আসানসোলের ধাদকার পাথর খাদান। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি এক জনের মৃত্যু হয়েছে। চার জনের সংক্রমণ শরীরে ধরা পড়েছে বলে সূত্রের দাবি। তাই সিলিকোসিস নিয়ে চিন্তা বাড়ছে পশ্চিম বর্ধমান জেলায়। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়, সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সালানপুর ব্লক থেকে তা শুরু করা হয়েছে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে একটি সিলিকোসিস মেডিক্যাল বোর্ডও তৈরি করা
হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে সিলিকোসিস আক্রান্তদের প্রতি সরকার উদাসীন বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সালানপুরের বাসুদেবপুর জেমারি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এক ব্যক্তির ফুসফুসে সিলিকোসিস সংক্রমন হয়। কিছু দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। নড়েচড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয় স্বাস্থ্য দফতরও। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুস জানান, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, ওই পঞ্চায়েত এলাকায় সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু করা হয়েছে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে একটি সিলিকোসিস মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সম্ভাব্য আক্রান্তদের ওই বোর্ডের সামনে হাজির করানো হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
সিএমওএইচ বলেন, ‘‘জেলায় এখনও পর্যন্ত এক জন আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে তাঁর পরিবারকে। সিলিকোসিস আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। আক্রান্তের হদিস মিললে, তাঁরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’ জানা গিয়েছে, ৮ জানুয়ারি প্রথম কিছু
সম্ভাব্য সিলিকোসিস আক্রান্তকে মেডিক্যাল বোর্ডে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কেউ এই
রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা স্পষ্ট ভাবে কিছু জানাতে চাননি। তবে একটি সূত্রের দাবি, জনা চারেকের ফুসফুসে এই সংক্রমণের হদিস মিলেছে।
সিএমওএইচ জানান, সাধারণত পাথর খাদান বা পাথর ভাঙার কলে কাজ করার ফলেই সিলিকোসিস হচ্ছে বলে অভিযোগ ও সন্দেহ করা হচ্ছে। ফলে, সে দিকটাও উপেক্ষা করা হচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সালানপুরের জেমারির যে ব্যক্তি সিলিকোসিসের সংক্রমণে মারা যান, তিনি এলাকার একটি পাথর ভাঙার কলে কাজ করতেন। পাথর ভাঙার সময়ে সাদা গুঁড়ো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকে ফুসফসে সংক্রমণ তৈরি করে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ধামানবেড়িয়া ও জেমারি মৌজায় এ রকম চারটি পাথর ভাঙার কল রয়েছে। ওই বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই কলগুলিতে যাঁরা কাজ করেন, শুধু তাঁরাই ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হন, তা নয়। সেখানকার দূষণ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষজনও আক্রান্ত হচ্ছেন।
ব্লকের সিলিকোসিস আক্রান্তদের সরকারি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হচ্ছে না বা জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে সরকার বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য বিজেপির সম্পাদক তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর দাবি, ‘‘অন্তত পাঁচ মাস আগে থেকে এই সমস্যাটি সালানপুর ব্লক এলাকায় প্রকট ভাবে দেখা দিয়েছে। আক্রান্তেরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এই বিষয়টি রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনেও তুলব।’’ বৃহস্পতিবার তিনি আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন।
অগ্নিমিত্রার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘এই সংক্রমণে আক্রান্ত এক জন ইতিমধ্যে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার
যথেষ্ট উদ্যোগী।’’