড়ে যাওয়ায় চাপ বাড়ে ভারতের উপর। কিন্তু তখনও ক্রিজ়ে ছিলেন হরমনপ্রীত। অধিনায়কের ইনিংস খেলেন তিনি। দীপ্তি শর্মার সঙ্গে মিলে দলকে জয়ে নিয়ে যান হরমন। শেষ দিকে কয়েকটি বড় শট খেলেন। যখন জিততে ২ রান বাকি তখন ঘাড়ে টান ধরে হরমনপ্রীতের। ২৯ রান করে অবসর নেন তিনি। সাত বল বাকি থাকতে ৬ উইকেট ম্যাচ জিতে যায় ভারত।