Qatar vs India Controversial Goal

বিতর্কিত গোলে কাতারের কাছে হার ভারতের, প্রযুক্তি ছাড়া কি সত্যিই অচল এখনকার রেফারিরা?

মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তাল ভারতের ফুটবলমহল। কাতারের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে যে ভাবে প্রথম গোল হজম করেছে ভারত, তা মানতে পারছেন না কেউই। প্রযুক্তি ছাড়া কি এখনকার রেফারিরা সত্যিই অচল?

Advertisement

অভীক রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৪ ১৭:৩৩
Share:

কাতার-ভারত ম্যাচের সেই বিতর্কিত গোল। ছবি: এক্স।

মঙ্গলবার রাত থেকে উত্তাল ভারতের ফুটবলমহল। কাতারের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে যে ভাবে প্রথম গোল হজম করেছে ভারত, তা মানতে পারছেন না কেউই। সমর্থক থেকে ফুটবল বিশেষজ্ঞ, সকলের মতেই এটা ‘দিনেদুপুরে জোচ্চুরি’। কাঠগড়ায় কোরিয়ার রেফারি কিম উ-সাং। যে ঘটনা রিপ্লে-তে স্পষ্ট ভাবে দেখা গিয়েছে, সেটা কী ভাবে তিনি গোল দিলেন সেই প্রশ্ন উঠছে। কেন এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার) নেই, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, প্রযুক্তি ছাড়া কি তা হলে এখন রেফারিরা একেবারেই অচল?

Advertisement

কী হয়েছিল মঙ্গলবার?

তখন ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। ৭৩ মিনিটে ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু বিপক্ষের এক ফুটবলারের হেড ধরতে গিয়ে ফস্কান। বল তাঁর শরীরের তলা গিয়ে গলে গেলেও বাঁ পায়ে লেগে গোল লাইনের বাইরে বেরিয়ে যায় বলে মনে হয়েছিল। সেখান থেকে বল টেনে মাঠের ভিতরে নিয়ে কাতারের এক ফুটবলার। তা থেকে গোল করেন আইমেন। গোলের পর কাতারের ফুটবলারদের দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়, তাঁরাও ভাবেননি এটি গোল দেওয়া হবে। কিন্তু রেফারি কিম সবাইকে অবাক করে দিয়ে গোল দিয়ে দেন। দুই লাইন্সম্যান কাং ডং হো এবং চিয়ন জিন হি-ও কার্যত চোখ বুজে থাকেন। অবাক ভারতীয় ফুটবলাররা মাঠেই প্রতিবাদ জানান। কোনও লাভ হয়নি।

Advertisement

যে কাতার দু’বছর আগে বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে এবং যে দেশ এশিয়ার সেরা, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত কী ভাবে নেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রেফারিংয়ের মানও কাঠগড়ায়। সমর্থকদের রাগ এএফসি-র প্রতি। কেউ কেউ গড়াপেটার প্রসঙ্গও টেনে আনছেন। তাঁদের মতে, জোর করে কুয়েতকে তৃতীয় রাউন্ডে তোলার লক্ষ্যেই কি এটি গোল দেওয়া হল? ভারতের বিরুদ্ধে কি এটি তীব্র বঞ্চনা নয়?

বাঙালি রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত এএফসি-র বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ম্যাচ পরিচালনা করেন। তাঁর মতে, রিপ্লে ভিডিয়ো বা কোনও ছবি দেখে কোনও মতেই বোঝা যায় না সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল। আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রাঞ্জল বলেছেন, “আমার কাছে যে ছবি বা ভিডিয়ো এসেছে বা যেগুলো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা সঠিক অ্যাঙ্গেল থেকে নয়। ওখান থেকে বোঝা যায় না বলটা আদৌ গোললাইনের বাইরে বেরিয়েছে কি না। সঠিক কোণ থেকে দেখলে বোঝা যাবে।”

