প্যারিসে গিয়ে ব্যথিত মেসি ছবি রয়টার্স
স্পেনের ক্লাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১১ বছর বয়সে। বার্সেলোনা ছেড়ে গত বছরই প্যারিস সঁ জঁ-য় (পিএসজি) যোগ দিয়েছেন লিয়োনেল মেসি। দীর্ঘদিনের সেই সম্পর্কের সাময়িক বিচ্ছেদ হয়েছে। সাময়িক, কারণ, এর আগে মেসি বলেছিলেন, তিনি কোনও একটা সময়ে বার্সেলোনায় ফিরতে চান। ঘটনাচক্রে, গত ন’টা মাস যে ভাবে কেটেছে, তাতে নতুন শহরে মন বসছে না তাঁর। কারণ, এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন মেসি, যা বার্সেলোনায় ২২ বছর থাকাকালীন দেখেননি। সেটাই সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে আর্জেন্টিনা তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে।
প্যারিসে কেন মন বসছে না মেসির?
তিনি ব্যথিত প্যারিসের মানুষের আচরণে। তাঁকে সই করানোর সময়ে যে শহর উত্তাল হয়ে উঠেছিল, সেই শহরের সমর্থকরাই দু’-একটি ম্যাচে খারাপ খেলার কারণে তাঁকে ব্যঙ্গাত্মক শিস দিতে ছাড়েননি। তাঁকে কটাক্ষ করেছেন। সেই ঘটনা স্টেডিয়ামে বসে দেখতে হয়েছে মেসির স্ত্রী-সন্তানদের। অভিমানী মেসি আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “কোনও দিন চাইনি যে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা স্টেডিয়ামে বসে শুনতে পাক, আমাকে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। চাইনি আমার সন্তানদের এমন অভিজ্ঞতা হোক। বার্সেলোনায় থাকাকালীন কেউ কোনও দিন আমাকে লক্ষ্য করে এ ভাবে শিস দেয়নি। তাই প্যারিসের অভিজ্ঞতাটা আমার কাছে একেবারেই নতুন ছিল।”
তবে সমর্থকদের রাগের কারণও বুঝতে পারছেন মেসি। চলতি মরসুমে ঘরোয়া খেতাব ‘লিগ ওয়ান’ এবং ‘ক্যুপ দ্য ফ্রাঁস’ ছাড়া আর কিছুই জিততে পারেনি পিএসজি। বছরে প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা দিয়ে গত মরসুমের শুরুতে তাঁকে কিনেছিল প্যারিসের এই ক্লাব। একটাই লক্ষ্য ছিল, এখনও পর্যন্ত অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেতাব জেতাবেন বার্সেলোনার প্রাক্তন অধিনায়ক। কিন্তু সেই স্বপ্ন সফল হয়নি এ বার। শেষ ষোলোয় পৌঁছেও রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে ছিটকে যায় পিএসজি। নেমারের পর মেসিও প্যারিসের স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সমর্থকরা ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি। তবে মেসি বেশি ব্যথিত এটা দেখে যে, দিনের পর দিন শুধু তাঁকে এবং নেমারকেই আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, “সমর্থকদের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। ওদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু কেন আমাকে এবং নেমারকেই শুধু আক্রমণের শিকার হতে হবে?”
সমর্থকদের মতো রিয়ালের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হার যে তাঁকেও কুরে-কুরে খাচ্ছে, সেটা মেসির কথায় ধরা পড়েছে। স্প্যানিশ লিগে খেলার সুবাদে দীর্ঘদিন রিয়ালকে চেনেন তিনি। কিন্তু রিয়ালের বিরুদ্ধে ম্যাচে বিশেষ কিছুই করতে পারেননি। সেই হারের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মেসি বলেছেন, “রিয়ালের কাছে হার আমাদের মৃতপ্রায় করে দিয়েছিল। গোটা ড্রেসিংরুমের অবস্থাই ভয়ানক ছিল। আমরা মনেপ্রাণে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু লক্ষ্যপূরণ হয়নি।” তবে মেসি আত্মবিশ্বাসী যে, পরের মরসুমে পিএসজি-র হয়ে আরও ভাল খেলবেন।
তবে নতুন ক্লাবে নিরাশার মাঝেও কিছুটা খুশির রেখা দেখা গিয়েছে মেসির মুখে। তিনি খুশি করিম বেঞ্জেমাকে নিয়ে। বার্সেলোনায় থাকাকালীন রিয়াল ছিল তাঁর চিরশত্রু। কিন্তু বেঞ্জেমার সঙ্গে সম্পর্ক ভালই ছিল। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন সেই ফরাসি স্ট্রাইকারই। মেসি মনে করছেন, এ বার তাঁর থেকে বালঁ দ্য র খেতাব কেড়ে নিতে পারেন বেঞ্জেমা। বলেছেন, “এই বছরটা যে বেঞ্জেমার কাছে অসাধারণ গিয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে প্রতিটা ম্যাচে ভাল খেলেছে। খেতাবও জিতেছে। তাই আমার কোনও সন্দেহ নেই যে, বালঁ দ্যর খেতাব জেতার যোগ্য ও-ই।”
ক্লাবের হয়ে ভাবনাচিন্তা আপাতত সরিয়ে রেখে মেসি এখন কিছুদিন ব্যস্ত দেশকে নিয়ে। ১ জুন, বুধবার লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরো কাপজয়ী ইটালির মুখোমুখি হবে কোপা আমেরিকা বিজয়ী আর্জেন্টিনা। দুই মহাদেশের দুই সেরা দলের মধ্যে এই ম্যাচের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফাইনালিসিমা’, যা এ বারই প্রথম শুরু হচ্ছে।
তবে ইটালিকে এ বছর বিশ্বকাপে দেখতে পাওয়া যাবে না। পর্তুগালের কাছে প্লে-অফে হেরে তারা কাতারের টিকিট পায়নি। ইটালির এই ব্যর্থতায় মেসি কিছুটা অবাক। বলেছেন, “ইউরো জেতার পর ওরা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারল না দেখে আমি অবাকই হয়েছি। বিশ্বকাপে ইটালির ইতিহাস একবার দেখুন। ওরা বিশ্বকাপে গেলে নিঃসন্দেহে খেতাবের অন্যতম দাবিদার হত। কেউ ইটালির বিরুদ্ধে খেলতে চাইত না। কিন্তু ফুটবলটা এ রকমই। অপ্রত্যাশিত ঘটনা এখানে ঘটা খুবই স্বাভাবিক।”