গোলের পর ফরাসি ফুটবলারদের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।
ফ্রান্স — ১
বেলজিয়াম — ০
সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হল বেলজিয়ামকে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল করা সহজ ছিল না। তার মাঝেই দু’বার ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন রোমেলু লুকাকু ও কেভিন দ্য ব্রুইন। কিন্তু গোল করতে পারেননি তাঁরা। খেলা শেষ হওয়ার ৫ মিনিট আগে বল বার করতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করেন বেলজিয়ামের ভারটঙ্গান। সেই গোলেই ইউরো কাপ থেকে বিদায় নিল বেলজিয়াম। কোনও রকমে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিল ফ্রান্স।
খাতায়-কলমে শক্তিশালী দল হলেও চলতি ইউরোয় সে রকম গোল করতে পারেনি দু’দলই। ফলে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জালে বল জড়ানো। নক আউট হওয়ায় শুরু থেকে কোনও দলই ওপেন খেলেনি। রক্ষণ জমাট রেখে আক্রমণে উঠছিল তারা। বেলজিয়ামের গোলের দায়িত্ব যেমন ছিল লুকাকুর কাঁধে, তেমনই ফ্রান্সের ভরসা ছিলেন কিলিয়ান এমবাপে।
এই ম্যাচেও ফেস গার্ড পরে খেলতে নামেন এমবাপে। তবে আগের ম্যাচের থেকে এই ম্যাচে ফেস গার্ড অন্য রকম ছিল। তাঁকে বাঁ প্রান্তে খেলাচ্ছিলেন কোচ দিদিয়ের দেশঁ। দু’দলই শুরু থেকে মাঝমাঠের দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিছুটা হলেও বেশি আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল ফ্রান্সকে। প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েক বার বেলজিয়ামের বক্সে ঢোকে তারা। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারেনি।
২৩ মিনিটে দ্য ব্রুইনের ফ্রিকিক বার করতে গিয়ে চাপে পড়ে যান ফরাসি গোলরক্ষক মাইক মাইগনান। বলের ড্রপ তাঁর সামনে পড়ায় থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কোনও রকমে পা দিয়ে বল বার করেন। দু’দলই মূলত প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠছিল। ফলে বক্সের মধ্যে ডিফেন্ডারদের সতর্ক থাকতে হচ্ছিল। ৩৭ মিনিটের মাথায় জুলস কুন্ডের ক্রসে হেড করেন মার্কাস থুরাম। কিন্তু বল গোলে রাখতে পারেননি তিনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বক্সের বাইরে থেকে চুয়ামেনির শট বার উঁচিয়ে বেরিয়ে যায়। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধেও সেই একই খেলা। দু’দলই বক্সের বাইরে অজস্র পাস খেলছিল। কিন্তু ফাইনাল পাসে সমস্যা হচ্ছিল। কেউ কাউকে জায়গা ছাড়ছিল না। ৪৯ মিনিটে আবার বক্সের বাইরে থেকে শট মারেন চুয়ামেনি। আবার বারের উপর দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। বক্সের মধ্যে সুযোগ করতে না পারায় বক্সের বাইরে থেকে বার বার শট মারছিল ফ্রান্স। এমবাপের শটও বার উঁচিয়ে বেরিয়ে যায়। এমবাপে কয়েক বার ঝলক দেখালেও এখনও পুরনো ফর্মে পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। হতে পারে নাকের চোটের কারণে কিছুটা সতর্ক হয়ে খেলছেন তিনি।
৭০ মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পায় বেলজিয়াম। মাঙ্গালার পাস ধরে লুকাকুকে বল দেন দ্য ব্রুইন। বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ে জোরালো শট মারেন বেলজিয়ামের স্ট্রাইকার। শরীর ছুড়ে বল বাঁচিয়ে দেন মাইগনান। ৮২ মিনিটের মাথায় আবার ফ্রান্সের পতন রোধ করেন মাইগনান। এ বার দ্য ব্রুইনের শট বাঁচান তিনি।
সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয় বেলজিয়ামকে। খেলার ৮৫ মিনিটের মাথায় বেলজিয়ামের ফুটবলারের করা আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। বক্সের বাইরে বেশ কয়েকটি পাস খেলেন ফ্রান্সের ফুটবলারেরা। কুন্ডে বল বাড়ান পরিবর্ত হিসাবে নামা রান্ডাল কোলো মুয়ানির দিকে। চলতি বলে শট মারেন তিনি। বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার ভারটঙ্গানের পায়ে লেগে বল দিক পরিবর্তন করে। ডান দিকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কোয়েন কাসটিলস। বল দিক পরিবর্তন করায় কিছু করার ছিল না তাঁর। ভারটঙ্গানের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।
বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি বেলজিয়াম। শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হয় ফিফা ক্রমতালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা দলকে। ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেও চলতি ইউরোতে গোল করতে যে ভাবে তারা সমস্যায় পড়ছে তা চিন্তায় রাখবে কোচ দেশঁকে।