হ্যাটট্রিক করে নায়ক কিয়ান। ছবি টুইটার
কলকাতা ডার্বি বরাবরই নতুন তারকার জন্ম দেয়। যুগে যুগে এই ম্যাচ থেকে উঠে এসেছেন একের পর এক তারকা। শনিবার সেই তালিকায় যোগ হল আরও একটি নাম— কিয়ান নাসিরি। সম্পর্কে যিনি প্রাক্তন ফুটবলার জামশিদ নাসিরির পুত্র। অতীতে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে একাধিক ডার্বি জিতিয়েছেন জামশিদ। কিন্তু শনিবার তাঁর ছেলে যে দলের জার্সি গায়ে নেমেছিলেন, সেই জার্সি কোনও দিনও পরেননি জামশিদ। তবে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে সুখী পিতা হয়তো তিনিই।
শনিবার ৬১ মিনিটে দীপক টাংরির পরিবর্তে নেমেছিলেন তিনি। হাতে ছিল মাত্র ২৯ মিনিট। কিন্তু ডার্বিতে নায়ক হয়ে ওঠার জন্য এই সময়টাই বা কম কী! প্রথমে হুগো বুমোসের বাড়ানো একটি বল ধরতে পারেননি। কিন্তু নিজের প্রথম টাচেই গোল করে ম্যাচে সমতা ফিরিয়েছিলেন। বাকি যে দু’টি গোল করেছেন, তার কোনওটাই নিজের প্রচেষ্টায় নয়। কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থেকে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন, যে কাজের জন্য তাঁকে মাঠে নামিয়ে ছিলেন এটিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো।
১৯৭৯ সালে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ভারতে চলে এসেছিলেন জামশিদ। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সহপাঠী মজিদ বেশকর এবং মাহমুদ খোব্বাসি। তিন জনই অল্পবিস্তর ফুটবল খেলতেন। কিন্তু মজিদ এবং জামশিদ অচিরেই কলকাতা ময়দানের নায়ক হয়ে ওঠেন। তবে ধারে-ভারে এবং প্রতিভায় জামশিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন মজিদ। যদিও জীবনযাপন অনেক বেশি ভাল ছিল জামশিদের।
কিয়ানের ফুটবল খেলা শুরু বাবাকে দেখেই। সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেছেন। ২০১৪ সালে কল্যাণীতে প্রথম বার বাংলার অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ডাক পান। অনুশীলন করেছেন মোহনবাগান অ্যাকাডেমিতে। নজর কেড়েছিলেন তৎকালীন যুব দলের কোচ বিবিয়ান ফের্নান্দেসের। বাংলার সেই ক্যাম্পে পাঁচটি ম্যাচে ছ’টি গোল করেন। এর পর মহমেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ আই লিগে খেলেছিলেন। ২০১৭-১৮ মরসুমে ক্যালকাটা ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন। কলকাতা লিগের নীচের ডিভিশনে খেলে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন এবং পরের রাউন্ডে উঠতে সাহায্য করেন।
২০১৯ সালে একটি টিভি চ্যানেল আয়োজিত ফুটবল লিগে অংশ নিয়েছিল মোহনবাগানের অনূর্ধ্ব-১৯ দল। সেই দলে যোগ দেন কিয়ান। এর পরেই ডাক পান সিনিয়র দলে। সেই বছরই গোয়ায় প্রাক-মরসুম প্রস্তুতির সময় মোহনবাগানের তৎকালীন কোচ কিবু ভিকুনা কিয়ানের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে সিনিয়র দলের পাকাপাকি সদস্য করে দেন। আই লিগে ২০২০-র ১ মার্চ ট্রাউ এফসি-র বিরুদ্ধে পরিবর্ত হিসেবে প্রথম বার মাঠে নামা কিয়ানের। এরপর এটিকে-র সঙ্গে মোহনবাগান যুক্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনি ক্লাবের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সই করেন। গত বছর এএফসি কাপে উজবেকিস্তানের নাসাফের বিরুদ্ধে প্রথম বার সবুজ-মেরুন জার্সিতে মাঠে নামেন তিনি।
এ বারের আইএসএল-এ এর আগে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। তা-ও মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। কিন্তু শনিবারের কলকাতা ডার্বি যেন তাঁর নামেই লেখা ছিল। ৬১ মিনিটে নেমে তিন-তিনটে গোল তাঁকে তুলে নিয়ে গেল অন্য পর্যায়ে।
বাবা খ্যতনামী হওয়ায় ছেলের সঙ্গে তুলনা তো চলেই আসে। এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসঙ্গে কিয়ান বলেছিলেন, “প্রত্যেকে আশা করে আমি ভাল খেলি। কারণ, সবাই আমার বাবাকে চেনে। আমি এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। মাঝে মাঝেই বাবার সঙ্গে তুলনা এবং সমালোচনা আমাকে সাহায্য করে। তখন বুঝতে পারি, আমার কোথায় কোথায় উন্নতি করার জায়গা রয়েছে।”
শনিবারের ম্যাচের পর বলে দেওয়াই যায়, বাবার সুযোগ্য পুত্র হয়ে উঠতে পেরেছেন কিয়ান।