এ প্রসঙ্গে প্রাঞ্জল মনে করিয়ে দিয়েছেন গত বিশ্বকাপে জার্মানি বনাম জাপান ম্যাচের কথা। সেই ম্যাচে রিৎসু দোয়ানের গোলটি বৈধ ছিল কি না তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়। অনেকেই সে সময় দাবি তুলেছিলেন, গোললাইনের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বল পাস দিয়েছিলেন জাপানের কাওরু মিতোমা। পরে অবশ্য ফিফা সেই ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। ছবি প্রকাশ করে দেখায়, কেন সেটি গোল হয়েছিল। প্রাঞ্জলের কথায়, “সঠিক অ্যাঙ্গেল থেকে না দেখলে কখনওই বোঝা সম্ভব নয় সেটি গোল ছিল কি না।”

তবে বাংলার আর এক রেফারি উদয়ন হালদার বলেছেন, “আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের ভুল কোনও মতেই কাম্য নয়। সম্পূর্ণ ভুল একটি সিদ্ধান্তে বঞ্চনার শিকার হল ভারত। এত উঁচু স্তরের একটা খেলা। সেখানে ভার নেই, এটা দুর্ভাগ্যজনক।” তিনি আরও বলেন, “কোরিয়ার রেফারি ম্যাচ পরিচালনা করছিলেন। ওরা ফুটবলের দিক থেকে উন্নত। রেফারিদের মানও ভাল। তাদের থেকে এ রকম ভুল আশা করা যায় না। তা ছাড়া, যে কাতারে দু’বছর আগে বিশ্বকাপ হয়েছে, সেখানে এই দৃশ্য আশা করা যায় না।”

সূত্রের খবর, যোগ্যতা অর্জন পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে ‘ভার’ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিফা। কারণ, এই রাউন্ডে যে দেশগুলি খেলছে তার মধ্যে বেশির ভাগ দেশেই ‘ভার’-এর পরিকাঠামো নেই। যেমন ভারত। চাইলে কাতার, জাপান, কোরিয়ার মতো উন্নত দেশগুলি ‘ভার’ ব্যবহার করতেই পারত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতকে দেশের মাটিতে ‘ভার’ ছাড়াই খেলতে হত। তৃতীয় রাউন্ড থেকে ‘ভার’ থাকার কথা। সেটাও নির্ভর করছে কোন কোন দেশ তৃতীয় রাউন্ডে উঠছে তার উপরে।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মরসুমে আইএসএলে রেফারিং একটি আলোচনার বিষয়। গত মরসুমে বার বার রেফারির প্রতি বিষোদ্গার করেছেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। নির্বাসিতও হয়েছেন। রেফারির বিরুদ্ধে মুখ খোলায় নির্বাসনের খাঁড়া নেমে এসেছে চেন্নাইয়িনের কোচ ওয়েন কয়েল এবং কেরলের প্রাক্তন কোচ ইভান ভুকোমানোভিচের উপরেও। কেউই দমে যাননি। কিন্তু সেই রেফারিরা সবাই ভারতীয় ছিলেন। ভারতে না হয় রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বহু দিনই। কিন্তু এএফসি-র মতো মঞ্চে, কোরিয়ার মতো ফুটবলে উন্নত দেশের একজন রেফারি কী ভাবে এই ভুল করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

যদিও প্রাঞ্জল মনে করেন, ভার ছাড়া বিশ্বের যে কোনও দেশের রেফারিদের সঙ্গে ভারতকে আলাদা করা যাবে না। তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশের রেফারিরা বিশ্ব পর্যায়ে হয়তো সে ভাবে দর পান না। তাঁদের অনেক সিদ্ধান্তে বিতর্ক থাকে। কিন্তু যদি ভার সরিয়ে নেওয়া হয়, তা হলে অনেক উন্নত দেশের রেফারিদের সঙ্গে আমাদের যে খুব তফাত রয়েছে এমনটা নয়।”

গোল ছিল না কি ছিল না, তা নিয়ে বিতর্ক চলবে বহু দিন। তবে নিশ্চিত ভাবেই ভারতের ফুটবলে অন্যতম একটি ঘটনা হয়ে থাকল এটি। ভাল ফুটবল খেলতে গেলে ভাল রেফারিংও যে দরকারি, সেটা বোঝায় সময় এসেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এ কারণেই আরও বেশি করে উঠছে আইএসএলে ভার প্রযুক্তি চালু করার দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement