ঘোড়ার গাড়িতে মহমেডানের ফুটবলারেরা। ছবি: টুইটার।
টানা তিন বার কলকাতা লিগ জয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রতিযোগিতায় মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের যে আধিপত্য ছিল তাতে ভাগ বসিয়েছে মহমেডান। ৮৭ বছর পর টানা তিন বার কলকাতা লিগ জিতেছে তারা। মোহনবাগানকে হারিয়ে যে জয় আসতে পারে, সেই সম্ভাবনা ছিলই। তাই প্রস্তুতি খামতে রাখেনি ক্লাব। ম্যাচ শেষের পর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে ক্লাব তাঁবুতে আনা হল ফুটবলারদের। পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
রেমসাঙ্গা এবং ডেভিড লালানসাঙ্গার গোলে শুক্রবার মোহনবাগানকে ২-০ হারিয়েছে মহমেডান। তবে গোটা মরসুম জুড়েই মহমেডানের আধিপত্য দেখা গিয়েছে। কলকাতা লিগের গ্রুপ পর্বে তো বটেই, সুপার সিক্সেও তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য।
এ দিন ম্যাচ শেষ হওয়ার পরেই ফুটবলাররা আনন্দে মেতে ওঠেন। মাঠেই চলতে থাকে উৎসব। সমর্থকেরাও এসেছিলেন তৈরি হয়েই। ফুটবলারদের প্রথমে বাসে করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তৈরি ছিল প্রচুর ঘোড়ার গাড়ি। সমর্থকেরাও জানতে পেরে ভিক্টোরিয়ার কাছে চলে এসেছিলেন।
সেখান থেকে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে ক্লাব তাঁবুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয়। গোটা রাস্তাতেই মহমেডানের ফুটবলারদের ঘিরে ছিলেন সমর্থকেরা। বাইক নিয়ে মহমেডানের সাদা-কালো পতাকা ওড়াতে ওড়াতে তাঁরা ক্লাব তাঁবুতে আসেন। সেখানেও এক প্রস্থ উৎসব চলে।
ম্যাচের পর কোচ আন্দ্রেই চের্নিশভ কোনও কৃতিত্ব নিতে চাননি। তিনি এগিয়ে নেন সহকারী কোচ শাহিদ রামনকে। চের্নিশভ বলেন, “আমি দেরি করে এখানে এসেছিলাম। তাই কলকাতা লিগ জয় নিয়ে কিছু বলব না। শাহিদ রামন শুরু থেকে ছিলেন। উনি জানেন কী ভাবে এই দল গড়ে তুলেছেন। ওঁকে ছাড়া কলকাতা লিগ জিততে পারতাম না।” রামন বলেন, “আমারও একার কোনও কৃতিত্ব নেই। দলটাই খুব ভাল। দলের প্রতিটা ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফ এই সাফল্যের পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।”
প্রসঙ্গত, কিছু দিন বিদেশ সফরে গিয়ে মহমেডানের জন্যে বিনিয়োগকারীর ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি দুবাই ও স্পেন সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুবাইয়ের ‘লুলু গ্রুপ’-এর সঙ্গে তখন কথাবার্তা বলেন মমতা। তাঁর কথায় মহমেডানের লগ্নিকারী হওয়ার ব্যাপারে এই সংস্থা রাজি হয়ে গিয়েছে বলেই খবর। চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি হতে চলেছে কয়েক দিনের মধ্যেই। তার পরেই সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন সংস্থার শীর্ষ কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রীর সফরে তিন প্রধানের শীর্ষ কর্তারাও গিয়েছিলেন। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ইতিমধ্যেই আইএসএল খেলছে। সবুজ-মেরুন গত বারের চ্যাম্পিয়ন। আইএসএলে টানা দু’বার কেউ চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ইস্টবেঙ্গল গত দু’বছরের ব্যর্থতা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ডুরান্ড ডার্বিতে মোহনবাগানকে হারিয়ে ফের মশাল জ্বালানোর সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। নতুন লগ্নিকারীর আগমন মহমেডানকেও যে চনমনে করে তুলেছে, তার প্রমাণ কলকাতা লিগ জয়েই।