ইগর স্তিমাচ (বাঁ দিকে) ও সুনীল ছেত্রী। —ফাইল চিত্র।
কলকাতায় শেষ হচ্ছে ভারতীয় ফুটবলের একটি অধ্যায়। আগামী ৬ জুন যুবভারতীতে নিজের শেষ ম্যাচ খেলবেন সুনীল ছেত্রী। সেই ম্যাচের আগে দলের ফুটবলারদের কাছে একটাই দাবি করলেন ভারতের ফুটবল কোচ ইগর স্তিমাচ।
ওড়িশার ভুবনেশ্বরে ভারতীয় ফুটবল দলের শিবির চলছে। সেখানেই রয়েছেন সুনীল। সেই শিবিরে ফুটবলারদের সঙ্গে স্তিমাচের কথা বলার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ হয়েছে। সেখানে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভারতীয় ফুটবলারেরা। তাঁদের সামনে স্তিমাচ বলছেন, “আমাদের দলের অধিনায়ক অবসর ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তে আমাদের সবার আরও উজ্জীবিত হওয়া উচিত। কারণ, ভারতীয় ফুটবলের জন্য সুনীল যা করেছে তার জন্য ওকে ধন্যবাদ জানানোর একটা সুযোগ আমাদের কাছে এসেছে। প্রতি দিন ভারতীয় জার্সি পরে মাঠে নেমে যে দায়বদ্ধতা ও দেখিয়েছে তা অবিস্মরণীয়। গোল করেছে। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিয়েছে।”
তার পরেই দলের সব ফুটবলারের কাছে একটি আবেদন করেন স্তিমাচ। তিনি বলেন, “চল, ৬ জুনকে আমরা স্মরণীয় করে রাখি। জিতে আমাদের অধিনায়ককে একটা সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিই।”
নিজের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছেন স্তিমাচ। সেখানে তিনি লেখেন, “গত দু’দশক ধরে আমাদের অধিনায়ক দল ও দেশের জন্য অনেক কিছু করেছে। ওর জন্য আমরা ৬ জুন স্মরণীয় করে রাখতে চাইছি।”
বৃহস্পতিবার সকালে সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োবার্তা পোস্ট করে অবসরের কথা ঘোষণা করেন সুনীল। তিনি বলেন, “একটা দিন জীবনে কোনও দিন ভুলতে পারব না। যে দিন দেশের জার্সি গায়ে প্রথম বার ভারতের হয়ে খেলতে নেমেছিলাম। অবিশ্বাস্য অনুভূতি। তবে তার আগের দিন সকালে জাতীয় দলে আমার প্রথম কোচ সুখী স্যর (সুখবিন্দর সিংহ) এসে আমাকে জানিয়েছিলেন, প্রথম একাদশে আমি রয়েছি। বলে বোঝাতে পারব না সেই অনুভূতি কেমন ছিল।”সুনীলের সংযোজন, “জার্সি প্রথম হাতে পাওয়ার পর তাতে কিছুটা সুগন্ধি ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। জানি না কেন। সেই দিন যা যা হয়েছিল, প্রাতরাশ থেকে মধ্যাহ্নভোজের টেবিলের কথাবার্তা, ম্যাচে আমার মাঠে নামা এবং অভিষেক ম্যাচেই গোল, তার পরে ৮০ মিনিটে গোল হজম করা, জাতীয় দলে আমার যাত্রা শুরুর প্রথম দিনের এই ঘটনাগুলোর কথা কোনও দিন ভুলতে পারব না।”
দেশের হয়ে খেলার যে আনন্দ এবং একই সঙ্গে অসহনীয় চাপ, সেটা বর্ণনা করেছেন সুনীল। তাঁর কথায়, “গত ১৯ বছরে অসহ্য চাপ এবং দেশের হয়ে খেলার আনন্দ, দুটোই আমার সঙ্গে সব সময় ছিল। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি দেশের হয়ে এত গুলো ম্যাচ খেলব, ভাল হোক বা খারাপ, এত কিছু করতে পারব। এখন আমি সেটা পেরেছি। গত এক-দেড় মাসে আমি সেটা পেরেছি এবং খুব অদ্ভুত লেগেছে। হয়তো করতে পেরেছি কারণ, আমি বুঝতে পেরেছিলাম পরের ম্যাচটা আমার শেষ ম্যাচ হতে চলেছে।”
২০০৫-এর ১২ জুন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন সুনীল। অভিষেক ম্যাচেই গোল করেন। সুনীলের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল ২০০৭ নেহরু কাপ। প্রথম ম্যাচে কম্বোডিয়াকে ৬-০ হারায় ভারত। দু’টি গোল করেন সুনীল। সিরিয়ার কাছে হার এবং কিরঘিজস্থানের বিরুদ্ধে জয়ের ম্যাচেও গোল করেন তিনি। সেই শুরু। তার পর থেকে ক্রমশ ভারতের এক নম্বর স্ট্রাইকার হয়ে ওঠেন সুনীল। ভাইচুং ভুটিয়া অবসর নেওয়ার পর সুনীলই ভারতীয় ফুটবলের মুখ হয়ে ওঠেন। নিজস্ব প্রতিভা এবং দক্ষতায় তিনি বাকিদের টেক্কা দিতে থাকেন। বব হাউটন থেকে ইগর স্তিমাচ, কোনও কোচই সুনীলকে ছাড়া দল করতে পারেননি। নিজের শেষ ম্যাচেও অধিনায়কের ব্যান্ড পরেই খেলতে নামবেন সুনীল।