ক্ষুব্ধ: সমালোচকদের জবাব স্তিমাচের। —ফাইল চিত্র।
সৌদি আরবের কাছে ০-২ গোলে হেরে এশিয়ান গেমসের শেষ ষোলো থেকে বিদায়ের পরেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ। বলেছিলেন, ‘‘প্রস্তুতি নেওয়ার যদি পর্যাপ্ত সময়ই না পাওয়া যায়, তা হলে কোথাও দল পাঠানো উচিত নয়। প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, আমরা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতেই এসেছি।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি বিরক্ত। জানি না কেন বারবার আমার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা সত্যি কথা বলছেন না। আমি সব কিছুর উত্তর দেব। চিনে খেলতে আসার আগে আমাদের দল নিয়ে যে সব কথা বলা হয়েছে, তাতেও আমি খুবই হতাশ।’’
ইগরের এই মন্তব্যের পরেই আগামী বছর এএফসি এশিয়ান কাপের পরে ভারতীয় দলের দায়িত্বে তিনি আর থাকবেন কি না, জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বসনিয়া আগ্রহ দেখিয়েছে তাঁকে কোচ করার ব্যাপারে। ইগর বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ফেডারেশন জানে আমি কী চাইছি। সেটা অর্থ নয়। আমি চাই জাতীয় দলের ফুটবলারদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হোক তৈরি হওয়ার জন্য। সেটা কি আমরা পাচ্ছি? যদি আমাদের সাফল্য পেতে হয়, তা হলে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। গত সাড়ে চার বছর ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, আমার কী চাই। কিন্তু সব কিছু নিজের কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলা আর সম্ভব হচ্ছে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব আমি কী করব।’’
ভারতের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তারা ইগরের সঙ্গে চুক্তি নবীকরণ করতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই তাঁকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চুক্তি বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইগর এখনও সম্মতি দেননি। তিনি শর্ত দিয়েছেন, ২০২৪ সালের এএফসি এশিয়ান কাপের আগে চার সপ্তাহ এবং ২০২৬ বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের জন্য দু’সপ্তাহের প্রস্তুতির সময় দিতে হবে। এই নিয়েই আলোচনা করতেই সোমবার ভারতীয় দলের কোচ বৈঠকে বসছেন ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে। সূত্রের খবর, তাঁর শর্ত মেনে নেওয়া হলে চুক্তি বৃদ্ধির প্রস্তাবে রাজি হতে পারেন ইগর।
ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই শুক্রবার বিকেলে মারডেকা কাপের জন্য ২৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেন তিনি। ফিরেছেন মোহনবাগানের গোলরক্ষক বিশাল কেইথ। তবে নেই প্রীতম কোটাল এবং রহিম আলি। ১৩ অক্টোবর সেমিফাইনালে ভারত খেলবে আয়োজক মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে প্যালেস্তাইন ও তাজিকিস্তান। ফাইনাল ১৭ অক্টোবর।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানে শেষ করা ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণের অন্যতম ভরসা ছিলেন ইগর। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারলেও জ়িনেদিন জ়িদানকে কার্যত নড়তে দেননি। তাঁর বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে জ্যোতিষীর পরামর্শে দল গড়ার অভিযোগ নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ইগর। বলেছেন, ‘‘জ্যোতিষীর সাহায্য নিয়ে দল গঠনের যে অভিযোগ উঠেছিল তা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের কাজ, জ্ঞান এবং কী দেখছি সেটার উপরেই বিশ্বাস রাখি। মাঠে ফুটবলারদের দেখে বিচার করি, কাকে দলে নেব। জ্যোতিষীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিই না।’’
ভারতীয় দল: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, অমরিন্দর সিংহ, বিশাল কেইথ ও ধীরজ সিংহ (গোলরক্ষক)। নিখিল পূজারি, রোশন সিংহ, সন্দেশ জিঙ্ঘন, আনোয়ার আলি, মেহতাব সিংহ, লালচুংনুঙ্গা, আকাশ মিশ্র ও শুভাশিস বসু (রক্ষণ)। জিকসন সিংহ, সুরেশ সিংহ, অনিরুদ্ধ থাপা, রোহিত কুমার, সাহাল আব্দুল সামাদ, ব্রেন্ডন ফার্নান্দেস, লালিয়ানজ়ুয়ালা ছাংতে, উদান্ত সিংহ, বিক্রম প্রতাপ সিংহ, মহেশ সিংহ, লিস্টন কোলাসো ও নন্দকুমার (মাঝমাঠ)। সুনীল ছেত্রী ও মনবীর সিংহ (আক্রমণ ভাগ)।