গোলের উল্লাস। (বাঁ দিক থেকে) মোহনবাগানের ম্যাকলারেন, পেত্রাতোস ও মনবীর। শনিবার যুবভারতীতে। ছবি: সমাজমাধ্যম।
মোহনবাগান — ৩ (অলড্রেড, লিস্টন, ম্যাকলারেন)
জামশেদপুর — ০
দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফিরতেই জয়ে ফিরল মোহনবাগান। আগের ম্যাচে ওড়িশার বিরুদ্ধে পয়েন্ট নষ্ট করতে হয়েছিল। কিন্তু শনিবার ঘরের মাঠে জামশেদপুরকে দাঁড়ানোর জায়গা দিল না সবুজ-মেরুন। যুবভারতীতে ফুল ফোটালেন দিমিত্রি পেত্রাতোস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংহেরা। গোটা ম্যাচ জুড়ে ভাল ফুটবল খেলল বাগান। বলের দখল, পাস থেকে শুরু করে গোল লক্ষ্য করে শট, সবেতেই পড়শি রাজ্যের দলকে ধাক্কা দিল তারা। কোচ হোসে মোলিনা যে পরিকল্পনায় দল নামিয়েছিলেন তা ১০০ শতাংশ সফল। জামশেদপুরকে হারিয়ে আইএসএলের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠল বাগান। ৮ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট তাদের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেঙ্গালুরু এফসিরও ৮ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট। কিন্তু গোলপার্থক্যে দ্বিতীয় স্থানে সুনীল ছেত্রীরা।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মোহনবাগান
ঘরের মাঠে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে বাগান। দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠছিল তারা। ডান প্রান্তে মনবীর ও বাঁ প্রান্তে লিস্টন বার বার জামশেদপুরের বক্সে উঠে আসছিলেন। মাপা ক্রস রাখছিলেন তাঁরা। ফলে শুরুর ১৫ মিনিটেই চাপে পড়ে যায় জামশেদপুরের রক্ষণ। প্রথম ১৫ মিনিটে বাগানের বলের দখল ছিল ৬৭ শতাংশ। জামশেদপুরের মাত্র ৩৩ শতাংশ।
জামশেদপুরকে প্রথম ধাক্কা অলড্রেডের
চাপ রাখার ফল পায় বাগান। ১৫ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করে তারা। কর্নার থেকে বল ভাসান পেত্রাতোস। বল বেরিয়ে গেলেও ফিরতি বল বক্সে পাঠান দীপক টাংরি। বল হেড করে অলড্রেডের দিকে এগিয়ে দেন আলবের্তো নগুয়েরা। ডান পায়ের ভলিতে গোল করে বাগানকে এগিয়ে দেন অলড্রেড।
মোলিনার ছকে আটকাল জামশেদপুর
এই ম্যাচে ৪-২-৩-১ ছকে ফুটবলারদের নামিয়েছিলেন মোলিনা। চার ডিফেন্ডারের সামনে ছিলেন দীপক টাংরি ও আপুইয়া। বাগান কোচ জানতেন জামশেদপুরের খেলা চালান জ়াভি হার্নান্দেস। তাঁকে আটকাতে ডিফেন্সের সামনে দু’জনকে রাখেন তিনি। ফলে জামশেদপুরের সাপ্লাই লাইন বন্ধ হয়ে যায়। মাঝমাঠ ও আক্রমণের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা।
স্টুয়ার্টের অভাব ঢাকলেন পেত্রাতোস
গোল করতে না পারলেও প্রথমার্ধেই পেত্রাতোস দেখিয়ে দিলেন তিনি ছন্দে থাকলে কী করতে পারেন। এই ম্যাচে গ্রেগ স্টুয়ার্ট না থাকায় মোলিনা তাঁকে জেমি ম্যাকলারেনের পিছনে খেলাচ্ছেন। তাঁর কাজ গোলের সুযোগ তৈরি। সেই কাজটাই একটানা করে গেলেন তিনি। প্রথমার্ধে অন্তত দু’টি গোল করতে পারতেন বাগানের এই বিদেশি। অল্পের জন্য সুযোগ ফস্কান তিনি। তাঁকে আটকাতে বার বার ফাউল করছিলেন জামশেদপুরের ফুটবলারেরা। ফলে মাঝেমধ্যে মাঠে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল।
পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল লিস্টনের
প্রথমার্ধের সংযুক্তি সময়ে দেখা গেল সেই পুরনো লিস্টনকে। যিনি হেলায় একের বেশি ফুটবলারকে কাটাতে পারতেন। এই ম্যাচে সেটাই দেখালেন তিনি। সংযুক্তি সময়ে বক্সের বাইরে বল ধরেন লিস্টন। তার পর শুরু হয় তাঁর ড্রিবল। পাঁচ ফুটবলারকে কাটিয়ে বক্সে ঢোকেন তিনি। তার পর ঠান্ডা মাথায় বাঁ পায়ের শট রাখেন দ্বিতীয় পোস্টে। গোলরক্ষক আলবিনো গোমসের কিছু করার ছিল না। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বাগান।
রক্ষণে জোর জামশেদপুরের
দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের রক্ষণ আরো মজবুত করে নামে জামশেদপুর। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, তারা আর গোল খেতে চাইছে না। তার ফলে মোহনবাগানের সুযোগ তৈরি করার সংখ্যা কিছুটা কমে। কিন্তু বলের দখল সবুজ-মেরুনের পায়েই বেশি ছিল। দু’প্রান্ত ধরে আক্রমণও হচ্ছিল। কিন্তু সে ভাবে সুযোগ তৈরি হয়নি।
গোল শোধের মরিয়া চেষ্টা জামশেদপুরের
আক্রমণ মজবুত করার পরে গোল শোধ করার মরিয়া চেষ্টা শুরু করে জামশেদপুর। বেশ কয়েক জন ফুটবলার পরিবর্তন করে তারা। কয়েক বার বাগান বক্সে ঢোকে তারা। কিন্তু বাগানের রক্ষণও সজাগ ছিল। ফলে কাজের কাজ করতে পারেনি জামশেদপুর। ৭০ মিনিটের মাথায় সিভেরিয়ো এক বার বাগান গোলরক্ষক বিশাল কাইথকে পরাস্ত করলেও বল গোললাইন থেকে বার করে দেন অলড্রেড।
গোলের মধ্যে ম্যারলারেন
বাগানের তিন নম্বর গোল ম্যাকলারেনের। তবে তার কৃতিত্ব পুরোটাই মনবীরের। মাঝমাঠ থেকে লম্বা বল ধরেন মনবীর। আগুয়ান গোলরক্ষক গোমসকে কাটিয়ে অরিক্ষত অবস্থায় থাকা ম্যাকলারেনকে বল দেন তিনি। ফাঁকা জালে বল ঠেলতে ভুল করেননি অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রাইকার। তাঁকে যে কাজের জন্য নেওয়া হয়েছে সেই কাজটা করলেন তিনি।
গোলের মালা পরাতে পারত বাগান
তিন গোল করলেও অন্তত আরও চারটি গোল করতে পারত বাগান। সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলারেরা। ৮৪ মিনিটের মাথায় গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি লিস্টন। তাঁর শট গোমসের হাতে লাগার পর পোস্টে লেগে ফেরে। গোলপার্থক্য আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল মোলিনাদের। তা না হলেও জিততে কোনও সমস্যা হয়নি বাগানের। যুবভারতীতে যে ফুটবল তারা খেলল তা চিন্তায় রাখবে আইএসএলের বাকি দলগুলিকে।