ISL 2022-23

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাঝেই শহরে ফুটবল-জ্বর, কলকাতা ডার্বি ঘিরে উত্তেজনা চরমে

মাস দেড়েক আগে ডুরান্ড কাপেও ডার্বি দেখেছে জনতা। তখনও উন্মাদনা ছিল। তা এক লাফে অনেকটা বাড়ল আইএসএলের ডার্বিতে। দু’ঘণ্টা আগেই স্টেডিয়ামের বাইরে জমাট ভিড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ১৯:২৮
Share:

যুবভারতীর গেটের সামনে হাজির কাতারে কাতারে জনতা। ডার্বি ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে। ছবি: টুইটার

ঘড়ির কাঁটা তখনও সন্ধে ৬টা পেরোয়নি। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের মূল গেটের সামনে এলে সেটা বোঝা যাবে না। মনে হবে, আর কয়েক মিনিট পরেই বোধহয় কলকাতা ডার্বি শুরু হতে চলেছে। থিকথিক করছে ভিড়। উপস্থিত জনা পঞ্চাশ পুলিশকর্মী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

Advertisement

আর একটু এগিয়ে বেলেঘাটা বিল্ডিং মোড়ের সামনে দেখা গেল আরও বেশি উন্মাদনা। দীর্ঘ ক্ষণ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে হর্ন দিচ্ছেন অফিসফেরত মাঝবয়সি এক যুবক। সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস, “উফ! অফিস থেকে ফেরার সময়েই খেলাগুলো রাখতে হয়।” বোঝা গেল তিনি ক্রীড়াপ্রেমী নন। কিন্তু যাঁরা খেলা ভালবাসেন, বিশেষত ফুটবলকে, তাঁরা এই ম্যাচ থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন কী করে। ঘড়ির কাঁটা ৭.৩০ হওয়ার অনেক আগে থেকেই গোটা শহর তাই স্টেডিয়ামমুখী। বাইপাসে আছড়ে পড়ল ভিড়। আইএসএলে যুবভারতীতে প্রথম কলকাতা ডার্বি বলে কথা! ম্যাচ অবশ্য শুরু হল দেরিতে। আগের ম্যাচে ফ্লাডলাইট বিভ্রাটের কারণে ২০ মিনিট পরে শুরু করা হল ম্যাচ। তার আগেই স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ।

ম্যাচ ২০ মিনিট দেরিতে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হায়দরাবাদ বনাম গোয়া ম্যাচে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। দেরিতে শেষ হয়েছে সেই ম্যাচ। খেলা ছিল কলকাতা থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে হায়দরাবাদে। এই ম্যাচ দেরিতে শুরু হওয়ায় কলকাতা ডার্বিও শুরু হতে কিছুটা বেশি সময় নেবে। সম্প্রচারের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত।

Advertisement

মাস দেড়েক আগে ডুরান্ড কাপেও ডার্বি দেখেছে জনতা। তখনও উন্মাদনা ছিল। টিকিটের হাহাকার ছিল। কিন্তু আয়োজকদের তরফে কোথাও একটা খামতিও ছিল। এই ধরনের ম্যাচকে যতটা বড় ভাবে প্রচার করা দরকার, ততটা হয়নি। আইএসএল সেই আক্ষেপ মিটিয়ে দিয়েছে। টিকিট বিক্রি থেকে ব্যবস্থাপনা, সবই হয়েছে সুষ্ঠু ভাবে। যুবভারতীতে ঢুকে চেনাই যাচ্ছিল। এক দিকে প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, হুগো বুমোসদের কাটআউট। আর এক দিকে রয়েছে ক্লেটন সিলভা, শৌভিক চক্রবর্তী, সেমবোই হাওকিপরা। সঙ্গে স্টেডিয়ামের বাইরে লেজ়‌ার শো।

রমরমিয়ে চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভারতের ম্যাচ আগামী কালই। কিন্তু যুবভারতীর সামনে এলে সেটা বোঝা যাবে না। প্রশ্নটা করা গেল দমদম থেকে আসা ইস্টবেঙ্গল সমর্থক অমিত করকে। তিনি ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন, “আরে আমরা ফুটবল ভালবাসি। ও সব ক্রিকেট ম্যাচ যতই থাক, আমার কাছে ফুটবলই আসল। শহর বা দেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, ডার্বির দিনটায় স্টেডিয়ামে হাজির হই। ক্রিকেট কাল দেখব, আজ তো ফুটবলের স্বাদ নিই।”

স্টেডিয়ামের বাইরে লাল-হলুদ সমর্থকদের উন্মাদনা। ম্যাচের অনেক আগে থেকেই মাঠ ভরালেন তাঁরা। ছবি: টুইটার

গড়িয়া থেকে আসা মোহনবাগান সমর্থক সন্দীপ দত্তের মুখেও একই সুর। বললেন, “ক্রিকেট তো সারা বছর দেখি। কলকাতা ডার্বি বছরে দু’-তিন বার আসে। এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকব না তো কোন ম্যাচ দেখব? যুবভারতীতে প্রথম বার আইএসএল ডার্বি। আগের দু’বছর আইএসএলের ডার্বি দেখতে পারিনি। এ বার সব সুদে-আসলে তুলে নেব।” বোঝা গেল, মাঠে যতই শত্রুতা থাক, ক্রিকেটের সঙ্গে তুলনায় এক মেরুতে দুই প্রধানের সমর্থক।

সম্প্রতি মোহনবাগানের নামের সামনে থেকে ‘এটিকে’ সরানোর জন্য সোচ্চার হয়েছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। সমাজমাধ্যম তো বটেই, রাস্তায় নেমে আন্দোলন হয়েছে। অথচ সবার আগে এটিকে মোহনবাগানই ঘোষণা করেছে, তাদের সব টিকিট শেষ। তা হলে আন্দোলন কি শেষ হয়ে গেল? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক মোহনবাগান সমর্থক বললেন, “আন্দোলন আন্দোলনের জায়গায়। কিন্তু মাঠে বুমোস, কাউকোরা যে জার্সি পরে খেলবে, সেটার রং তো সবুজ-মেরুন। ওটা দেখতেই এসেছি। ম্যাচটা জিতি। তার পরেই আবার নিজেদের দাবিতে সোচ্চার হব।”

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা অবশ্য এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। অমিত তো বলেই ফেললেন, “মোহনবাগান নয়, ওটা এটিকে খেলছে। আমরা আজ এটিকে-কে হারাতে চাই। আমরাই সবচেয়ে পুরনো ক্লাব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement