ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ছবি: রয়টার্স।
সাজঘরে ফুটবলারদের অসন্তোষ, দলের খেলার কৌশলে সমর্থকদের চিন্তা, দলের কিছু ফুটবলারের উদ্দেশে কোচের খারাপ ব্যবহার, এর সঙ্গেই রয়েছে সাম্প্রতিক কালে দলের খারাপ ফলাফল এবং ক্লাবের মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি টালমাটাল অবস্থা। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না। এরিক টেন হ্যাগের আমলে সাম্প্রতিক এই ঘটনা মনে করিয়ে দিয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ক্লাব ছাড়ার সময় এবং দলের আগের দুই কোচের শেষ সময়কালকে। ওলে গুন্নার সোলজ়ায়ের এবং হোসে মোরিনহোর কোচিংয়ের শেষ পর্বেও এ ধরনের টালমাটাল অবস্থা দেখা গিয়েছিল। ২০১৯ এবং ২০২১-এর শেষের দিকে দু’জনকেই বরখাস্ত করা হয়। টেন হ্যাগের ক্ষেত্রেও কি তেমনই দেখা যাবে? ম্যাঞ্চেস্টারের কোচ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিতর্ক থামছে না।
তবে ম্যান ইউ আগের বার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কিছুটা অন্য পথে হাঁটার চেষ্টা করছে। গত ৪ ডিসেম্বর, অর্থাৎ চেলসির বিরুদ্ধে ম্যাচের দিন দুয়েক আগে ক্লাবের তরফে চারটি সংবাদমাধ্যমকে নির্বাসিত করা হয়েছে। ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় টেন হ্যাগের কোনও সাংবাদিক বৈঠকে থাকতে পারবেন না তাঁরা। কিন্তু কী এমন হয়েছিল যে সংবাদমাধ্যমকেই নির্বাসিত করা হল? বিশেষত যখন এমন পদক্ষেপ আগে কোনও দিন করা হয়নি?
৫ ডিসেম্বর ‘ম্যাঞ্চেস্টার ইভনিং নিউজ়’-এর স্যামুয়েল লাকহার্স্ট এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) জানান যে, তাঁর সংস্থাকে ম্যান ইউয়ের প্রাক্-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। আরও তিন সংস্থার বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্যামুয়েল জানান, সাজঘরে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে ম্যান ইউ বিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘ম্যাঞ্চেস্টার ইভনিং নিউজ়’ ম্যাঞ্চেস্টার শহরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যম। ম্যান ইউ এবং ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, দুই ক্লাবের সম্পর্কেই খবর জানায় তারা। সেখানেই লেখা হয়, টেন হ্যাগের রণকৌশল এবং কোচ থাকাকালীন কিছু ফুটবলারের সই করানো প্রসঙ্গে তাঁকে ফুটবলারদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে।
আর এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘স্কাই স্পোর্টস’-এও একই ধরনের খবর প্রকাশ করা হয়। তারা জানায়, সাজঘরের অন্তত ৫০ শতাংশ ফুটবলারের আস্থা হারিয়েছেন টেন হ্যাগ। বলা হয়, যে দিকে ক্লাব এগিয়ে চলেছে তা নিয়ে চিন্তায় অনেক ফুটবলার। তাঁর কৌশল নাকি খুবই কঠোর এবং পুরনো। অনুশীলনে ফুটবলারদের দিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করান। বিশেষত জেডন স্যাঞ্চোকে নিয়ে টেন হ্যাগের আচরণে অনেকেই বিরক্ত। স্যাঞ্চোকে কেন প্রথম একাদশে নেওয়া হচ্ছে না এবং কেন তাঁকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে অনূর্ধ্ব-২১ দলের সঙ্গে অনুশীলন করানো হচ্ছে, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন স্যাঞ্চো। আর্সেনালের বিরুদ্ধে স্যাঞ্চোকে না নেওয়ার কারণ হিসাবে টেন হ্যাগ যে যুক্তি দিয়েছিলেন তার স্পষ্ট বিরোধিতা করেছেন তিনি।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সময়ের ঘটনা। গত বছর রোনাল্ডো ম্যান ইউ ছাড়ার সময়েও এ ভাবেই দায়ী করেছিলেন টেন হ্যাগকে। সেই সময় রোনাল্ডোকে হয় একের পর এক ম্যাচে বসিয়ে রাখা হচ্ছিল, না হয় কোনও ম্যাচে একদম শেষের দিকে নামানো হচ্ছিল, যখন তাঁর আর কিছু করার নেই। স্যাঞ্চোর ঘটনাকে সেই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন।
নেদারল্যান্ডস-জাত কোচ টেন হ্যাগ স্বাভাবিক ভাবেই এত সব অভিযোগ মানতে চাননি। চেলসি ম্যাচের আগে সাজঘরে অসন্তোষের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, “আমরা একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। জানি যে কী ভাবে এই রূপান্তর হবে। আমরা সঠিক দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। একটা দল তৈরি করে সেটা উন্নত করার চেষ্টা করছি। দল এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ ফুটবলারেরা আসছে। তাদের প্রতিভা এবং এই দলে তারা কতটা অবদান রাখতে পারে সেটা সবাই দেখতে পাচ্ছেন।”
ইপিএলে এই মুহূর্তে সাত নম্বরে রয়েছে। ১৪ ম্যাচে তাদের ২৬ পয়েন্ট। ৮টি ম্যাচ জিতেছে তারা। তবে শীর্ষস্থানে থাকা আর্সেনালের থেকে তাদের ১০ পয়েন্টের পার্থক্য। তবে নিউক্যাসলের কাছে হারের পর টেন হ্যাগের উপর চাপ আরও বেড়েছে। টেন হ্যাগ বলেছেন, “হয়তো একটা সপ্তাহে আমরা ভাল খেলব, একটা সপ্তাহ খারাপ যাবে। নিউক্যাসলের বিরুদ্ধে আমরা ভাল খেলিনি। এ ধরনের পারফরম্যান্সে আমরা খুশি নই। তা সত্ত্বেও বলব, ম্যাচে সব সময়েই আমরা ছিলাম। পয়েন্ট আদায় করার জন্যে দুটো ভাল সুযোগ পেয়েছিলাম। দল সঠিক পথেই এগোচ্ছে। ভাল ফুটবল খেলছি।”
দলের ফুটবলারদের তাঁর প্রতি আস্থা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে টেন হ্যাগ বলেছেন, “অবশ্যই। আমি নিশ্চিত। ব্রেন্টফোর্ডের বিরুদ্ধে আপনারা দেখেছেন আমরা কী ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। বার্নলি ম্যাচ, ফুলহ্যাম ম্যাচ, আর কত বলব। দল মাঠে নামলেই ভাল খেলছে। আমি ফুটবলারদের কথা শুনি। ওদের যথাযথ সুযোগ দিই। যদি ওদের আলাদা কোনও মত থাকে সেটাও শুনি।”