সভাপতি নির্বাচনে মাত্র একটি ভোট পেলেন ভাইচুং। ফাইল ছবি
প্রত্যাশা মতোই বিরাট ব্যবধানে জিতে ভারতীয় ফুটবল সংস্থার সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন কল্যাণ চৌবে। ভাইচুং ভুটিয়াকে ৩৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছেন তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ভাইচুং একটাও ভোট পাবেন না। ফলপ্রকাশের পরে দেখা যায়, তাঁর পকেটে মাত্র একটিই ভোট এসেছে। জয়ের এই বিরাট ব্যবধান দু’টি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এক, ভাইচুংয়ের নিজেকে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই, কারণ তিনি কোনও রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধি নন। তা হলে তাঁকে কোন রাজ্য ভোট দিয়েছে? দুই, দু’জনের সমর্থন নিয়ে ভোটে লড়লেও একটি ভোট পেলেন ভাইচুং। দু’জনের মধ্যে তা হলে কে তাঁকে ভোট দিলেন না?
কল্যাণ যে নির্বাচনে সহজেই জিতবেন, এটা অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে এত সহজে এবং বড় ব্যবধানে জয় আসবে, এটা কেউ ভাবেননি। নির্বাচনে ভাইচুংয়ের প্রস্তাবক ছিলেন গোপালকৃষ্ণ কোসারাজু, যিনি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধি। সমর্থক ছিলেন দিলীপ সিংহ শেখাওয়াত, যিনি রাজস্থান রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধি। ভাইচুংয়ের নির্বাচনী প্রচারে এসে দু’জনেই প্রকাশ্যে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ককে সমর্থনের কথা জানান। ফলাফলের পর দেখা যাচ্ছে, দু’টি নিশ্চিত ভোটও জোটেনি ভাইচুংয়ের কপালে। তাঁর পাশে দাঁড়ানো দু’টি রাজ্যের কেউ হয়তো তাঁকে ভোট দেয়নি। আবার এমনও হতে পারে, ভাইচুং যাঁর ভোট পেয়েছেন, তিনি অন্য কোনও রাজ্যের প্রতিনিধি।
মোট ৩৪টি রাজ্য সংস্থার ৩৪ জন প্রতিনিধির ভোটাধিকার ছিল। নির্বাচনের আগে অনুমান করা হয়েছিল, অন্তত ২৬-২৭টি রাজ্য সরাসরি কল্যাণের পাশে দাঁড়াবে। ভাইচুং পাঁচ-ছ’টি ভোট পেতে পারেন। নির্বাচনের দিন সেই হিসাব উড়ে গেল। দেখা গেল, প্রশাসক ভাইচুংকে মেনে নিতে তৈরি নন কেউই। তাঁদের বরং অনেক বেশি আস্থা রয়েছে কোনও দিনও ভারতীয় ফুটবলের প্রশাসনে না থাকা কল্যাণের উপর। সরাসরি রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কল্যাণ শুধু বঙ্গ বিজেপির সদস্যই নন, তিনি দাঁড়িয়েছিলেন গুজরাত রাজ্য সংস্থার হয়ে, যা আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য।
প্রাক্তন ফুটবলার এবং অতীতে ভারতীয় ফুটবলে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ভাইচুংয়ের সুসম্পর্ক রয়েছে অনেক শীর্ষ স্তরের প্রশাসনিক কর্তার সঙ্গেই। কিন্তু এ ধরনের নির্বাচনে কোনও সম্পর্ক বা হিসাব যে খাটে না, তার প্রমাণ অতীতে মিলেছে। প্রফুল্ল পটেল সভাপতি থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে প্রতি বার কোনও না কোনও অভিযোগ থাকলেও নির্বাচনে নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি।
প্রসঙ্গত, ফিফার নির্বাসনের আগে প্রশাসকদের কমিটির (সিওএ) জারি করা নির্বাচন বিধিতে ভাইচুং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেছিলেন বিশিষ্ট ফুটবলার হিসাবে। সেই বিধান সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করার সময়েই ভাইচুংকে বলেছিল, তাঁকে ভারতীয় ফুটবলে অন্য কোনও ভূমিকায় ব্যবহার করা হবে। কিন্তু সভাপতি পদে নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে অনড় ছিলেন ভাইচুং। তাই অন্ধ্রপ্রদেশ এবং রাজস্থানকে পাশে পাওয়ার পর আর ভাবেননি তিনি। মনোনয়ন জমা দিয়ে দেন। নির্বাচনে তাঁকে হতাশই হতে হল।
নির্বাচনের পর ভাইচুং বলেছেন, “ভবিষ্যতেও ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্যে কাজ করে যাব। কল্যাণকে অনেক শুভেচ্ছা। আশা করি ভারতীয় ফুটবলকে ও সামনের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সমর্থন করেছে, তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।”