হ্যাটট্রিক কিয়ানের। ছবি টুইটার
অতীতে বহু কলকাতা ডার্বিতে খেলেছেন জামশিদ নাসিরি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দলকেও জিতিয়েছেন। কিন্তু কোনওদিন কি তিনি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁর ছেলেও এক দিন ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা ম্যাচে এ ভাবে নায়ক হয়ে উঠবেন? তা-ও আবার এমন একটি দলের হয়ে যে দলের জার্সি তিনি কোনওদিন গলাননি?
শনিবারের কলকাতা ডার্বি লেখা থাকল জামশিদ-পুত্রের নামেই। একটা, দুটো নয়, একেবারে তিন-তিনটে গোল করে এটিকে মোহনবাগানকে জিতিয়ে দিলেন তিনি। তাও আবার এমন একটা ম্যাচে, যেখানে সবুজ-মেরুন হেরে গেলেও কিছু বলার ছিল না। ৬১ মিনিটে নেমে হ্যাটট্রিক করে লাল-হলুদ মশাল নিভিয়ে দিলেন একাই।
কলকাতা ডার্বির শুরু হওয়ার আগে এসসি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মনে একটাই প্রার্থনা ছিল, দল যেন বেশি গোল না খায়। মরসুমের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে ২২ মিনিটেই তিন গোল খেয়েছিল লাল-হলুদ। শনিবার যেন সে রকম কিছু না হয়, সেটাই চাইছিলেন সমর্থকরা। প্রথমার্ধে অন্য এসসি ইস্টবেঙ্গলকে দেখা গেল। রক্ষণের দিক থেকে মজবুত। পাশাপাশি আক্রমণও চলছে সমানতালে। পাঁচ মিনিটের মাথায় আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচের একটা গড়ানো শট ছিল। ১২ মিনিটের মাথায় ধাক্কা খেয়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু অমরজিৎ সিংহ কিয়াম নেমে দ্রুত মানিয়ে নিলেন। ফলে এটিকে মোহনবাগান ফুটবলাররা গোলমুখ খুলতে পারছিলেন না। হীরা মণ্ডল তো ছিলেনই।
১৫ মিনিটেই একটা দারুণ সুযোগ এসেছিল নাওরেম মহেশের কাছে। হালকা একটি বল পেয়ে দূর থেকে বাঁ পায়ে শট নিয়েছিলেন। বল পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। তা লক্ষ্যে থাকলে গোল হতেই পারত। মিনিট দশেক পরেই দুর্দান্ত সুযোগ এসে গিয়েছিল মার্সেলোর কাছে। তিরির ব্যাক হেড ধরতে পারেননি শুভাশিস। তা যায় মার্সেলোর কাছে। সামনে একা গোলকিপার ছিলেন। কিন্তু মার্সেলোর নীচু শট গোলের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই গোল পেয়ে গেলে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী হতে পারত লাল-হলুদ। প্রথমার্ধ শেষের আগে একটি হেডও করেছিলেন মার্সেলো। কিন্তু সেটিও বাঁচিয়ে দেন অমরিন্দর।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হঠাৎই দেখা যাচ্ছিলেন এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণের পুরনো ঝাঁজ। শুরুতেই লিস্টনের একটি বাঁকানো শট বারে লেগে উপর দিয়ে উড়ে যায়। এরপরেই এগিয়ে যায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। পেরোসেভিচ বাঁ দিক থেকে ভেতরে ঢুকে শট নিয়েছিলেন। দুর্দান্ত বাঁচান অমরিন্দর। সেই কর্নার থেকেই গোল করে লাল-হলুদকে এগিয়ে দেন এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। তবে সমতা ফেরাতে বেশি সময় নেয়নি এটিকে মোহনবাগান। গোল খাওয়ার পরেই কিয়ান নাসিরিকে নামান জুয়ান ফেরান্দো। প্রথম টাচেই সমতা ফেরান জামশেদ নাসিরির পুত্র। তবে গোলের পিছনে অন্যতম ভূমিকা লিস্টনেরই। তিনিই গোলের পটভূমি তৈরি করেছিলেন। পরের মিনিটেই পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। বক্সের মধ্যে লিস্টনকে ফাউল করেছিলেন অমরজিৎ। কিন্তু পেনাল্টি স্পট থেকে বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ডেভিড উইলিয়ামস।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। মহেশের পাস পেয়ে বক্সের মধ্যেই সজোরে শট নিয়েছিলেন হানামতে। কিন্তু অমরিন্দর অসাধারণ দক্ষতায় সেই শট বাঁচিয়ে দেন।
এরপরেই শুরু হন কিয়ানের জাদু। যখন দু’দলের সমর্থকরাই মনে করেছিলেন ম্যাচ ড্র হতে চলেছে, তখনই এটিকে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন কিয়ান। অরিন্দম দুর্দান্ত সেভ করেছিলেন। কিন্তু ফিরতি বলে ভলি মেরে জালে জড়ান কিয়ান। দু’মিনিট পরেই হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন। এ বার লাল-হলুদের রক্ষণের ব্যর্থতায় বল জালে জড়ালেন তিনি।