Mohun Bagan

ডিজে ব্র্যাভোর গান, ‘ক্যাম্পিয়োনেস’ চিৎকার, ট্রফি নিয়ে শহরে ফিরে উৎসব মোহনবাগানের

শহরে ফিরে এটিকে কর্ণধারের অফিসে এসেছিল বিজয়ী দল। সেখানেই ট্রফি নিয়ে চলল দেদার উৎসব। তার আগে মোহনবাগানের সমর্থকদের ভালবাসার অত্যাচারে ভাসলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৩ ১৮:১৬
Share:

ট্রফি জিতে আরপিএসজি হাউসে উচ্ছ্বাস মোহনবাগানের। রয়েছেন কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কাও। — নিজস্ব চিত্র

রবিবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। কালো মেঘে ঢাকা। বেলা গড়াতেই শুরু হল বৃষ্টি। তার মধ্যেই বিমানবন্দরে হাজার হাজার মোহনবাগান সমর্থকদের ভিড়। হবে না-ই বা কেন? একে তো প্রথম বার আইএসএল জিতেছে প্রিয় দল। তার উপর ক্লাবের নামের আগে থেকে উঠে গিয়েছে ‘এটিকে’ শব্দবন্ধ। ফলে আনন্দ দ্বিগুণ। মোহনবাগানের ফুটবলাররাও সেই আনন্দে শামিল। বাড়ি ফিরে কিছু দিন বিরতি নেওয়ার আগে ট্রফি নিয়ে চলল দেদার উৎসব।

Advertisement

বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মোমিনপুরে আরপিএসজি হাউসে যাওয়ার কথা ছিল গোটা দলের। খেলোয়াড়, কোচেরা বাসে উঠেও পড়েছিলেন। সাধারণ যে পথ যেতে ঘণ্টা খানেকের বেশি লাগার কথা নয়, তাই লাগল প্রায় আড়াই ঘণ্টার কাছাকাছি। সৌজন্যে মোহন-সমর্থকদের ভালবাসার অত্যাচার। বাসের পিছু পিছু প্রচুর সমর্থক বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাসের সামনেও অনেক সমর্থকের ভিড়। ছবি, নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত প্রত্যেকেই। বাসের কাচ ঢাকা থাকায় এক বার ছুঁয়ে দেখার স্বপ্ন অবশ্য সফল হল না। বিমানবন্দর থেকে নিউ টাউনের দিকে ঘুরে গেল বাস। মোমিনপুর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হল গ্রিন করিডর করে।

আরপিএসজি হাউসে টিম বাস ঢুকল দুপুর তিনটে নাগাদ। কড়া নিরাপত্তার কারণে ভেতরে অবশ্য সমর্থকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। ইতিউতি জনাকয়েক সমর্থকদের অবশ্য দেখা গিয়েছে। ঢুকেই মধ্যাহ্নভোজ করতে চলে গেলেন হুগো বুমোস, মনবীর সিংহরা। তার মাঝেই সাজানো মঞ্চে হাজির কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। বললেন, “এখন আমাদের খুব সুখের সময়। মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর প্রথম বার ট্রফি জিতলাম আমরা। এই অনুভূতি বলে বোঝানোর নয়।”

Advertisement

আইএসএল জেতায় আয়োজকদের তরফে ছ’কোটি টাকা পুরস্কারমূল্য পেয়েছে মোহনবাগান। এ বার কর্ণধারের তরফেও কি আর্থিক পুরস্কার মিলবে? সঞ্জীবের উত্তর, “ট্রফি জেতার থেকে বড় পুরস্কার আর কী হতে পারে। গোটা দল এত মাস ধরে পরিশ্রম করার পর ট্রফি জিতেছে। তার থেকে বেশি কিছু আর হয় নাকি?” সঞ্জীব এটাও জানালেন, মোহনবাগানের নামের আগে থেকে এটিকে উঠিয়ে শেষে যে সুপার জায়ান্টস জোড়া হবে, এই সিদ্ধান্ত তিনি মরসুম শুরুর আগেই নিয়ে ফেলেছিলেন। শুধু অপেক্ষা করছিলেন সঠিক সময়ের।

সঞ্জীব কথা বলার ফাঁকেই চলে এসেছে দল। কোচ জুয়ান ফেরান্দো, মনবীর সিংহ, সুমিত রাঠি, মনবীর সিংহরা একে একে উঠতে শুরু করেছেন মঞ্চে। মঞ্চে আগে থেকেই সাদা কাপড়ে ঢাকা ছিল ট্রফি। দল আসার পর অধিনায়ক প্রীতম এবং কোচ ফেরান্দো কাপড় সরিয়ে ট্রফি হাতে তুলে নিলেন। ধীরে ধীরে চলে এলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস, শুভাশিস বসুরা। চলল দেদার পোজ়‌ দেওয়া।

সঞ্জীব মাইক হাতে তুলে দিলেন ফেরান্দোর। মোহনবাগান কোচ বললেন, “সব ফুটবলারদের ধন্যবাদ দিতে চাই। কঠিন পরিশ্রমের কারণেই এই পুরস্কার পেয়েছি। গোটা মোহনবাগান পরিবারের উদ্দেশে এই ট্রফি উৎসর্গ করছি। তবে আমাদের কাছে সাফল্য অতীত। আজকের দিনটা ভাল করে উপভোগ করব। কাল থেকে আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ শুরু। কিছু দিন বিরতি নিয়েই সুপার কাপের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে হবে।” প্রীতম বললেন, “অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি আমরা। তবে দারুণ সব ফুটবলার থাকার জন্যেই এই সাফল্য।”

প্রীতমের কথা শেষ হতেই পিছন থেকে বেজে উঠল ডিজে ব্র্যাভোর ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ গান। ক্রিকেটের সুরে মিলে গেল ফুটবলও। মঞ্চেই ট্রফি নিয়ে ফুটবলাররা নাচতে শুরু করলেন। তাঁরাও স্পেনীয় ভাষায় ‘ক্যাম্পিয়োনেস, ক্যাম্পিয়োনেস’ গাইতে শুরু করলেন। বেশ কিছু ক্ষণ নাচানাচির পর শেষ হল উৎসব। ধীরে ধীরে ফুটবলাররা বেরিয়ে আবার বাসে উঠে পড়লেন। গন্তব্য হোটেল। সেখান থেকে যে যাঁর ব্যাগ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন। ছ’-সাত মাসের কঠোর পরিশ্রমের পর অর্ধেক মাসের বিরতি। আগামী ২ এপ্রিল আবার অনুশীলন মোহনবাগানের। শুরু হয়ে যাবে পরের মরসুমের প্রস্তুতি।

এক উৎসব শেষ হল। আর এক উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল এখন থেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement