শেষ মুহূর্তে গোলের উচ্ছ্বাস মোহনবাগান ফুটবলারের। ছবি: ফেসবুক।
মোহনবাগান - ২
ওড়িশা এফসি - ২
এএফসি কাপে হারের বদলা নেওয়া হল না মোহনবাগানের। তবে শেষ মুহূর্তে সাদিকুর গোলে ২-২ গোলে ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচ ড্র করল সবুজ মেরুন শিবির। এ দিনের জোড়া গোল করলেন তিনি। ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পরেও শেষ পর্যন্ত হাল না ছাড়ার পুরস্কার পেল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। আইএসএলের ষষ্ঠ ম্যাচেও অপরাজিত থাকল জুয়ান ফেরান্দোর দল। এ দিনের ড্রয়ের ফলে ৬ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকল মোহনবাগান।
বুধবার যুবভারতীতে শুরুটা খারাপ করেনি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ম্যাচের ৪ মিনিটে কিয়ান নাসিরি ডান দিক দিয়ে দ্রুত গতিতে উঠে আসেন ওড়িশার বক্সে। কিন্তু প্রতিপক্ষের এক ফুটবলারের গায়ে লেগে বল বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটেই আর্মান্দো সাদিকু ৩০ গজ দূর থেকে শট মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। ২ মিনিট পরেই বাঁ প্রান্ত দিয়ে উঠে আসা লিস্টন কোলাসোকে ফাউল করে থামাতে বাধ্য হন ওড়িশার নরেন্দর। তাঁকে হলুদ কার্ডও দেখতে হয়। মোহনবাগানের আগ্রাসী ফুটবলের সামনে শুরুতে বেশ গুটিয়ে ছিল ওড়িশা। তাদের রক্ষণও ভুল করতে শুরু করে। কিন্তু সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে পারেননি সবুজ-মেরুন ফুটবলারেরা।
মিনিট ২০ সবুজ-মেরুন ঝড় সামলানোর পর ধীরে ধীরে খেলায় ফেরে ওড়িশা এফসি। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন সার্জিয়ো লোবেরোর ছেলেরা। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে খেলা জমে ওঠার সময়ই বড় ভুল করে বসলেন শুভাশিস বসু। মোহন ডিফেন্ডার বক্সের মধ্যে বলে হাত লাগিয়ে ফেলায় পেনাল্টি পায় ওড়িশা। ৩১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ওড়িশাকে এগিয়ে দেন আহমেদ। বিশাল কাইত উল্টো দিকে ঝাঁপানোয় বলের নাগাল পাননি।
০-১ গোলে পিছিয়ে গিয়ে চাপে পড়ে যায় মোহনবাগান। ফলে ক্রমশ খেলার রাশ নিতে শুরু করেন ওড়িশার ফুটবলারেরা। যদিও ৩৫ মিনিটে বক্সের মধ্যে জেমস কামিন্সকে ফাউল করেন ওড়িশার এক ফুটবলার। মোহনবাগান পেনাল্টি পেতেই পারত। রেফারি দেননি। ওড়িশার গোলদাতা আহমেদের ভুলের সুযোগে ৩৮ মিনিটে সমতা ফেরাতে পারত মোহনবাগান। কিন্তু সুযোগ নষ্ট করেন ফেরান্দোর ছেলেরা। সেই আহমেদই প্রথমার্ধের ৪৮ মিনিটে (সংযুক্ত সময়) আবদুল সামাদ সাহালের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্বিতীয় গোল করে ওড়িশাকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে গোল করার আরও একটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন কোলাসো, কামিংসেরা।
০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা মোহনবাগানকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছুটা ছন্নছাড়া দেখাল। ৪৮ মিনিটে বক্সের মধ্যে হামতে বল তুলে দেন ওড়িশার এক ফুটবলারের পায়ে। সবুজ-মেরুন শিবিরের ভাগ্য ভাল থাকায় গোল হয়নি। হলে ০-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ত আইএসএলের প্রথম পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত থাকা কলকাতা ময়দানের অন্যতম প্রধান। ৫২ মিনিটে গোল করার অত্যন্ত সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন সাদিকু। সবুজ-মেরুন ফুটবলারেরা যেন এ দিন মাঠে নেমেছিলেন সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনী করতে! শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ৫৮ মিনিটে ব্যবধান কমায় মোহনবাগান। দলগত প্রচেষ্টায় এল গোল।
বক্সের বাইরে থেকে চিপ করেন হেক্টর। কর্নার লাইনের কাছ থেকে কিয়ান বক্সে পাস দেন সাদিকুকে। এ বার আর গোল করতে ভুল করেননি তিনি। ব্যবধান কমানোর পর আক্রমণের ঝাঁঝ বৃদ্ধির চেষ্টা করেন মোহনবাগান ফুটবলারেরা। বল ধরে, আরও বেশি পাস দিয়ে খেলার চেষ্টা করেন কোলাসোরা। ৭২ মিনিটে আরও একটি ভাল সুযোগ তৈরি করে দেন কিয়ান। তবে কাজে লাগাতে পারেননি সাদিকু। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কৃতিত্ব দিয়ে হবে ওড়িশার গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহকে। ৮৪ মিনিটে আরও একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে মোহনবাগান। ম্যাচের ৯০ মিনিটে তৃতীয় গোল পেতে পারল ওড়িশা। সঠিক সময় গোললাইন ছেড়ে এগিয়ে এসে পতন রোখেন কাইত। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল না ছাড়ার পুরস্কার পেল মোহনবাগান। ৯৪ মিনিটে হেক্টরের হেডটা সাদিকুর পায়ে পড়ে। অমরিন্দরের দু'পায়ের মাঝখান থেকে দুর্দান্ত টাচে গোল করেন তিনি। তারপরই জামা খুলে ফেলেন। এই গোলেই হার বাঁচাল মোহনবাগান।
এ দিনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অনিরুদ্ধ থাপা, হুগো বোমাস, গ্লেন-সহ মোহনবাগানের চার জন ফুটবলার চোট পেয়েছেন। যা সবুজ-মেরুন কোচ ফেরান্দোর চিন্তা বৃদ্ধি করতে পারে।