মোহনবাগান দল। — ফাইল চিত্র।
এ বারের আইএসএলে নজর কেড়ে নিয়েছে ভারতীয় ফুটবলারদের পারফরম্যান্স। গত ন’টি মরসুমের তুলনায় এ বার ভাল খেলেছেন ভারতীয়েরা। আগে বিদেশিরা নজর কাড়লেও ভারতীয়েরা ক্রমশ তাঁদের টক্কর দেওয়া শুরু করেছেন। এমনকি কোচেরাও ভারতীয় ফুটবলারদের কথা বলছেন এবং তাঁদের প্রশংসা করছেন প্রায়ই। বহু ম্যাচের ফলের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলেছেন ভারতীয় ফুটবলারেরা।
ফাইনালের আগে পর্যন্ত চলতি মরসুমে ভারতীয় ফুটবলাররা ১৩৩টি গোল করেছেন, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। মোট ৩৭০টি গোলের মধ্যে ১৩৩টি গোল অর্থাৎ, ৩৬% গোল করেছেন ভারতীয়রা। গোল করানোর দিক থেকেও ভারতীয়রা এখন পারদর্শী। এখনও পর্যন্ত ৬৭ জন ভারতীয় ফুটবলার ১৩০টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন, যা আগের মরসুমগুলির তুলনায় বেশি।
আইএসএল ফাইনালে মোহনবাগান এবং মুম্বই দুই দলেই রয়েছেন একাধিক ভারতীয় ফুটবলার। জাতীয় দলের হয়েও তাঁরা নিয়মিত ভাল খেলেন। তেমনই পাঁচ ফুটবলারের উল্লেখ করা হল।
মনবীর সিংহ (মোহনবাগান)
মোহনবাগানের উইং থেকে আক্রমণে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায় মনবীর সিংহকে। গতিময় উইঙ্গারকে সামলাতে হিমশিম খান যে কোনও দলের ডিফেন্ডারেরাই। দলের সাতটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন মনবীর। ফাইনালে আর একটি অ্যাসিস্ট করলে তিনিই হবেন এক মরসুমে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করা ভারতীয় খেলোয়াড়। আপাতত নাওরেম মহেশ সিংহ ও রোশন সিংহের সঙ্গে এক নম্বরে রয়েছেন তিনি। তবে গোলের সংখ্যা খুব বেশি নয়। মাত্র চারটি গোল পেয়েছেন তিনি। তবে সুযোগ তৈরি করেছেন ৩৬টি। গোলে শট নিয়েছেন ১৮ বার। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে তাঁর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে দলের ৪-০ জয়ে তিনি একটি গোল করেন।
লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে (মুম্বই সিটি এফসি)
মুম্বই সিটি এফসি-র আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র এই মিজো ফুটবলার। দশটি গোল করে দলের গোলদাতাদের তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন। ছ’টি অ্যাসিস্টও করেছেন। দুই প্রান্ত দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণে উঠে গোল করা বা সতীর্থদের গোলের বল সাজিয়ে দেওয়া অভ্যাস করে ফেলেছেন তিনি। গত পাঁচটি ম্যাচেই দলকে গোল উপহার দিয়েছেন। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে ম্যাচের সংযুক্তি সময়ের সাত মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল করে দলের প্রায় হারা ম্যাচ জিতিয়ে দেন ২৬ বছর বয়সি ফুটবলার। দ্বিতীয় পর্বেও তাঁর গোলেই জয় সুনিশ্চিত করে মুম্বই। এখনও পর্যন্ত ২৪টি ম্যাচে বিপক্ষের বক্সে ১১৩ বার বল ছুঁয়েছেন, ৩৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। ২৫টি শট ছিল গোলের লক্ষ্যে, ১৮টি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, ৪৮৬টি সফল পাস করেছেন এবং তাঁর ৮৩ শতাংশ পাসই ছিল নিখুঁত।
লিস্টন কোলাসো (মোহনবাগান)
গত মরসুমে তাঁর থেকে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স পাওয়া না গেলেও এ বার চেনা ছন্দে পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। ধারাবাহিকতার অভাব থাকলেও বড় ম্যাচগুলিতে অবশ্য বার বার নিজেকে তুলে ধরেছেন। যখনই সমর্থকদের মনে হয়েছে অনেক দিন লিস্টনকে সেরা ছন্দে পাওয়া যায়নি, তখনই ফিরে এসেছেন এবং সমর্থকদের আনন্দ দিয়েছেন। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে বক্সের পাশে গিয়ে ভেতরে ঢুকে ড্রিবল করে ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে হয় নিজেই গোলে শট নিয়েছেন, না হয় সতীর্থদের গোলের বল সাজিয়ে দিয়েছেন। এটাই কোলাসোর খেলার কৌশল। পায়ে বেশি বল রাখার জন্য মাঝেমাঝে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তবু আইএসএলে চারটি গোল করেছেন ও চারটি করিয়েছেন।
বিক্রম প্রতাপ সিংহ (মুম্বই সিটি)
মুম্বই সিটি এফসি-র প্রান্তিক আক্রমণের আর এক ধারালো অস্ত্র এই পাঞ্জাবি উইঙ্গার। ছাংতে ও বিক্রম দু’দিক থেকে সমান ভাবে ও নাগাড়ে আক্রমণ করে যান। ফলে বিপক্ষের রক্ষণে অনেক ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। সেগুলি কাজে লাগিয়েই দলের ফরোয়ার্ডরা শত্রু শিবিরে ঢুকে গোলের মুখ খুলে ফেলেন। নিয়মিতই দেখা যায় এই দৃশ্য। উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে বিপক্ষের রক্ষণকে দিশেহারা করতে অনেক বারই দেখা গিয়েছে বিক্রমকে। আটটি গোলও করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। সঙ্গে চারটি অ্যাসিস্ট।
শুভাশিস বসু (মোহনবাগান)
মোহনবাগান রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ এই বাঙালি ফুটবলার। প্রয়োজনে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের ভূমিকাও পালন করেন। দল তিন ব্যাকে খেললে ডিফেন্ডারদের অনেকটা চাপ নিতে হয়। ভাল ও নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডাররা না থাকলে কোনও কোচই এই ঝুঁকি নেবেন না। কিন্তু মোহনবাগান কোচ আন্তোনিয়ো হাবাস দলকে সমানে তিন ব্যাকে খেলিয়ে যাচ্ছেন শুভাশিসের মতো নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আছেন বলেই। তিনিও কোচের নির্দেশ পালন করেন। এখনও পর্যন্ত ২৪টি ম্যাচ খেলেছেন। প্রতিটিতেই শুরু থেকে খেলেছেন দলের অধিনায়ক। ব্লক (২৬) ও ইন্টারসেপশনের (৩১) সংখ্যায় যেমন তিনিই দলের সবার চেয়ে এগিয়ে, তেমনই প্রতিপক্ষের অর্ধে পাসও সবচেয়ে বেশি তিনিই দিয়েছেন। দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল পাসও (৯০৮) খেলেছেন তিনিই।