লিয়োনেল মেসিকে জনসমক্ষে নিয়ে এল ইন্টার মায়ামি। ছবি: রয়টার্স।
প্রতীক্ষার অবসান। লিয়োনেল মেসিকে জনসমক্ষে নিয়ে এল ইন্টার মায়ামি। ভারতীয় সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থকদের সামনে মেসিকে হাজির করল আমেরিকার মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামি। শুক্রবার নতুন দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামতে পারেন তিনি।
ভারতীয় সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় সমর্থকদের সামনে মেসিকে আনার কথা ছিল। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরি হল। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে মেসি অবশ্য নির্দিষ্ট সময়েই চলে এসেছিলেন ফোর্ট লডারেবলে। গ্যালারিও ছিল ভর্তি। মাঠের মাঝখানে প্রস্তুত ছিল মেসি-বরণের মঞ্চ। বৃষ্টি থামার পর সব কিছু সাজিয়ে, গুছিয়ে নিয়ে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী অধিনায়ককে সকলের সামনে নিয়ে আসা হল নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক ১ ঘণ্টা ০৩ মিনিট পর। মঞ্চে আগে থেকেই ছিলেন ইন্টার মায়ামির সহ-সভাপতি ডেভিড বেকহ্যাম-সহ অন্য কর্তারা। মেসি প্রকাশ্যে আসতেই ইন্টার মায়ামি সমর্থকদের চিৎকার তাঁকে স্বাগত জানাল। আতস বাজির আলোয় ভরল ফ্লোরিডার এক খণ্ড আকাশ। পরে মঞ্চে নিয়ে আসা হয় তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে।
ইন্টার মায়ামির ঘরের মাঠ ফোর্ট লডারেবলে ২২ হাজার দর্শকের সামনে মেসির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল দলের অন্য ফুটবলারদের। ১৭ জুলাই ইন্টার মায়ামি বিশেষ সাংবাদিক বৈঠক করবে মেসিকে নিয়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে মেসির হাতে তুলে দেওয়া হল ক্লাবের জার্সি।
শনিবার এই ক্লাবের চুক্তিপত্রে সই করেছেন মেসি। সে দিনই ক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টার মায়ামি জানিয়েছে, মেসি তাঁর প্রিয় ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলবেন। সই পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর সমাজমাধ্যমে ইন্টার মায়ামি যে ভিডিয়ো দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে মেসির গায়ে ১০ নম্বর জার্সি। অর্থাৎ। ক্লাব ফুটবলে মেসি আবার ফিরে পেলেন তাঁর প্রিয় জার্সি নম্বর।
আর্জেন্টিনার হয়ে ১০ নম্বর জার্সি পরেই খেলেন মেসি। বার্সেলোনার হয়েও ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলতেন। কিন্তু প্যারিস সঁ জরমেঁ ১০ নম্বর জার্সি পাননি তিনি। তাঁর আগে নেমারকে ১০ নম্বর জার্সি দিয়ে দেওয়া হয়। তাই সেখানে ৩০ নম্বর জার্সি পরে খেলতে হত এলএম টেনকে।
ক্লাবের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে মেসির বিবৃতি। তাতে মেসি বলেছেন, ‘‘আমেরিকা এবং ইন্টার মায়ামিতে ফুটবলজীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করছি। দারুণ উত্তেজনা হচ্ছে। আমার কাছে এটা একটা দুর্দান্ত সুযোগ। সবাই মিলে এই সুন্দর প্রকল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এক সঙ্গে কাজ করে নতুন কিছু অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি আমরা। এটাই এখন আমার নতুন বাড়ি। সকলকে সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।’’ বেকহ্যাম জানিয়েছেন, ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেসির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মেসির। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘মেসির ইন্টার মায়ামিতে আসা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। ১০ বছর আগে আমি যখন মায়ামিতে নতুন ক্লাব নির্মাণের কাজ শুরু করি, তখন থেকেই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে দুর্দান্ত এই শহরে নিয়ে আসার স্বপ্ন ছিল আমার।’’
