আইএসএল-এর তৃতীয় ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে উড়ে গেল মোহনবাগান।
হঠাৎই সব তালগোল পাকিয়ে গেল সবুজ-মেরুনের। চেনাই গেল না এটিকে মোহনবাগানকে। আইএসএল-এর তৃতীয় ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ১-৫ গোলে লজ্জার হার। আক্ষরিক অর্থে উড়ে গেল মোহনবাগান।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে গোল খাওয়া শুরু এটিকে মোহনবাগানের। তারপর থেকে এক বারের জন্য মনে হয়নি তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। খেলা যত গড়িয়েছে, তত নিষ্প্রভ দেখিয়েছে তাদের।
বিক্রম প্রতাপ সিংহ প্রথম গোল করেন। বিপিন সিংহ বক্সের মধ্যে ক্রস বাড়ান। মোহন ডিফেন্সের ভুলে বল পেয়ে যান ডান দিকে থাকা বিক্রম। তাঁর গোল করতে ভুল হয়নি। এরপর বিপিন-বিক্রম জুটি বার বার ব্যস্ত রেখেছে মোহনবাগান গোলরক্ষক অমরেন্দ্র সিংহকে।
গোল শোধের ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন কার্ল ম্যাকহিউ। হুগো বুমোসের ফ্রি-কিক ক্লিয়ার করতে পারেননি নওয়াজ। ম্যাকহিউয়ের সামনে বল যায়। যেখান থেকে চোখ বুজে হেডে দশটির মধ্যে নয়টি গোল করতেন, সেখানে এই ম্যাচেই ওই একটি মিস করেন ম্যাকহিউ।
মোহনবাগান গোল শোধের সুযোগ পেলেও মুম্বইয়ের প্রাধান্য ক্রমশ বাড়তে থাকে। ২৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান বিক্রম। বাঁদিক থেকে ফাঁকায় বক্সে ঢুকে পড়েন বিপিন। সেন্টার করেন। বিক্রমের প্রথম শট বাঁচান অমরেন্দ্র। কিন্তু ফিরতি বলে গোল করতে ভুল করেননি বিক্রম। তবে এই গোল নিয়ে বিক্রমের বিরুদ্ধে ফাউলের অভিযোগ করে এটিকে মোহনবাগান। তা গ্রাহ্য হয়নি। মোহনবাগানের দাবি ছিল, ফিরতি বলে শট মারার আগে বিক্রম ফাউল করেন অমরেন্দ্রকে।
মুম্বইয়ের তৃতীয় গোল ৩৮ মিনিটে ইগর অ্যাঙ্গুলোর। মন্দার দেশাই বক্সের মধ্যে বল রাখেন। প্রথম হেড করতে ওঠেন মুর্তাদা ফল। পারেননি। বল যায় অ্যাঙ্গুলোর বাঁ দিকে। আলতো টোকায় মোহন জালে বল ঢোকাতে সমস্যা হয়নি তাঁর।
এসসি ইস্টবেঙ্গলকে প্রথমার্ধেই তিন গোল দিয়ে ম্যাচ যে রকম ওখানেই শেষ করে দিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান, বুধবার নিজেরা প্রথমার্ধে তিন গোল হজম করায় তখনই ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল সবুজ-মেরুনের জন্য।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মোহনবাগানের সমস্যা এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে যায় দীপক টাংরি লাল কার্ড দেখায়। প্রথমার্ধে একটি হলুদ কার্ড দেখেছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতে না হতেই ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন তিনি।
মুম্বই যে ছন্দে তখন ছিল, তাদের পক্ষে বিপক্ষের ১০ জনে হয়ে যাওয়ার বিশাল সুবিধে নেওয়া ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। পর পর দুটি গোল করে ৫-০ এগিয়ে যায় মুম্বই।
টাংরির লাল কার্ডের ফ্রি-কিক থেকে আহমেদ জাহোউ বক্সের মধ্যে দারুণ বল বাড়ান। ফাঁকায় দাঁড়িয়েছিলেন ফল। বল পেয়ে সামনে এগিয়ে এসে গোল করতে তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি।
পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই বিপিন গোল করেন। মাঝমাঠে মোহনবাগান জঘন্য ভুল করে বল সাজিয়ে দেয় অ্যাঙ্গুলোকে। সেখান থেকে অ্যাঙ্গুলো-বিপিন নিজেদের মধ্যে পাস খেলে গোলের সামনে চলে আসেন। ৫২ মিনিটে ৫-০ করে দেন বিপিন।
দ্বিতীয়ার্ধে বুমোসের জায়গায় নামা ডেভিড উইলিয়ামস ৬০ মিনিটে একটি গোল শোধ করেন। বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোল করেন তিনি।
মুম্বই সিটি এফসি কতটা নাস্তানাবুদ করেছে এটিকে মোহনবাগানকে, তা বোঝার জন্য তিনটি তথ্য যথেষ্ট। এক, বলের দখল মুম্বইয়ের কাছেই ছিল ৬০ শতাংশ। দুই, মুম্বই নিজেদের মধ্যে যেখানে ৪৫৭টি পাস খেলেছে, সেখানে মোহনবাগান খেলেছে ২৫২টি পাস। তিন, মুম্বই গোল লক্ষ্য করে যেখানে ১০টি শট মেরেছে, সেখানে মোহনবাগান মেরেছে একটি।
এখন কত তাড়াতাড়ি সবুজ-মেরুন এই লজ্জার হারের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেটাই দেখার।