শুরুতেই হিট কন্যাশ্রী কাপ নিজস্ব চিত্র।
এক বছর কোভিডে বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে কন্যাশ্রী কাপ। ‘ক্যালকাটা উওমেন্স ফুটবল লিগ’-এর নাম পরিবর্তন করে এই প্রতিযোগিতা নতুন ভাবে সামনে নিয়ে এসেছে ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ)। প্রথম থেকেই রমরম করে চলছে এই প্রতিযোগিতা। আগে যেখানে মহিলাদের ফুটবল লিগ নিয়ে কোনও আলোচনাই হত না, সেখানে এ বারের কন্যাশ্রী কাপ সবার নজর কেড়ে নিয়েছে। শহরের বিভিন্ন মাঠে ম্যাচ দেখতে ভিড়ও হচ্ছে দর্শকদের।
একটা উদাহরণ দিলেই এ বারের প্রতিযোগিতার গুরুত্ব বোঝা যাবে। এখনও পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচ হয়েছে। তাতে গোল হয়েছে ১১৩টি। অর্থাৎ ম্যাচ পিছু সাতটির বেশি গোল। বৃহস্পতিবারই চাঁদনি স্পোর্টিং ১৮-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বিদ্যুৎ স্পোর্টিংকে। এখনও পর্যন্ত এটাই সব থেকে বড় ব্যবধান।
কী ভাবে মহিলাদের লিগ নিয়ে এত আগ্রহ তৈরি হল? আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন ক্লাব এবং রাজ্য সরকারের যৌথ সাহায্যকে। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “এ বারের প্রতিযোগিতা সফল করে তুলতে প্রচুর ক্লাব এগিয়ে এসেছে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেখানে ৭-৮টি দল নিয়ে এই প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে আমাদের এখানে প্রতিযোগিতা হচ্ছে ২২টি দল নিয়ে। ভাবাই যায় না। রাজ্য সরকারের সাহায্য এবং ক্লাবগুলির ঐকান্তিক সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভবই হত না।”
উদ্বোধনে ছিলেন ঋতুপর্ণা, অরূপ নিজস্ব চিত্র
এ বারের কন্যাশ্রী কাপে পাঁচটি নতুন দল অংশগ্রহণ করেছে। তারা হল কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন, নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘ, সাদার্ন সমিতি, ইউনাইটেড স্পোর্টস এবং অ্যাসোস রেনবো। ফলে নতুন অনেক ফুটবলারের কাছে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ খুলে গিয়েছে। বিভিন্ন কারণে ময়দানের মাঠগুলি এ বার ম্যাচ আয়োজন করার জন্য পাওয়া যায়নি। ফলে রবীন্দ্র সরোবর-সহ শহরের বিভিন্ন মাঠে ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী দিনে দমদমের সুরের মাঠে ম্যাচ আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জয়দীপ বলেছেন, “আগে মহিলাদের ম্যাচ দেখতে কোনও ভিড় হত না। অনেক ম্যাচও আয়োজন হত না। এ বার সেটা বদলে গিয়েছে। চাহিদা মেনে আমরা পুরস্কারমূল্যও বাড়িয়ে দিয়েছি। জয়ী দলকে ৫০ হাজার এবং রানার্সকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রতি ম্যাচের সেরা ফুটবলারকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা ঠিক করেছি আগামী দিনে সব ঠিক ঠাক থাকলে পুরস্কারমূল্য বাড়িয়ে ৩ লাখ এবং ২ লাখ করার।” আগামী ১০ মার্চ যুবভারতী স্টেডিয়ামে ফাইনাল হবে। ওই দিনই আইএফএ অনন্য সম্মান দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে।
কী ভাবে মহিলাদের লিগ নিয়ে এত আগ্রহ তৈরি হল? আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন ক্লাব এবং রাজ্য সরকারের যৌথ সাহায্যকে।
সব ঠিক ঠাক থাকলে পরের মরসুমে অবনমনও আসতে চলেছে কন্যাশ্রী কাপে। শুধু তাই নয়, কলকাতা লিগের মতো এটিকেও প্রিমিয়ার ‘এ’ এবং ‘বি’ — এই দু’টি ডিভিশনে ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। আগে মহিলারা পুরো মরসুম খেলার জন্য কয়েক হাজার টাকা করে পেতেন। কিন্তু এখন কোনও কোনও ফুটবলারের দাম ১ লাখ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। মহিলাদের দল গড়ার জন্য ১০-১২ লাখ খরচ করছে কোনও কোনও দল। জাতীয় দলের ফুটবলাররাও কন্যাশ্রী কাপে খেলার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এক জন করে বিদেশি ফুটবলারও খেলানোর অনুমতি দেওয়া হতে পারে। জয়দীপ জানালেন, খেলার উপযুক্ত ভাল মাঠে এবং ফুটবলারদের গুণমানই এর পিছনে দায়ী। দলগুলি এ বার অনেক ভেবেচিন্তে ফুটবলারদের নিয়েছে। এই কারণেই গোলের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি, ম্যাচ পরিচালনা করছেন মহিলা রেফারিরা। ম্যাচ কমিশনার এবং ফিজিয়োও রয়েছেন মহিলারাই। পরবর্তী সময়ে জেলা মহিলা ফুটবল লিগ আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে আইএফএ-র।