আক্ষরিক অর্থেই মায়ামি এখন মেসির ঘর হয়ে গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ফ্লোরিডার একটি শপিং মলে দেখা গিয়েছিল। নিজেই ট্রলি ঠেলে খাবারদাবার কিনছিলেন তিনি। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের এই রূপ দেখে চমকে গিয়েছিলেন সমর্থকেরা। মেসি যে নিজেই জিনিসপত্র কিনতে চলে আসবেন এ ভাবে, সেটা কেউই ভাবতে পারেননি। নিজেই ট্রলি ঠেলে ঠেলে জিনিসপত্র কিনতে থাকেন। ট্রলিতে রাখা জিনিস দেখে বোঝা গিয়েছিল সন্তানদের জন্যেই খাবার কিনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিছু ক্ষণ সেখানে কেনাকাটা করে মেসি বেরিয়ে যান।
মেসির মাপের কোনও ফুটবলার এর আগে ইন্টার মায়ামির জার্সি পরে খেলেননি। তাই মায়ামিতে অনেক দিন থেকেই উৎসবের আবহ। শহরের একটি বহুতলের দেওয়ালে আঁকা হয়েছে মেসির বিশালাকার ছবি। দেখা গিয়েছে, ক্রেনে উঠে সেই ছবিতে তুলির শেষ টান দিচ্ছেন বেকহ্যাম নিজে। মূলত তাঁর চেষ্টাতেই প্যারিস সঁ জরমঁ ছেড়ে আমেরিকার ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক।
বেকহ্যামের স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো দিয়েছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে শিল্পীরা ক্রেনে চড়ে মেসির বিশালাকার হাসি মুখের ছবির দাঁতের অংশ রং করছেন। সেই কাজের তদারকি করছেন বেকহ্যাম নিজে। পরে ক্রেনে উঠে বেকহ্যাম নিজেও রং করার কাজে হাত দেন। ভিক্টোরিয়া বলেছিলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে আমরা মায়ামিতে এসেছি। আমার মনে হয় ডেভিড দারুণ একটা কাজ করেছে। এখানে এসেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। দেখুন, এটা (মেসির ছবি) কী বিশাল। এমন কী কোনও কাজ রয়েছে, যেটা ডেভিড করতে পারে না। রং করার জন্য ক্রেনেও উঠেছে। যে ব্যক্তি মেসির দাঁতে রং করছিলেন, সেটাই ডেভিড। আমি অভিভূত।’’
বেকহ্যামের স্ত্রী ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো দিয়েছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে শিল্পীরা ক্রেনে চড়ে মেসির বিশালাকার হাসি মুখের ছবির দাঁতের অংশ রং করছেন। সেই কাজের তদারকি করছেন বেকহ্যাম নিজে। পরে ক্রেনে উঠে বেকহ্যাম নিজেও রং করার কাজে হাত দেন। ভিক্টোরিয়া বলেছিলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে আমরা মায়ামিতে এসেছি। আমার মনে হয় ডেভিড দারুণ একটা কাজ করেছে। এখানে এসেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। দেখুন, এটা (মেসির ছবি) কী বিশাল। এমন কী কোনও কাজ রয়েছে, যেটা ডেভিড করতে পারে না। রং করার জন্য ক্রেনেও উঠেছে। যে ব্যক্তি মেসির দাঁতে রং করছিলেন, সেটাই ডেভিড। আমি অভিভূত।’’
আগামী শুক্রবার ইন্টার মায়ামির হয়ে প্রথম মাঠে নামতে পারেন মেসি। লিগ কাপের ম্যাচে খেলতে পারেন ক্রুজ আজ়ুলের বিরুদ্ধে। যদিও মায়ামি দলের সঙ্গে এখনও অনুশীলন শুরু করেননি মেসি। গত মঙ্গলবার মেসি দক্ষিণ ফ্লোরিডায় পৌঁছানোর পর বুধবার তাঁর বিভিন্ন রকম শারীরিক পরীক্ষা হয়।
আমেরিকার লিগে ইন্টার মায়ামি অবশ্য একেবারেই ভাল জায়গায় নেই। তারা ২২টি ম্যাচ খেলে জিতেছে মাত্র পাঁচটি, হেরেছে ১৪টি। মোট ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার নীচে রয়েছে তারা। মেসির হাত ধরে মায়ামি ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার।